ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: হাবিবা ও মো. জাকারিয়া১৭ বছর আগে যাত্রা শুরুর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবারে যে আনন্দের কোনও উপলক্ষ আসেনি, তা নয়। তবে এই পরিবারের সদস্য হাবিবার বিয়েকে কেন্দ্র করে সেখানে যে ধুমধাম চলছে, তা বোধহয় কারও কল্পনাতেও ছিল না। শিশু পরিবার ছাড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেও সাজসাজ রব। বলা চলে, সারা দেশেই এই বিয়ের খবরের অপেক্ষায় রয়েছেন উৎসাহী মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) হাবিবার গায়ে হলুদ আর আগামীকাল শুক্রবার বিয়ে নিয়ে তাই খুশির আমেজ চারিদিকে।
১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় শিশু পরিবার ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল হাবিবার। কিন্তু মায়া কাটাতে পারেনি হাবিবা। তাই তো ১০ বছর এই শিশু পরিবারের কাটানো সময়ে স্মৃতি কাটিয়ে মামা-মামির কাছে ফিরে যাওয়া হয়নি তার। পরে হাবিবার পুনর্বাসনের চেষ্টা গিয়ে গড়ায় তার বিয়ে পর্যন্ত।কসবা উপজেলার সোনাগাঁ গ্রামের বাসিন্দা, সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া পুলিশ কনস্টেবল মো. জাকারিয়া আলমের সঙ্গে হাবিবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আজ।
হাবিবার বাবা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানও মেয়ের বিয়েতে কোনও ঘাটতি রাখছেন না। বিয়ের অনুষ্ঠানে পূর্ণতা দিতে তার সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শিশু পরিবারের সঙ্গে যুক্ত শহর সমাজসেবা প্রকল্পের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার।
জানা গেছে, বিয়েতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত থাকবেন।
আয়োজকরা জানান, হাবিবার বিয়েতে যতটা সম্ভব আয়োজনের চেষ্টা থাকছে। এরই মধ্যে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতে বিলি হয়ে গেছে বিয়ের কার্ড। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের আট পদের খাবার পরিবেশন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পোলাও, মুরগীর রোস্ট, টিকিয়া, গরুর মাংস, সবজি, ডাল, সালাদ ও মিষ্টি।
মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের ডাকবাংলোয় বর্ণিল আলোকসজ্জার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হবে বিয়ের মঞ্চ। সেখানে শিশু পরিবারের একশ মেয়ে রঙ-বেরঙের পোশাক পরে অভ্যর্থনা জানাবেন অতিথিদের। জেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এই বিয়েতে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তাদের উপস্থিতিতে রাতে নৈশভোজ শেষে বিদায় জানানো হবে নবদম্পতিকে।’
এদিকে, হাবিবার এক দশকের আবাসস্থল শিশু পরিবারও তার বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো মেতে উঠেছে বর্ণিল আনন্দে। শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বলেন, ‘শিশু পরিবারটি প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো ধুমধাম করে এখানকার কারো বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। আর এই বিয়েকে কেন্দ্র করে এখানকার সব শিশুই উৎসবে মেতে উঠেছে। তাদের সবার হাতে মেহেদি। গায়ে হলুদ আর বিয়েতে তারা কে, কী পরবে— সেই জল্পনা-কল্পনা করেই সময় পার করছে তারা।’ হাবিবার বিয়ের এমন অনুষ্ঠানের কথা ভাবতেই পারেননি বলে জানালেন রওশন আরা। ভবিষ্যতেও শিশু পরিবারের অনাথ শিশুগুলো এমন আরও উপলক্ষ পাবে, তেমনই আশা করছেন তিনি।
হাবিবার দায়িত্ব নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিশু পরিবার ছেড়ে দিতে হবে ভেবে হাবিবা অনিশ্চয়তায় ভুগছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হাবিবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবো। কিন্তু সেটা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ভালো পাত্রের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমি শুধু নই, আমরা সবাই মিলে হাবিবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি ভবিষ্যতেও হাবিবার মতো আরও অন্যদের পাশেও আমরা দাঁড়াতে পারবো।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।