ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার তজুমদ্দিনে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে অধিকাংশ মানুষ বসবাস করছে বিভিন্ন চরাঞ্চল ও বেড়ীবাঁধে। তাদের জীবিকা নির্বাহের আয়ের উৎস্য দিনমুজুর ও নদীতে মাছ ধরা। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে অভিবাবকের পাশাপাশি এসব পরিবারের শিশু-কিশোররা স্কুলে না গিয়ে জীবনবাজি রেখে মাছ ধরতে ছুটে যায় উত্তাল মেঘনায়। আবার কোন কোন শিশু স্কুলে গেলেও বাড়ী ফিরে দু’মুঠো অন্নের সন্ধানে হাতে নেয় নৌকার বৈঠা। এমনই চিত্র দেখা যায় তজুমদ্দিনের বিভিন্ন চরাঞ্চল ও মেঘনা পাড়ে বসবাসরত শিশু-কিশোরদের মাজে। যে কারণে এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার শিশু-কিশোর যায়না প্রাথমিক স্কুলে। অভিবাবকদের অসচেতনতা ও দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণেই মূলত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত এসব শিশু-কিশোররা।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরজহিরউদ্দিন, চরমোজাম্মেল, চরনাসরিন, চরলক্ষি, সিডারচর, তেলিয়ারচরসহ মেঘনা পাড়ে বসবাসরত অধিকাংশ শিশু কিশোর মাঠে ঘাটে কাজ করার পাশাপাশি বছরের বেশী সময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বাড়ী ঘর থেকে স্কুল অনেক দুরে জানিয়ে চরের আঃ রহিম (১০), মফিজ (১১) রিপন (১০), সরোয়ার (১২)সহ একাধিক শিশু কিশোরের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, বাপের লগে গাঙ্গে যাই মাছ ধরি। বাবা-মায় স্কুল যাইতে কয়না, হের লাইগা-মোরাও স্কুলে যাইনা।
চরের বাসিন্দা আবু কালাম মাঝি বলেন, পোলা মাইয়াসহ ৭ জনের অভাবে টানাটানির সংসার। মাছ ধরি যে টাহা পাই, তা দিয়া কোন-রহম সংসার চলে। পোলা পাইনরে পড়া লেহা করামু কেমনে।
কবির মাঝি বলেন, গরীব মাইনষ্যের পোলা মাইয়ারে পড়া লেহা করাইয়া কি অইবো, গাঙ্গে মাছ ধইরলে নগদ টাহা পাওন যাইবো।
সোনাপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন মিন্টু জানান, চরজহিরউদ্দিনের সোনাপুর অংশের প্রায় ৫ হাজার শিশুর জন্য মাত্র ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এচরের প্রায় ৩ হাজার শিশু স্কুলে পড়ার সুযোগ বঞ্চিত।
মলংচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরনবী শিকদার জানান, সিডারচর অংশে প্রায় ৩ হাজার শিশু কিশোর আছে। এখানে মাত্র ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় দেড় হাজার শিশু স্কুলে যেতে পারেনা।
চাঁদপুর ইউপি সচিব আব্দুল করিম জানান, এই ইউনিয়নের চরমোজাম্মেল এলাকায় প্রায় ২ হাজার শিশু কিশোরের জন্য মাত্র একটি প্রস্তাবিত প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। হাতে গোনা কয়েকজন পড়া লেখা করলেও বাকীরা স্কুলে যায়না।
স্থানীয়রা জানান, চরনাসরিন, চরলক্ষি, চরকাঞ্চনপুর ও তেলিয়ারচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার শিশু কিশোর পরিবারের সাথে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের পড়া লেখার জন্য সেখানে কোন স্কুল নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ এসব চরে জন বসতি গড়ে উঠলেও গড়ে ওঠেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় উপজেলার এসব চরাঞ্চল ও উপকূলীয় বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার শিশু কিশোর বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ইন্দ্রজিত দেবনাথ জানান, এখানে জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় বিদ্যালয় আছে। আগে থেকে কিছু স্কুল যদি বিভিন্ন চরাঞ্চলে নেয়া হতো তবে চরের শিশুরাও শতভাগ স্কুলগামী হতো। তবে চরমোজাম্মেলে সরকারি ভাবে একটি স্কুল চালুর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।