সকল মেনু

মাকে কুপিয়ে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যার চেষ্টা!

index
চট্টগ্রাম নগরে মাকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর এক তরুণ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের গোসাইলডাঙার বারিক বিল্ডিং এলাকায় সাসটেইন সরকার টাওয়ার নামের একটি ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। আহত তরুণকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নাক, কান ও গলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত মায়ের নাম কুমকুম চৌধুরী (৪২) ও অভিযুক্ত তরুণের নাম সুমিত চৌধুরী (২০)। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নে। সুমিতের বাবার নাম সুখময় চৌধুরী। তিনি আয়কর আইনজীবী ও ঢাকায় থাকেন। আর সুমিত তাঁর মা ও বড় ভাই সোমনাথ চৌধুরীর সঙ্গে সরকার টাওয়ারের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হন কুমকুম চৌধুরী। তাঁর ডায়াবেটিসও ছিল। ছোট ছেলে সুমিতই প্রধানত তাঁর সেবা-শুশ্রূষা করতেন। সুমিত এ বছর নগরের ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। এরপর তিনি পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেন। শনিবার সকালে পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশিত হয় এবং সেখানেও তাঁকে দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়। অকৃতকার্য হওয়ায় সুমিতকে বকাঝকা করেন বড় ভাই সোমনাথ। এরপর বেলা ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। বেলা একটার দিকে বাসায় ফিরে কলবেল টিপতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর কলবেল বাজানোর পর সুমিত নিজে এসে দরজা খুলে দিয়ে সেখানেই পড়ে যান। তখন সোমনাথ দেখতে পান সুমিতের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাঁর গলার পেছনের অংশে আঘাত রয়েছে। এরপর তিনি ছুটে মায়ের কক্ষে এসে দেখেন মা বিছানায় রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।
আজ বেলা তিনটার দিকে চমেক হাসপাতালে বড় ভাই সোমনাথ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইকে বকাঝকা করে বাসা থেকে কলেজে চলে যাই। এরপর মায়ের সঙ্গে কী হয়েছে, তা জানি না। বাসায় ফিরে দেখি সুমিতের সারা শরীরে রক্ত এবং মা তাঁর বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর এক প্রতিবেশীর সহায়তায় সুমিতকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’ একপর্যায়ে সোমনাথ বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ভাইরে, মায়ের এত সেবা করলি। মাকে কুপিয়ে মারতে তোর হাত একবারও কাঁপল না। এই কাজ কীভাবে করতে পারলি তুই।’
খবর পেয়ে পুলিশ বেলা সোয়া একটার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমকুম চৌধুরীর লাশ বাসা থেকে থানায় নিয়ে যায়। লাশ পরে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গলার সামনে ও পেছনের অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল বলে পুলিশ জানায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমিত মাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, সুমিতকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত বঁটিটি জব্দ করা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বড় ভাইয়ের বকাঝকা, মায়ের অসুস্থতা ও পারিবারিক অশান্তির ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর মূল কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সুমিত একই বঁটি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনায় দুটি মামলা করা হবে।
এদিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সুমিতের অস্ত্রোপচার হয়। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ পাহারায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে তাঁকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। নাক, কান ও গলা বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সুমিতের গলার পেছনের অংশে আঘাত রয়েছে। তবে বর্তমানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সুমিতদের ফ্ল্যাটে তালা মেরে দিয়েছে। ভবনের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড়। ভবনের ব্যবস্থাপক রতন শীল জানান, দুই বছর আগে সুখময় চৌধুরী বাসা ভাড়া নেন। এই সময়ের মধ্যে সুমিতকে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের ঝগড়া-বিবাদ কিংবা উচ্চ স্বরে আলাপ করতে দেখেননি।
স্ত্রী খুনের খবর পেয়ে সুখময় চৌধুরী শনিবার বিকেলে বিমানে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। তার আগে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, এইচএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় সুমিতকে তাঁর বড় ভাই বকাঝকা করেন। এর জের ধরে সুমিত মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার শান্ত ছেলেটি এই কাজ কীভাবে করল, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার সব শেষ।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top