ভাবির ওপর রাগটা অবশ্য আরেক কারণেও। প্রায় ১১ বছর কুয়েত এবং গ্রিসে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ভাবির কাছে উপার্জিত টাকা পাঠাতেন। কিন্তু দেশে ফেরার পর তিনি তার টাকা ফেরত পাননি।
প্রতারণা আর উপহাসের বদলা নিতেই হবিগঞ্জের মাধবপুরে ভাবিসহ তিনজনকে খুন করে শাহ আলম।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।
বুধবার সকালে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ভাবির দ্বারা দফায় দফায় প্রতারিত আর উপহাসের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন তাহের উদ্দিন এলাইছ ওরফে শাহ আলম। এ কারণেই ভাবিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এ ঘটনার অন্যরা ছুটে আসায় তাদেরও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছে আরও একজন।
পুলিশ জানায়, ভাবির দ্বারা তিনি বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়ে ২ বছর বয়সী সন্তানসহ আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতেন। সম্প্রতি জমিজমা বিক্রি করে তিনি বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফ্লাইট জটিলতায় যাওয়া হয়নি। শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ নিয়ে প্রায়ই ভাবি জাহানারা তাকে নানাভাবে উপহাস করতেন।
মঙ্গলবার রাতে উপহাসের এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলম হত্যার উদ্দেশ্যে ভাবি জাহানারার ওপর আক্রমণ করেন। মূলত ভাবিকে হত্যার জন্যই তিনি আক্রমণ করেছিলেন। এসময় তার চিৎকারে মেয়ে শারমীন, ছেলে সুজাত ও প্রতিবেশী শিমুল মিয়া এগিয়ে আসার কারণে তাদের উপরও হামলা চালান তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান জাহানারা। গুরুতর আহত শিমুল মিয়াকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে এবং আহত শারমীন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আশংকাজনক অবস্থায় সুজাতকে ঢাকা পাঠানো হয়।
পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে শাহ আলমকে আটক করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ জাহানারার মৃতদেহ উদ্ধার ও শাহ আলমকে আটক করে মাধবপুর থানায় নিয়ে আসে।
ময়নাতদন্তের জন্য বুধবার সকালে নিহত ৩ জনের মরদেহ হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
রাতে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
শাহ আলম মূলত ভাবিকেই হত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার সময় অন্যরা ছুটে আসায় তারাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত এবং স্বাক্ষ্য প্রমাণ যা পাওয়া গেছে তাতে শাহ আলম ছাড়া অন্য কেউ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
নিহত শিমুল মিয়ার ভাই মুখলিছুর রহমান জানান, আমার ভাইয়ের কোনো দোষ ছিল না। তাকে কেন হত্যা করা হলো। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।