শিল্পায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পরিবেশদূষণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থেই পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যেসব উদ্যোক্তা পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি করবেন, তাঁদের করছাড় ও অন্যান্য প্রণোদনা দিতে হবে।
‘বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন নীতি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে গবেষক ও শিল্পমালিকেরা এসব কথা বলেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) গতকাল রোববার মতিঝিলের চেম্বার ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে তিনি ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিশেষ কোনো কথা বলেননি। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বর্জ্য পরিশোধনাগারের দায়িত্ব নিলে সহজ সমাধান হয়। তবে সরকারের এ সহায়তা পাওয়ার জন্য বেসরকারি খাতকে আরও রাজস্বের জোগান দিতে হবে। বর্তমান রাজস্ব দিয়ে হবে না।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি এমসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য তহবিল জোগান দিতে আলাদা সংস্থা গঠনের পরামর্শ দেন, যারা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’–এর মাধ্যমে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে।
নাসিম মঞ্জুর বলেন, ব্যবসার বৈশ্বিক শৃঙ্খলে সামাজিক ও পরিবেশগত মান রক্ষা এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন মান ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো ঠিক হয়েছে। এসব না মানলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়বে, এমনকি তা বুঝে ওঠার আগেই।
পরিবেশগত মানকাঠামোর পরিবর্তনকে গোলপোস্টের সঙ্গে তুলনা করে এমসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, গোলপোস্ট নিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। কীভাবে এবং কোথায় গোল করতে হবে, তা-ও এখনো জানা বাকি।
এসিআইয়ের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা বর্জ্য বাইরে ফেলার হার শূন্যে নামিয়ে আনার নীতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কারখানাগুলোর জন্য সমন্বিত বর্জ্য পরিশোধনাগার থাকতে হবে। এগুলো সাশ্রয়ী হতে হবে এবং সরকারের এখানে ভর্তুকি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে দুটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক এম আবু ইউসুফ।
‘বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিল্পনীতির কৌশল’ শীর্ষক উপস্থাপনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, জ্বালানি ব্যবহারের কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ছিল বছরে ২৯ লাখ টন। ২০১৩ সালে তা ৫ কোটি ৯৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের সুবিধাগুলোও উল্লেখ করেন ফাহমিদা। তিনি জানান, কারখানা পরিবেশবান্ধব হলে কাঁচামালের পেছনে খরচ কমে, ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি মেলে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়।
অনুষ্ঠানে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার ওপর তৈরি একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে আবু ইউসুফ বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানা করতে সাধারণ কারখানার চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি খরচ হয়। পরিবেশবান্ধব শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কোনো কৌশলগত পরিকল্পনা নেই, সরঞ্জাম আমদানিতে কোনো শুল্কছাড় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলটি করেছে, তা যথেষ্ট নয়।
প্রবন্ধ দুটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ নিজেদের একটি ডেনিম কারখানা পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এ জন্য তাঁদের ১০ লাখ ডলারেরও (৮০ কোটি) বেশি খরচ হয়েছে। তবে এ জন্য এখনই পোশাকের ভালো দাম মিলছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি ক্রেতারা বিষয়টি বুঝতে পেরে ভবিষ্যতে ভালো দাম দেবে।’
বে ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, কারখানাকে পরিবেশবান্ধব করতে হচ্ছে। এটা বাড়তি দাম পাওয়ার জন্য নয়, বরং ক্রেতাদের শর্তের কারণে।
অনুষ্ঠানে শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মতিউল ইসলাম, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার বিশ্বাস, রহিমআফরোজ রিনিউবেল এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনাওয়ার মিসবাহ মইন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।