সকল মেনু

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

kodom_15640হটনিউজ২৪বিডি.কম : পয়লা আষাঢ়। রূপময় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন আজ। মেঘের পরশে আকাশ আবৃত নয়। গ্রীষ্মের খরতাপে কম্পিত ভূবন। বর্ষার একি বিদ্রোহীরূপ। প্রকৃতিতে রুদ্র পরিবর্তনের খড়গ। ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগণে তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ কবির বর্ণনার সে আষাঢ় কোথায়?

এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নবধারাজলে…। গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে এমনই হওয়ার কথা ছিল আজ। আষাঢ়ের প্রথম দিনে রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি না হয় হলো না। তাতে কি! বাংলা বর্ষপঞ্জি বলছে বর্ষা ঋতুর শুরুটা হবে আজ। আনুষ্ঠানিক ঋতু বর্ষার শুরু । বর্ষাকাল চলবে শ্রাবণের শেষ দিনটি পর্যন্ত। বাংলায় আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষা ঋতু।

ইতিহাস বলে এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় বর্ষায়। তাই চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়। প্রকৃতি আমাদের সাথে যে আচরণই করুক, আসুন আমরা আজ মনটাকে ধুয়ে ফেলি প্রতিকী বর্ষার জলে। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’-এর ভুবনভুলানো হাসি মনে ধারণ করি ।

কী গ্রাম, কী নগর সর্বত্রই বর্ষার আগমনী বার্তা দেয় কদম। যেন একই কথার জানান দিতে পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির জল গায়ে নিয়ে নৃত্য করে।

রিমঝিম এ বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে কাটে বাঙালির শৈশব। স্কুলে যেতে যেতে কিংবা ফেরার পথে দুরন্ত কিশোরী আনন্দে গায়ে মাখে বৃষ্টির ফোটা। তুমুল বৃষ্টিতে গাঁয়ের ছেলেরা নেমে পড়ে ফুটবল নিয়ে। বর্ষার এই রূপ কখনো কি ভোলা যায়?

বর্ষার সবই উপভোগ্য। আবার ভারি বর্ষণে, পাহাড়ী ঢলে গ্রামের পর গ্রাম যে ভাসিয়ে নেয় সেও বর্ষা! বন্যাকবলিত নিচু এলাকার মানুষ তাই আতঙ্কে পার করে বর্ষা। একই কারণে সারা বছরের অর্জন ফসল তলিয়ে যায়। শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়। সুখ স্মৃতিগুলো মনে রেখেই প্রতিবছর বর্ষাকে বরণ করে নেয় বাঙালী। বিশেষ করে শহরে নগরে হরেক আয়োজনে চলে বর্ষা বন্দনা।

প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আর গানের দল নানান ঢঙে করছে বর্ষাবরণ। সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও থাকছে বর্ষার আয়োজন। বিশেষ করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ষাবরণ ঢাকার নাগরিক জীবনেরই অংশ হয়ে উঠেছে গত কয়েক বছর ধরে। প্রতিবছরের মতো এবারও তারা বর্ষা আবাহনের লক্ষে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে এ উৎসব চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত।

এছাড়া দেশের নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বর্ষাকে নিয়ে নানা মিথ। তারই অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন আয়োজনে। প্রতিবছর তারা কক্সবাজরর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপি বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ওই সম্প্রদায়ের লোকেরা যোগ দেয় এ উৎসবে।

তবে বর্ষা যেমন আনন্দের, আবার বর্ষার হঠাৎ নির্মম নৃত্য তেমনি বিষাদে ভরিয়ে তোলে নদীমাতৃক বাঙলার জনপদ আর নগর জীবনকে। যা ইতিমধ্যেই অনুভূত হয়েছে দেশে। মানুষও তাই শঙ্কিত কি হয় শেষে। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনকে জাগিয়ে তোলে নতুনের আহ্বানে। মাটিতে নতুন পলির আস্তরণ আনে ফসলের বারতা। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষ ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার এ পলিমাটি থেকেই। কারণ সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top