অথনৈতিক প্রতিবেদক ঃ এবছর একটু আগে ভাগেই শুরু হয়ে গেছে গরম। প্রতিদিনই বাড়ছে গরমের তীব্রতা। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই দেশব্যাপী বাড়ছে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির চাহিদা। গরমের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে গ্রাহকরা ভিড় করছেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির শোরুমগুলোতে। তবে, গ্রাহকদের পছন্দে এবার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবছর দেশীয় ব্র্যান্ডের এসিতে গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, হঠাৎ অসহনীয় গরম পড়লে বাজারে এসির চাহিদা বেড়ে যায়। তখন চাহিদা মেটাতে বিক্রেতাদের হিমশিম খেতে হয়। যে কারণে এবছর ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ এসির মজুদ বাড়িয়েছে। এবছর ওয়ালটন এসি বিক্রিতে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
আবহাওয়ার উষ্ণায়নের ফলে বাড়ছে গরম। বাংলাদেশে ক্রমশ সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে শীতকাল। এবছর অনেকটা আগে ভাগেই বিদায় নিয়েছে শীত। আর গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র এসির চাহিদা। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। কর্তৃপক্ষের দাবি, সঠিক বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট), গোল্ডেন ফিনের ব্যবহার, দামে সাশ্রয়ী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি থাকায় গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে এখন ওয়ালটন।
এদিকে গত বছর বাজারে ওয়ালটন এসির ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে চলতি বছর প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি এসি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে উৎপাদন। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে চলতি মাসের এসি বিক্রিতে। গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি এসি বিক্রি করেছে ওয়ালটন।
একসময় দেশের এসির বাজার ছিল পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। ফলে, সঠিক বিটিইউ সম্পন্ন এসি পাওয়া ছিল দুষ্কর, অধিকাংশ এসি নি¤œমানের এবং দামও ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে দেশেই উচ্চমানের এসি তৈরি হওয়ায় তার সুফল ভোগ করছেন ক্রেতারা।
গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মানসম্পন্ন এসি তৈরি করছে ওয়ালটন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের বিশ্বমানের এসি। নিজস্ব কারখানায় তৈরির ফলে এসির দাম কমে এসেছে অনেকাংশে। এর ফলে সাশ্রয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানির মাধ্যমে এখন উল্টো বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।
ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও বিপণন বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার বলেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সঠিক বিটিইউ, আকর্ষণীয় কালার ও ডিজাইন,
বিশ্ব মানসম্পন্ন, সাশ্রয়ী মূল্য, ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি ও সর্বোপরি দেশব্যাপী বিস্তৃত সেলস ও সার্ভিস নেটওয়ার্ক থাকায় ওয়ালটন এসির চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। সিংহভাগ বাজার দখলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন।
তিনি আরো বলেন, বাড়তি চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে বাড়ানো হয়েছে উৎপাদন। আর চলতি বছরে প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ বেশি এসি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য পূরণে বাজারে ছাড়া হচ্ছে দেশের আবহাওয়া উপযোগি অসংখ্য মডেলের এসি। পাশাপাশি, পাইপলাইনে রয়েছে বেশকিছু আপকামিং মডেল। এরমধ্যে, ৪ ও ৫ টনের সিলিং এবং ক্যাসেট টাইপের এসি শ্রীঘ্রই বাজারে ছাড়বে ওয়ালটন। এছাড়াও, ইনভার্টার প্রযুক্তির দেড় টনের এসিও তৈরি করছে ওয়ালটন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি বছরের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে এসি বিক্রিতে শীর্ষস্থানে চলে যাবে ওয়ালটন।
সূত্রমতে, ওয়ালটন কারখানায় এক টন থেকে দুই টনের অনেক মডেল ও আকর্ষণীয় কালারের এসি তৈরি হচ্ছে। বাজারে ৩১,৫০০ টাকা থেকে ৫৭,৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ওয়ালটনের এসি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এসির কনডেনসারে অ্যান্টি করোসিভ হাইড্রফিলিক গোল্ডেন কালার ফিন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ওয়ালটন। এতে এসির স্থায়ীত্ব আরো বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন এসির আরএন্ডডি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মাযহারুল ইসলাম বলেন, গোল্ডেন ফিন প্রযুক্তি হলো এসির কনডেন্সারে হিট এক্সেঞ্জারের পৃষ্ঠতলে ক্ষয় ও মরিচারোধক হাইড্রফিলিক আবরণ। এতে করে ধুলো, ময়লা, বাতাসের আর্দ্রতা ও উষ্ণতার কারনে সৃষ্ট ক্ষয় রোধ করে। সেইসঙ্গে তা কনডেন্সারে হিট এক্সেঞ্জারের স্থায়িত্ব ও কার্যকারীতা বাড়ায়। এটি ব্যবহারের ফলে ক্রেতাকে ঘনঘন এসি পরিষ্কার বা মেরামতের ঝামেলা পোহাতে হয় না।
উল্লেখ্য, ওয়ালটনরে রয়েছে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আরএন্ডডি (উন্নয়ন ও গবেষণা) কেন্দ্র। গাজীপুরের ওই উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রে দেশি-বিদেশী প্রকৌশলীরা অন্যান্য পণ্যের পাশপাশি এয়ারকন্ডিশনার নিয়েও প্রতিনিয়ত গবেষণা করছেন। সেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এসি তৈরি জন্য পৃথক আরএন্ডডি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই আরএনডিতে দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীরা দিনরাত আবহাওয়া স্ট্যান্ডার্ড, সাশ্রয়ী মূল্যে বেশি কার্যকর এসি তৈরির জন্য নিরলস গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কঠোরভাবে কিউসি বা কোয়ালিটি চেক করা হচ্ছে। এরই ফলশ্রতিতে ওয়ালটনের এসি বিশ্ব বাজারেও জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।