লালমনিরহাট, ১৬ অক্টোবর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : বাংলাদেশের মানচিত্রে বৃহস্পতিবার থেকে ইউনিয়ন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থান পেয়েছে কুড়িগ্রামের দাসিয়ার ছড়া। এই প্রথম কোন নবনিযুক্ত ইউনিয়নের যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মতবিনিময় করেছেন। সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া এখন বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সেখানে এক জনসভায় বলেছেন, দেশে কোন ছিটের অস্থিত্ব নেই। সকলেই সমান। নাগরিকদের মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই। নতুন নাগরিকরা বরং একটু বেশী পাবেন। কারণ ৬৮ বছর ধরে তারা উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। দেশের অর্থনীতির মূলধারায় তাদের দ্রুত সম্পৃক্ত করতে যা যা করা দরকার তাঁর সরকার সবই করবে।
তিনি আরো বলেছেন, সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষের নাগরিক অধিকার ও সমান সুযোগ দিতে হলে, সর্বপ্রথম জমির উপর তাদের মালিকানা স্বত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর করা শুরু হয়েছে। পৈত্রিক সূত্রে ভোগদখলীয় জমির মালিকানা দিয়ে গতকাল বিকাল থেকেই ভূমি মালিকানা জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ চলবে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি ভৌগলিক সীমানায় দাসিয়ার ছড়ার অবস্থান। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা বিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে দাসিয়ার ছড়া সবচেয়ে বড়। এ গতকাল থেকে এটি নতুন একটি ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যাত্রা শুরু করেছে।
লালমনিরহাট জেলার অভ্যন্তরে থাকা ৫৯টি ছিটমহলে জমির মালিকানা স্বত্ব দিতে জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। দখল শর্তে নিজ জমির দাগ নম্বরসহ মালিকানার কাগজপত্র পাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্ধারা। বৃহস্পতিবার জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী বিলুপ্ত ছিটমহলে এ জমি জরিপের কাজ শুরু হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজার রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের দল ভূমি জরিপের কাজ করছে। এ সময় তারা স্থানীয় বাসিন্ধাদের নিয়ে দখলি জমিতে গিয়ে ফিতা দিয়ে মেপে জমির পরিমান নির্ধারণ ও দাগ নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র তৈরি করছেন।
ভূমি জরিপের কাজে নিয়োজিত অন্য সদস্যরা হলেন, কানুনগো খাদিমুল ইসলাম, ভূমি সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর আলম, সেটেলম্যান সার্ভেয়ার মনিন্দ্র নাথ বর্মণ, উপজেলা সহকারী পরিসংখ্যান সাদেকুল ইসলাম, সহকারী সেটেলম্যান তোফাজ্জল হোসেন, গোতামারী ইউনিয়নের তহশীলদার আনোয়ার হোসেন ও হাতীবান্ধা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মকছেদ আলী।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের মধ্যদিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়। পরে বেশ কিছু কাগজ দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে জমির খারিজ ম্যাপ রয়েছে। কুচবিহারের কাগজ ও বর্তমান দখলি মালিকানার মধ্যে সমন্ময় করে বাস্তবতায় জমির কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, জমি জরিপের কাজে বিরোধের কোন সুযোগ নেই। ছিটমহলের স্থানীয় বাসিন্ধারা সকলেই সহযোগিতা করছে। তবে কেউ আপত্তি করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে জরিপ পরিচালনা কমিটি তা নিস্পত্তি করে দিবেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুর রহমান জানান, প্রথম দিন ভূমি জরিপের কাজ সুষ্ঠ ভাবে শেষ হয়েছে। ৬৮ বছর ধরে ছিটের মানুষ কোন কাগজপত্র ছাড়াই দখলি স্বত্তে ভোগ দখল করে আসছে এখানকার জমি জিরাত। জমি নিয়ে কোন বিরোধ এখনও লক্ষ্য করা যায়নি।
তিনি জানান, এ এলাকার মানুষ সহনশীল, ধর্য্যশীল ও আপোষকামি। সহাবস্থানে শান্তিতে থাকতে তারা পছন্দ করে। তাই জরিপের সময় সকলে সহযোগী মনোভাব দেখিয়ে জরিপ কাজে সহায়তা করছে।-বাসস
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।