সকল মেনু

কৃষিজমি রক্ষার্থে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে : খন্দকার মোশাররফ

2953

ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধানে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের আয়তন কম কিন্তু জনসংখ্যা অত্যাধিক। এই কম আয়তনের মধ্যে অধিক জনসংখ্যার বাসস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে আবাসন গড়ে তুলতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতে দেশকে খাদ্য উৎপাদনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।’
তিনি আজ বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পল্লী এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গ্রামীণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে কৃষিজমি রক্ষা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন টেমেসিস ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জি. এম জয়নাল আবেদীন ভূইয়া। স্মারক বক্তৃতা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কিউ এম মাহমুদ।
১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ পালন করার সিদ্ধান্ত হয়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৫৯ সালে সর্বপ্রথম ঢাকার মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হয়। সে সময় ধারণা করা হয়, ১৯৭৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা হবে ১৪ লাখ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ১৯৭৪ সালেই ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৭ লাখ ৭০ হাজার এবং ১৯৮১ সালে এই জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ৪০ হাজারে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা এক কোটি ৫১ লাখে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্ট -২০১৪ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা হবে দুই কোটি ৭৩ লাখ। সে সময় জনসংখ্যার দিক থেকে ঢাকা হবে পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম মহানগরী।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় কর্মসংস্থান, উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য আধুনিক সুবিধা ঢাকায় বেশি থাকায় জনগণের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতাও বেশি। দেশের অন্যন্য শহরের চিত্রও প্রায় একই। তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠির একটু স্বস্তি প্রদানের জন্য সার্বজনিক স্থান এবং সেই স্থান ব্যবহারের অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এবারের বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সার্বজনিক স্থান সবার অধিকার ‘ সময়োপযোগী হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সার্বজনিক স্থানের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তি বা পারিবারিক পরিসরের বাইরেই থাকে সার্বজনিক স্থান। বাড়িঘর দালানকোঠা এসবের অধিকাংশই ব্যক্তি অথবা কর্পোরেট মালিকানায় থাকে। এগুলোকে বাদ দিয়ে যা কিছু থাকে তার অধিকাংশই সার্বজনিক স্থান। এই সার্বজনিক স্থানসমূহে ধর্ম, জাতি, বয়স এবং আর্থসামাজিক শ্রেণী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান ও সহজ সুযোগ থাকে।এসব এলাকায় যে কোন সময়ে যে কেউ যেতে পারে।এ ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ থাকে না। এ কারণে নগরায়নের ক্ষেত্রে পার্ক বা নগর বাগান, খেলার মাঠ, সড়ক, সিটি স্কয়ার, বাজার ও আধুনিক শপিংমল, ইতিহাস প্রসিদ্ধস্থান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য ব্যবস্থা রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ঢাকা একটি জনবহুল শহরে পরিণত হয়েছে। একটি শহরে স্বাভাবিক চলাচলের জন্য মোট আয়তনে ২৫ভাগ সড়ক থাকার কথা। কিন্তু ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ। এদিক বিবেচনায় ঢাকার নাগরিক জীবন অত্যস্ত অস্বস্তিকর। এই অস্বস্তিকর নাগরিক জীবনের জন্য পার্ক বা উন্মুক্ত স্থান খুবই গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান নেই। নেই উন্নতমানের কোন পার্ক। এ প্রেক্ষাপটে ঢাকা শহরে যেটুকু উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তার যথাযথ সংরক্ষণ এবং সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রেখে জনস্বস্তি নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেবে। আগামীতে নগরায়নের ক্ষেত্রে সার্বজনিক স্থানের বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ডিটেইল্ড এরিয়া প্লাান বা ড্যাপ। এই প্লান বা ড্যাপে খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থান, ঐতিহাসিক স্থান, জলাশয়, বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিপুল জনসংখার ঢাকা মহানগরীরর জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান অতীব জরুরি। সরকার ২০১৬ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত ২০বছর মেয়াদি ঢাকা স্ট্রাকচার প্লাান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সুপারিশ, বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শের আলোকে ঢাকা স্ট্রাকচার প্লানের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্লানট বাস্তববসম্মত, গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী হিসেবে প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদেরও আগামীতে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সার্বজনিক উন্মুক্ত স্থান রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার আহবান জানান।-বাসস

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top