ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত সপ্তাহে ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএস’র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এ হত্যাকান্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং এতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চয়ই রয়েছে।
তিনি বলেন,আমি নিশ্চিত বলতে পারি যে, আইএস অথবা এ ধরনের কোনো সংগঠন অথবা তাদের কার্যক্রম বাংলাদেশে এখনো গজিয়ে ওঠেনি। আমাদের গোয়েন্দারা সর্বদা সতর্ক রয়েছেন এবং কিছু তরুণের উগ্রপন্থা প্রদর্শন আইএস-এ যোগ দেয়ার আগ্রহ সত্ত্বেও বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস প্রশ্রয় দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে অংশগ্রহন এবং পাশাপাশি অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগদানসহ যুক্তরাষ্ট্র সফরের ফলাফল তুলে ধরতে আজ গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাভাই ও অন্যান্য ব্রান্ডের নামে দেশের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটে। তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদের নির্মূল করেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনার নেপথ্যে নিশ্চয়ই পূর্বপরিকল্পনা রয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা অলস বসে নেই।
তিনি বলেন, এটা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, তারা ২১ বছর দেশ শাসন করেছে এবং তারা বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় তারা কিছু প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবেই।
শেখ হাসিনা বলেন, দুই বিদেশী হত্যার ধরণ দেখে এটা নিশ্চিত যে, দুই হত্যাকাণ্ডের ধরণ একই রকম। তাদের উভয়কে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে। গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যায় কোনো গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। চারটি বুলেটই তার শরীর ভেদ করেছে। এর অর্থ হচ্ছে এ হত্যাকা- ছিলো পূর্বপরিকল্পিত এবং দক্ষ হাতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি ঘটনার আগে ও পরে এক বিএনপি নেতার বক্তব্য উল্লেখ করেন। আপনারা যদি দুটি বক্তব্য তুলনা করেন তাহলে স্পষ্ট চিত্র পাবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হত্যাকারীরা অবশ্যই গ্রেফতার হবেন এবং শাস্তিও পাবে যেমনটি হয়েছে ২০১২ সালে সৌদি কূটনীতিক হত্যা মামলার ক্ষেত্রে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশ সফর বাতিল করার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিশ্বের সর্বত্রই এ ধরনের বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে- এতে অনেক বিদেশী নাগরিকও প্রাণ হারাচ্ছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় গুলি করে হত্যার ঘটনার পরে কোনো দেশই ‘রেড এলার্ট’ ঘোষণা করেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিস্তারের ঘটনায় ভীত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, এর জনসংখ্যা ১৬০ মিলিয়ন। খাদ্য নিরাপত্তা থেকে আইন-শৃংখলা অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের চেয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ এবং তাদের মোট জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় মাত্র দ্বিগুণ। বাংলাদেশে যে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অতি নগণ্য।
শেখ হাসিনা বলেন,প্রতিটি হত্যাকা- অথবা এ ধরনের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের সকল সাফল্য ম্লান করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশী নাগরিকদের এবং বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড তুলে ধরে মিডিয়া আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে দিবালোকে তাঁর দলীয় দুই নেতার হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিদিন অনেক বাংলাদেশী নাগরিক খুন হচ্ছে, যা আমাদের মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয় না। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ স্টেশনের সামনে দু’জনকে হত্যার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া কী বলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কোন ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের মিডিয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী নাগরিকের হত্যা এবং এ ধরনের ঘটনায় মিডিয়া অত্যন্ত নীরব লক্ষ্য করা যায়। ‘এটা মিডিয়ার জন্য একটি মানসিক বন্ধ্যাত্ব’ – এ কথা উল্লেখ করে তিনি এক্ষেত্রে সুবিচারবোধ এবং দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার কারণ খুঁজে বের করার জন্য মিডিয়াকে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই ইস্যুতে আমাদের জনসচেতনতা প্রয়োজন এবং আমাদের মিডিয়া অবশ্যই এসব ঘটনা তুলে ধরবে। এ ধরনের ঘটনায় নেতিবাচক মিডিয়া প্রচারণায় জামায়াত-রাজাকারদের উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়। এ ধরনের ঘটনার পেছনে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তারা সরকারের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। জনগণ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।
সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিউইয়র্ক সফর প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যদানের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সম্পাদক। তারা পাকিস্তানে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল পাঠানো, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেলের মতো অন্যান্য সমসাময়িক ইস্যু সম্পর্কে জানতে চান।-বাসস
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।