সকল মেনু

ইটালিয়ান নাগরিকের খুনীদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)

নিউইয়র্ক, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ইটালিয়ান নাগরিকের হত্যাকা-কে মর্মবেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করে দুস্কৃতকারীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একজন বিদেশী নাগরিক খুন হওয়ার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। এটি একটি মর্মবেদনাদায়ক ঘটনা। আমাদের সরকার ঘৃণ্য এই খুনের ঘটনায় জড়িত দুস্কৃতকারীদের খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, এই হত্যাকান্ড নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিবৃতি প্রদানকারী একজন বিএনপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এই খুনের ঘটনার পর একজন বিএনপি নেতার সন্দেহজনক তৎপরতা লক্ষ্য করেছি। বিএনপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে খুনের পিছনের ক্লু বেরিয়ে আসবে। দেশে ফিরে যাওয়ার পর আমি ব্যবস্থা নিবো।
ঢাকায় কয়েকটি কূটনৈতিক মিশন ঢাকায় একজন বিদেশী নাগরিক খুন হওয়ার পর তাদের নাগরিকদের জন্য ‘রেড এলার্ট’ জারি করায় শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেড এলার্ট জারি করার কোন যৌক্তিকতা নেই। কয়েক বছর আগে নিউ ইয়র্কে দুজন বাংলাদেশী নাগরিক খুন হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোন রেড এলার্ট জারি করেনি। আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোও তাদের নাগরিকদের জন্য এই ধরণের এই ধরণের কোন এলার্ট জারি করেনি। আমি জানি না, ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনগুলো কেন তা করেছে।
ঢাকায় ইটালির নাগরিক খুন হওয়ার সঙ্গে আইএস লিঙ্ক থাকার খবরের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিকাগো থেকে একটি বার্তায় খুনের সঙ্গে আইএস লিঙ্ক থাকার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ তা দাবি করেনি। আমাদের গোয়েন্দাদের হাতে এই ধরণের কোন তথ্য নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ কেবল বাংলাদেশেই ঘটছে না, এটি একটি বৈশ্বিক ঘটনা।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ঘটছে। এমন কি নিউইয়র্ক সিটিতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে দু’জন আওয়ামী লীগ নেতা খুন হন।
শেখ হাসিনা বলেন, খুনের ঘটনার পিছনে নিশ্চয় কোন বড় শক্তি রয়েছে। তারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা হত্যা ও অভ্যুত্থানের রাজনীতিতে দেশকে নিমজ্জিত করেছে, তাদের সঙ্গেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের যোগাযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে যেতে অস্বীকার করে মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে হত্যার রাজনীতি শুরু করে এবং তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত মানুষ হত্যা করে। তারা ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর হত্যা ও অভ্যুত্থানের যড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। তিনি বলেন, সরকার দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি মুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু লোক রয়েছে যারা মানুষ হত্যা করে অস্বভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। খুনীরা তো অস্বভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে অবশ্যই জঙ্গিবাদে নয়। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান চাই না।
তিনি বলেন, নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে এবং তারা তাই করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, তাদের অশুভ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, সরকার দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, কোন ঘাতকই রেহাই পাবে না। তাদেরকে আটক করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমের সফর বাতিলের বিষয়ে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এখনও স্পষ্ট নয় কেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে আসছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে আমরা এই ধরণের পরিস্থিতি দেখেছি। পাকিস্তান ও ভারতের টিম বাংলাদেশে খেলেছে। এমনকি, বিশ্ব কাপ ক্রিকেট খেলাও এখানে আয়োজন করা হয়েছে। এটি নিতান্তই অস্ট্রৈলিয়ার ব্যাপার যে, তারা কেন হঠাৎ করে বাংলাদেশে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে অতীতে বেশ কয়েকটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে এবং কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি। অনাকাঙ্খিত ঘটনা অনেক দেশে ঘটেছে, কিন্তু বাংলাদেশে ঘটেনি। খেলোয়ারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ও সংশ্লিষ্টদের রয়েছে এবং আমাদের জনগণও এ ব্যাপারে খুবই সচেতন।
ঢাকার গুলশান এলাকায় সোমবার রাতে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলিতে ইটালিয়ান নাগরিক তাভেলা সাসের (৫০) নিহত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকায় বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমরা নিশ্চিত, ইটালিয়ান নাগরিককে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীরা পেশাদার খুনী ভাড়া করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। এই হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কমিটির প্রধান।
তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করার জন্য ডিসআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল হায়দারের নেতৃত্বে একটি সাপোর্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।-বাসস

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top