ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : লন্ডন ফ্লাইটে কোটি টাকার কার্গো মাল জালিয়াতির ঘটনায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টায় বিশেষ দূতের মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চাহিদা মোতাবেক নথিপত্র জমা দেয় সংস্থাটি।
নথিপত্র পাওয়ার পর দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
দুদকের কাছে পাঠানো নথিতে বিমান যেসব তথ্য পাঠিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, গত ৩ জুলাই হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টায় বিজি ০০১ নামের যে ফ্লাইটটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে সেটির ক্যাপ্টেন-পাইলট, কেবিন ক্রুসহ অন্য স্টাফদের নাম-ঠিকানার তালিকা ও লোডশিটের কপি।
একই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটে কার্গো মাল লোডে দায়িত্বরত বিমানের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কার্গো শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম-ঠিকানার তালিকা।
দুদকের চাহিদা অনুযায়ী বিমান আরও যেসব নথি পাঠিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, কার্গো মালের বিবরণ সম্বলিত তালিকা, এয়ার ওয়েজ বিল এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানাসহ এ সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ড-পত্রের কপি।
সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিমানের ক্যাপ্টেন ঢাকা থেকে দেওয়া হিসেবের চেয়েও যে অতিরিক্ত তিন হাজার ৩৩৪ কেজি কার্গো মাল পান সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ড-পত্র জমা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ।
একই সময়ের মধ্যে যাত্রী ও কার্গো অনুযায়ী স্বাভাবিক জ্বালানি তেলের চেয়ে যে অতিরিক্ত তেল পুড়েছে তার তুলনামূলক হিসাব বিবরণী সম্বলিত তথ্য ও রেকর্ড-পত্রের কপিও দিয়েছে বিমান।
এছাড়া দুদকের নোটিশের প্রেক্ষিতে ঢাকা থেকে লন্ডন রুটের কেজিপ্রতি কার্গো মাল ভাড়ার নির্ধারিত হার এবং জালিয়াতির ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান।
দুদক সূত্র জানায়, চাহিদা অনুযায়ী সকল নথিপত্র পাওয়া গেছে। শিগগিরই এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে।
দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, লন্ডন ফ্লাইটে হিসাবের অতিরিক্ত সাড়ে তিন টন কার্গো পণ্য পরিবহণে আদায়কৃত ভাড়া বিমানের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। এ অভিযোগ দুদকে এলে তা প্রাথমিকভাবে যাচাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
সম্প্রতি এ বিষয়ে নথি-পত্র তলব করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ পাঠান দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। নোটিশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদককে দেয় বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, কার্গো মাল জালিয়াতির ঘটনাটি গত ৩ জুলাই লন্ডনে ফাঁস হয়। ওইদিন হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টায় বিজি ০০১ নামের ফ্লাইটটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
সূত্র জানায়, হিসাবের অতিরিক্ত মাল নিয়ে ঢাকা থেকে বিমানের ফ্লাইট নিয়ে যখন লন্ডন অবতরণ করেন, তখন পাইলট সেখানেই কার্গোর ওজন মাপেন। তাতেই ধরা পড়ে হিসাবের বাইরে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পাঠানো অতিরিক্ত মাল পাচারের বিষয়টি।
হিসাবের বাইরে এ অতিরিক্ত মাল পাঠানো হয়েছে বিমানের কার্গো শাখা থেকে। এ পণ্য পরিবহনের ভাড়া (চার্জ) প্রায় এক কোটি টাকা। ওই ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক ও ক্যাপ্টেন নাদিম। যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। ফ্লাইট টেক অফ করার আগে ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক লোড শিটে দেখতে পান, যে সংখ্যক যাত্রী ও কার্গো আছে তা খুবই স্বাভাবিক। তাতে জ্বালানি তেল খুব বেশি পোড়ার মতো নয়। কিন্তু আকাশে ওঠার পর তিনি দেখতে পান, ওজনের বিপরীতে জাহাজের যে পরিমাণ জ্বালানি তেল পোড়ার কথা, তার চেয়েও বেশি পুড়ছে। তাই হিথ্রো বিমানবন্দরে যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর তিনি ওই ফ্লাইটের কার্গো মাল ওজন করান।
জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর পরই বিমানের অপারেশন ম্যানেজার আশরাফুল ঢাকায় বিমানের এমডি’র কাছে লেখা এক চিঠিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
তিনি লেখেন, লোড শিটের বাইরে জালিয়াতির মাধ্যমে কার্গো বহন করা শুধু বাণিজ্যিকভাবে বিমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এতে ওই ফ্লাইটের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পরে এ অভিযোগটি দুদকে তা প্রাথমিকভাবে যাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমকে নিয়োগ দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটির অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।