সকল মেনু

বিমানের জ্বালানি পরিবহনে বার্ষিক ক্ষতি ৮ কোটি টাকা

বিমানের জ্বালানি পরিবহনে বার্ষিক ক্ষতি ৮ কোটি টাকা
বিমানের জ্বালানি পরিবহনে বার্ষিক ক্ষতি ৮ কোটি টাকা

ঢাকা, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমানের (জেট-এ-১) জ্বালানির চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন।
বর্তমানে সক্ষমতা বাড়ছে। এতে করে সামনে জ্বালানির চাহিদা আরো বাড়বে। এই জ্বালানি পরিবহন করতে অপারেশনাল লসের ঘটনা ঘটছে। আর এতে করে প্রতি বছর ৮ কোটি টাকা ক্ষতি গুণতে হচ্ছে সরকারকে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, বিমানবন্দর থেকে জ্বালানি তেল পাওয়ার স্থান অনেক দূরে হওয়ার কারণেই এ ক্ষতি গুণতে হচ্ছে।
বর্তমানে বিমানের জ্বালানি (জেট-এ-১) আমদানির পর পদ্মা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে চট্টগ্রামে আনা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ট্যাংকার, শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ডিপোতে আনা হয়।
গোদলাইন ডিপো থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১২৫টি ট্যাংকলরির মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি আনা হয় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থিত কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোতে (কেএডি)।
বিপিসি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ ডিপো থেকে কেএডি’র আনুমানিক দূরত্ব ৪০ থেকে ৪২ কিলোমিটার, যা অতিক্রম করতে ট্যাংকলরির ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। বিপুলসংখ্যক ট্যাংকলরির মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি কেএডি’তে পরিবহনে শুধু যে সময়সাপেক্ষ তা নয়, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুলও বটে। অনেক সময় ছোট ছোট ট্যাংকলরির মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি পরিবহন করতে হয়। এতে করে অপারেশনাল লস স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়। এর কারণে প্রতিবছর সরকারকে প্রায় ৮ কোটি টাকা ক্ষতি গুণতে হচ্ছে।
বিপিসি থেকে জানা গেছে, সামনে হযরত শাহজালাল  (র.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে। বর্তমানে ১২০টি ট্যাংকলরির মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহন করতে হলেও অদূর ভবিষ্যতে এ সংখ্যা ২০০টিতে উন্নীত হবে। এতে করে বিমানের জ্বালানি পরিবহনে আরো বেশি ক্ষতি গুণতে হবে সরকারকে।
সরকারের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে বিপিসি সূত্রটি জানায়, ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপোতে বিমানের জ্বালানি আনা হবে।
এরপরে পিতলগঞ্জ থেকে কেএডি পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি করা হবে। এতে করে নিরাপদ জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি সরকারের ৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বিপিসি থেকে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ছিল ১১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
বিপিসি থেকে জানা গেছে, দেশে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নকল্পে দেশব্যাপী সময়োপযোগী অবকাঠমো গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ফর জেট-এ-ওয়ান পাইপলাইন পিতলগঞ্জ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর সার্ভে করা হচ্ছে, যাতে করে পরিবহন বাবদ ক্ষতি কমানো যায়।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ১২০ কোটি টাকা। এর আওতায় পিতলগঞ্জ থেকে কেএডি পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।
প্রকল্পটি বিমান বন্দরের বাইরে হবে কিনা জানতে ‍চাওয়া হলে বিপিসি’র মহাব্যবস্থাপক বলেন, প্রকল্পটি সিভিল এভিয়েশনের আওতাধীন এলাকায় হবে।
সরকারি আদেশ অনুযায়ী, কোনো প্রকল্পের কাজ ২৫ কোটি টাকার ওপরে হলে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা প্রয়োজন। পিতলগঞ্জ থেকে কেএডি পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি পরিবহনের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে।
বিপিসি’র মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা-উন্নয়ন) মুস্তফা কুদরত ইলাহী  বলেন, বিমানের জ্বালানি চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ডিপোতে আনা হয়। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১২০টি ট্যাংকলরির মাধ্যমে কেএডি ডিপোতে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। গোদলাইন থেকে কেএডি’র দূরত্ব অনেক। এতে করে প্রতি বছর প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি গুণতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গোদলাইন থেকে কেএডি পর্যন্ত বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে গোদলাইনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকে বিমানের জ্বালানি পিতলগঞ্জে নিয়ে আসা হবে। এরপর পিতলগঞ্জ থেকে ১৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে কেএডি ডিপোতে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা হবে।
বিমানের জ্বালানির চাহিদা আরো বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এখন ১২০টি ট্যাংক লরির জ্বালানির প্রয়োজন হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ২০০ ট্যাংক লরির জ্বালানি লাগতে পারে। তখন বিমানের জ্বালানি পরিবহনের জন্য ক্ষতি ও ঝুঁকির পরিমাণ আরো বাড়বে। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছি। ছোট ছোট ট্যাংকলরির মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের জন্য অপারেশনাল লস হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top