সকল মেনু

৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে লোকসান ৫৯৯ কোটি টাকা

৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে লোকসান ৫৯৯ কোটি টাকা
৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে লোকসান ৫৯৯ কোটি টাকা

ঢাকা, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : তিন-চার দশকের পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রেখে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারকে। ১৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ৫শ’ ৯৯ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি লোকসান দিচ্ছে ডিজেলভিত্তিক রংপুর ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৪৮ দশমিক ৬৩ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে লোকসান যাচ্ছে ৪৩ দশমিক ৮৪ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কেন্দ্রটি ৬০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একটি সূত্র।
ইউনিট প্রতি লোকসানের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডিজেলভিত্তিক সৈয়দপুর ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২৮ বছর বয়সের এই কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৪৫ দশমিক ৬০ টাকা (২০১৪-১৫ অর্থ বছরে)। এতে প্রতি ইউনিটে লোকসান দিতে হচ্ছে ৪১ দশমিক ০৭ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে লোকসান হয়েছে ৭৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
বরিশাল ৪৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ১৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে, সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা ১১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টে ওই অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
৩৯ বছর আগে স্থাপিত ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট খরচ পড়ছে ৩৭ টাকার মতো। প্রতি ইউনিটে লোকসান দিচ্ছে ৩২ দশমিক ৮১ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে লোকসান হয়েছে ২১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইফ টাইম শেষ হয়েছে ১৩ বছর আগেই। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে চলছে কেন্দ্রটি। প্রতি বছর সংস্কারের নামে বিপুল পরিমাণ টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে পুরো লোডে চালানো হলেও সর্বোচ্চ ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু ঠিকই ঘণ্টায় এক লাখ ৮০ হাজার লিটার তেল পুড়ছে।
সাধারণত ডিজেল দিয়ে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা। কিন্তু ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৭। এতে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে তিনটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ইউনিট ১৯৭৬ সালে, অপরটি ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি নির্মাণ করা হয়। লাইফটাইম ধরা হয়েছিলো ১৫ বছর, পরে ওভারহোলিং করে ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এখন বয়স চলছে ঊনচল্লিশ।
উপযুক্ত বিকল্প থাকলেও শুধু পরিকল্পনা আর সরকারি উদ্যোগের অভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে পিডিবি। এখানে মেরামতের নামে ‘উচ্চপদস্থদের বাণিজ্যও’ বেশ খানিকটা দায়ী বলে জানা গেছে।
এস বিষয়ে ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মীর রুহুল কুদ্দুছ জানান, জাপান কনসালটিং ইনস্টিটিউট (জেসিআই) একটি সম্ভাব্যতা জরিপ (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি)  করেছিলো ২০০২ সালে। তারা পুরাতন অবকাঠামো ব্যবহার করে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রিপ্লেস করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো।
এতে স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, সার্ভিস ট্যাঙ্ক, সাব-স্টেশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন লাইন, পানি সরবরাহ সিস্টেম, কন্ট্রোল রুম পুরোপুরি অক্ষত থাকতো। গ্যাস টারবাইনের ভিত্তির ওপর নতুন মেশিন বসানোর কথা বলেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। ছয় মাসের মধ্যেই এগুলো রিপ্লেস করা যেতো বলে রিপোর্টে বলা হয়।
রিপ্লেস করা হলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়তো, আর কমে যেতো উৎপাদন খরচ। প্রতি বছর বিশাল অংকের মেরামত-ব্যয় থেকে রক্ষা পেতো পিডিবি।  জাপানি প্রতিষ্ঠানটি রিপ্লেস করার জন্য পৃথক দু’টি প্রস্তাবও দিয়েছিলো। তারা নিজেরাই অর্থায়নের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবনা দিয়েছিলো। কিন্তু তৎকালীন সরকার কোনো রকম ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ায় ফেরত গেছে জেসিআই।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সরকার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহণসহ নানা রকম সমস্যার শিকার হচ্ছে। কিন্তু ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৪ দশমিক ৮৩ এক জায়গা পড়ে রয়েছে। এই জমির সঠিক ব্যবহার করতে পারে সরকার।
নতুন কোনো স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে গেলে সেখানে অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু এখানে কোনো রকম অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি নতুন জনবল কাঠামো ছাড়াও এখান থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। অন্যগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। কিন্তু এগুলোর প্রতি নজর না দিয়ে নতুন নতুন কৃষি জমি অধিগ্রহণে বিদ্যুৎ বিভাগের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, এসব কারণে বেড়ে যাচ্ছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ। যার ‍অজুহাত দেখিয়ে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এসব অবকাঠামো ব্যবহার করে ‍সাশ্রয়ী রেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
এসব বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এগুলোতে অনেক লোকসান হচ্ছে এ কথা সত্য। তবে সবগুলো একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া যাচ্ছে না টেকনিক্যাল কারণে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তালিকা করেছি। ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রিপ্লেস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থলে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top