ঢাকা, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশকে মনুষ্যসৃষ্ট মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
সিপিবি-বাসদের উদ্যোগে ‘ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প: বাংলাদেশে প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
শুক্রবার সকালে প্রগতি সম্মেলন কেন্দ্রে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আলোচনা করেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ এস আই খান, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, প্রকৌশলী মুহাম্মদ হিলাল উদ্দিন, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, অধ্যাপক এম এম আকাশ, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ও বজলুর রশীদ ফিরোজ। সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন রাজেকুজ্জামান রতন।
সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, ভারত ধারাবাহিকভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে। সমগ্র প্রকল্পের আওতায় ৩৮টি নদ-নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ঘটানো হবে। এতে ৩০টি সংযোগ রক্ষাকারী খাল ও ৩৪টি বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা আছে। ভারতের ভিতর দিয়ে আসা ৫৪টি নদীর মধ্যে ভারত ইতিমধ্যে বাঁধ দিয়েছে। ফারাক্কায় পদ্মা ও গজলডোবায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইতিমধ্যে মরুকরণ, ফসলহানী, প্রাকৃতিক পরিবেশের ধ্বংসের ঝুকিতে পড়েছে। এরপর ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নেয়া হলে তা বাংলাদেশকে মনুষ্যসৃষ্ট মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
খালেকুজ্জামান বলেন, ভারত আট লঅখ রুপীর এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উমা ভারতী বলেছেন, এ প্রকল্প ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ভার সম্ভাবতা জরিপের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনও নির্লিপ্ত। এখনই এ ব্যাপারে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত।
সৈয়দ জাফর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া এ প্রকৃতি বিনাসী প্রকল্প বন্ধ করা যাবে না। দুই দেশের শাসকের দিকে তাকিয়ে থাকলে সমস্যা সমাধান হবে না।
এস আই খান বলেন, ভারত থেকে আসা নদীগুলোতে ক্রমাগত পানির পরিমান কমছে(পদ্মায় ১৯৭১ সালে র্ছিল ৪৪০ বিসিএম এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫০ বিসিএম, এমন অবস্থা ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনায়)। এর একমাত্র কারণ ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহার। ইতিমধ্যে লোনা পানির প্রবাহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। আন্তঃনদী সংযোগের নামে ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নিলে লোনা পানির প্রবাহ সিরাজগঞ্জ ও সিলেট পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এতে ধ্বংস হবে কৃষি, মৎস্য সম্পদ, ১২ কোটি মানুষের জীবন এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, একদিকে কাঁটাতারের বেড়া অন্যদিকে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। প্রকৃতি ধ্বংসের এই উন্নয়ন দর্শন-কে প্রতিহত করার জন্য সকলের এগিয়ে আসা দরকার।
প্রকৌশলী মুহাম্মদ হিলাল উদ্দিন বলেন, প্রকৃতির ওপর এত বড় সহিংস আক্রমন এর আগে আর হয় নি। বাঁধ, লোহা ও সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই প্রকল্প। এতে জনগণের দুর্ভোগ দুর্দশাই শুধু বাড়বে।
ডা. আব্দুল মতিন বলেন, ভারতের নয় রাজ্যের জনগণ এই সর্বনাশা প্রকল্পের বিরুদ্ধে। তিনি দুই দেশের পানি-নদী বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ জনগণকে এ সংযোগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করেই উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে। উন্নয়ন হবে দুই দেশের জনগণের স্বার্থে। কিন্তু এই প্রকল্প দুই দেশের জনগণকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
প্রকৌশলী ম. এনামুল হক বলেন, কোনো যুক্তিতেই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রকল্প শুধু বাংলাদেশের ধ্বংস করবে না শেষ বিচারে ভারতেরও বিপুল ক্ষতি সাধন করবে। তিনি ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনে অনুসাক্ষর করতে বাধ্য করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।