সকল মেনু

স্টেশন মাস্টার ঘুমে, যাত্রীরা ঠান্ডায় বাইরে

s6_443858738নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৩ জানুয়ারি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্র ও ছাত্রলীগ-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের জেরে সংশ্লিষ্ট রেল রুটে দেখা দিয়েছে শিডিউল বিপর্যয়। আর তাতে শীতের রাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অবশ্য ঘুমে ব্যাঘাত হচ্ছে না স্টেশন মাস্টারসহ রেলকর্মচারীদের।

ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশনে এ চিত্রই পাওয়া গেল মঙ্গলবার দিবাগত মাঝরাতে। দৃশ্য দেখে কে বলবে, মাত্র গত মাসেই সেবা সপ্তাহ পালন করেছে রেলওয়ে।

রাত পৌনে ২টা থেকে পৌনে ৩টা: স্টেশনে ঢুকতে হাতের ডানে-বামের প্রতিটি কাউন্টার বন্ধ পাওয়া গেল। উপরে দুটি মনিটরে ট্রেনের সময়সূচি দেখা যাচ্ছে।

ভেতরে গিয়ে পাওয়া যায় শত যাত্রী শীতে জবুথবু। সপরিবারে ঠান্ডায় কাঁপছেন তারা। ভিআইপি বিশ্রামাগার বন্ধ। প্রথম শ্রেণি ও শোভন শ্রেণির বিশ্রামাগার লোকারণ্য। তবে তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত বলে যাত্রীদের অভিযোগ। জানতে চাইলে বহিরাগতরাও স্বীকার করলেন সেটি।

আলাপে অভিযোগের বণ্যা যাত্রীদের মুখে।

জানা যায়, প্রত্যেকেই দীর্ঘসময় ধরে বসে আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়। কখন আসবে, আদৌ আসবে কিনা বাহন, সে প্রশ্নটিও করার জন্য কাউকে তারা খুঁজে পাচ্ছেন না, উত্তরের আশাতো পরে। যাত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘসময় খোঁজাখুঁজি করেও স্টেশন মাস্টারতো দূরের কথা, কোন কর্মচারির খোঁজই পাওয়া গেল না।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য বিরক্তস্বরে বলেন, স্টেশন মাস্টার ঘুমাইতেছে। খুঁইজ্জা লাভ নাই। রাইত একটার পর কাউরে আমি দেখি নাই। যাত্রীরা আমাদের জিগায়। আমরা ট্রেনের খবর কই পামু?

মা-বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুরের জয়পুরহাট যেতে স্টেশনে এসেছেন চেরাগআলীর মো. হৃদয়।

জানা যায়, দিনাজপুরগামী ট্রেন ‘দ্রুতযানে’র জন্য অপেক্ষা করছেন সন্ধ্যা ৭টা থেকে। ৭টা ৪০ মিনিটের ট্রেন, ছাড়তে সাড়ে ৮টা বাজার কথা। অথচ রাতের ২টায়ও কোনো খবর পাচ্ছেন না।

স্ত্রী শিউলী আক্তার অভিযোগের সুরে বলেন, কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। বয়স হইছে আব্বা-আম্মার। শীতের মধ্যে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। এতোদেরি হবে কেউ বলে নাই। টিকিট ফেরত দেওয়ার লোকও খুঁজে পাই না। এতো রাতে বাসায় যাব কীভাবে মালপত্র নিয়ে? ছিনতাইর ভয়ও আছে।

এদিনই সৌদিআরব প্রবাসী মেসবাহ উদ্দিন ঢাকা এসেছেন। একটু আরামের জন্য ট্রেনেই গ্রামের বাড়ি সিলেট যেতে টিকিট নিয়েছেন। সিলেটগামী ট্রেন ‘উপবন’র অপেক্ষায় আছেন সাড়ে ৯টা থেকে। রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্টেশনেই মালপত্র পাহারায় দাঁড়িয়ে, ক্লান্ত।

অভিযোগ করলেন, ট্রেনের টিকিট ফেরত দিতে গেলাম। তারা রাজি হলো না। এক পর্যায়ে ঝগড়া করলো আমার সঙ্গে। এতক্ষণে কয়েকবার ওয়েটিং রুমে গেলাম। কিন্তু জায়গা নাই। সব বাইরের মানুষ শুয়ে-বসে ঘুমাচ্ছে। রেলে কেউ নাই এসব দেখার। বয়স্ক, বাচ্চা নিয়া সবাই সমস্যায় আছে। খাওয়ার কষ্ট, টয়লেট নোংরা।

স্টেশন মাস্টারের বন্ধ কক্ষের দিকে হাত উচিয়ে দেখালেন। সব কাউন্টার বন্ধ, কর্মচারীদের কক্ষ বন্ধ- তাও দেখালেন এগিয়ে।

একই ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা অপর যুবক সুজন হায়দার তর্জনি উচিয়ে একটি ব্যানার দেখালেন সবাইকে। ব্যানারের লেখাটি পড়ে শোনালেন, ‘রেলওয়ে সেবা সপ্তাহ-২০১৫ (০৪-১০ ডিসেম্বর), আমাদের প্রচেষ্টা-সেবা, গতি, নিরাপত্তা, সময়ানুবর্তিতা’।

শুনে কয়েকজন হাসেন। সুজন বলেন, এ হল তাদের সেবার নমুনা। কয়েকদিন আগে দুই বিদেশি নারী রাতে এভাবেই বাইরে বসে ছিলেন। ওয়েটিং রুমে জায়গা নাই, ভিআইপি রুম বন্ধ। তাদের মোটামুটি শিক্ষা হয়েছে রেলের সেবার নমুনা দেখে। বিদেশিদের জন্য ভিআইপি রুম খুলে দিলে সমস্যা কী?

হটনিউজ২৪বিডি..কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top