দিনাজপুর থেকে মো. নুরুন্নবী বাবু: দিনাজপুরে ইসকন মন্দিরে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বর্ষনের ঘটনায় ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছে ২ হামলাকারী। হামলার প্রতিবাদে ইসকনের ভক্তরা শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। মন্দিরে হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দবাজার থেকে ২শ গজ অদূরে দেহচি ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালীন মোটরসাইকেল আরোহী ৩ দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। প্রথমে ককটেল নিক্ষেপ করা হলে তা অবিস্ফোরিত হওয়ায় পিস্তলের গুলি বর্ষন করা হয়। গুলি বর্ষণের সময় মন্দির প্রাঙ্গণে অবস্থানকারী ভক্তদের মাঝে ছুটোছুটি ও আর্তচিৎকারে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এসময় এলাকাবাসী হামলাকারী শরিফুল ইসলাম (২৮)কে ৮টি তাজা ককটেলসহ আটক করতে সক্ষম হয়। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ২টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। আটক শরিফুল গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের পুত্র। তাকে রাতেই দিনাজপুরের ডিবি কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
গুলিবর্ষনে আহত ২ জন হলেন বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া গ্রামের রেবতি মোহন রায়ের পুত্র রঞ্জিত কুমার রায় (২৮) ও কাহারোল উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের সরেন রায়ের পুত্র মিঠুন রায় (২২)। রাত সাড়ে ৯টায় উভয়কে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোমরে গুলিবিদ্ধ মিঠুন রায়কে শুক্রবার ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হামলাকারীদের ১ জন লালমনিরহাট সদর উপজেলার সুজন (২৫) পালিয়ে পাশ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া ফরেষ্ট এলাকায় আত্মগোপনের জন্য শুক্রবার সকাল ১০টায় ওয়াহেদ আলীর বাড়ীতে প্রবেশ করে। এসময় অস্ত্রসহ আশ্রয় চাইলে পরিবারের লোকজন বাধা দিলে সুজন ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি বর্ষন করলে ওয়াহেদ আলীর পুত্র রফিক (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। গুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসী ঘেরাও করে হামলাকারী সুজনকে আটক করে বীরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে অস্ত্রসহ সোপর্দ করেন। গুরুতর আহত রফিককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দেহচি ইসকন মন্দিরের সভাপতি মনিন্দ্র নাথ রায় জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় ওই মন্দিরে প্রথমে ধর্মসভা এবং পরে কীর্তন চলছিল। কীর্তন চলাকালীন সময়ে একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন আরোহী ঘটনাস্থলে এসে ৩টি ককটেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনার পর ওই যুবকদের ককটেল বিস্ফোরণের প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্য থেকে ১ জন পিস্তল বের করে পর পর ৩ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। গুলিতে মিঠুন ও রঞ্জিত গুলিবিদ্ধ হন।
ডাবোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ইসকন মন্দিরের এই হামলা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি জানান, ১৫০ সিসির ডিসকোভার মোটরসাইকেলে করে ৩ জন দুর্বৃত্ত এই সশস্ত্র হামলা চালায়। ঘটনার পর পর স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমিন, বীরগঞ্জ সার্কেলের এএসপি সুজন সরকার, কাহারোলের ইউএনও রবিউল ফয়সালসহ প্রশাসন ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছুটে যান। মন্দির কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে কাহারোল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
দেহচি মন্দির কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র নাথ রায় জানান, ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী ও সহ-সভাপতি পুস্প শিলা শ্যাম দাস ঘটনার সময় ধর্ম আলোচনা ও কীর্তনে উপস্থিত ছিলেন। পরে চারু চন্দ্র দাস বলেন, ৩০ নভেম্বর জেলা ইসকনের সভাপতি ডাঃ বীরেন্দ্র নাথ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষন ও ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঐতিহাসিক কান্তজিউ রাস মেলার যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা ও গুলি বর্ষনের ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতার না করার কারণেই একের পর এক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর ও মন্দিরে হামলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য ও বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি বিনষ্টের হীন উদ্দেশ্যেই একটি চক্র এই জঘন্য হামলা ঘটাচ্ছে একের পর এক। সহ-সভাপতি পুস্প শিলা শ্যাম দাস বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন চরম নিরাপত্তা হীনতার শিকার হচ্ছেন। তাই তাদের নিরাপত্তা বিধানে সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে অবিলম্বে।
ইসকন মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অসংখ্য ভক্তরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা চারু চন্দ্র দাস ও পুস্প শিলা শ্যাম দাস, স্থানীয় নেতা বিক্রমি রমাদাস, মনিন্দ্র চন্দ্র রায়, শ্যামল চন্দ্র রায়সহ প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। সেই সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধানে এবং সুষ্ঠু পরিবেশে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, পুজা-অর্চনা করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।