দিলীপ গৌর: সনাতন ধর্মালম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মুল ধর্ম গ্রন্থ হলো শ্রীমদদ্ভগবদ গীতা। আর গীতা হলো ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মুখনৃর্সিত বাণী। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনের রথের সারথি হয়ে ধর্মযুদ্ধের পক্ষে অর্জুন কে যে উপদেশ গুলোর দিয়েছেন সেটার লিপিব্ধ হলো গীতা। স্বাভাবিক ভাবে একজন আদর্শবান শিক্ষক বলতে আমরা বুঝি যে শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো পাঠ দিতেন পারেন,যে শিক্ষক শুধু তার শিক্ষার্থীকে পুথিগত বিদ্যাদান ই করেন না তিনি তার শিক্ষার্থীকে একজন আদর্শবান ব্যক্তি হতে জীবনের পথ চলাতে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনিই একজন আদর্শবান শিক্ষক। এই শিক্ষক তার ছাত্রদের কাছে পরম পুজনীয় হয়ে থাকেন। একজন ছাত্র তার শিক্ষকরে পরামর্শে জীবনের চলার ভালো পথ পেলে সেই শিক্ষক তার নিকট দেবতার মতাে হয়ে থাকে। একজন ভাল শিক্ষক এর পরামর্শেই ছাত্র-ছাত্রীরা বিপথ জ্ঞামী হয় না,মাদকা শক্ত হয়না, অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে এবং সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ভাবে পথ চলতে পারে। গীতার ১৬ টি অধ্যায়ে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এমন উপদেশ দিয়েছেন যা মানুষকে সব ধরনের পাপ কাজ থেকে দুরে থাকতে সহয়াতা করবে এবং ন্যায় অন্যায় বুঝবার জ্ঞান যোগাবে। এবং কোন কাজ করা যাবে আর কোন কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করবে। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন
‘যদা যধা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুথানধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম:
পরিত্রাণয় সাধূনং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে:
এই শ্লোকের অর্থ হলো যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের অভ্যুথান হয়,তখনই আমি ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে সাধুদের রক্ষা এবং দুস্কৃতিকারিদের ধ্বংশ করে ধর্মের সংস্থাপন করি।
দ্বাপর যুগে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে এক ঝড় বৃষ্টির রাতে কংসের কারাগারে জন্ম হয় শ্রী কৃষ্ণের। বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান যুগবতার ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। কংসের হাত থেকে নবজাতক কৃষ্ণ কে রক্ষা করার জন্য সেই ঝড় বৃষ্টির রাতে বসুদেব তাকে যমুনা পার হয়ে গোকুলে নন্দাআলয়ে রেখে আসেন। এই থেকেই বোঝা যায় সেই সময়ে সাধুরা দুষ্ট কংসের অত্যাচারে কেমন ভীত সংকিত ছিলো। তাই সেই সময়ে শ্রী কৃষ্ণের আর্বিভাবটা ছিলো একটি সময়পযোগী মাহেন্দ্রক্ষন। তিনি কংসকে বধ করে বাবা-মা কে মুক্ত করেছেন কারাগার থেকে। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বাল্যকাল থেকে শুরুকরে তিরোধন পর্যন্ত তার প্রত্যেকটা কাজ এবং বানী আমাদের সকলের জীবনে একটি দিকনির্দেশনা হয়ে গেছে। শ্রী কৃষ্ণ যেমন একজন বন্ধুবৎসল,ভ্রাতৃপ্রীতম, প্রেমিক,রাজ্যশাসক এবং দক্ষ রাজনিতীবদি। তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন সৎ ভাবে চলার পথ,শুনিয়েছেন গীতার অমৃতবাণী। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রারম্ভে অর্জুনের বিপক্ষে নিজ আতœীয় পরিজনকে দেখে কাতর অর্জুন কে সাহস যোগাতে শ্রী কৃষ্ণ শুনিয়েছিলেন সাত শত শ্লোকের অমরবানী। আতœার অবিনাশিতা,সমদর্শন,ধর্মযুদ্ধ,মানুষের আচরনীয় বিষয়সমুহ বহুবিধ বিষয়ে সখা অর্জুনকে যোগস্থ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ উপদেশ দিয়েছেন। বড় উপদেশ হলো ক্লৈবং মাস্ম গমঃ পার্থ।মনের সকল ক্লিবতা দুর করো পার্থ। অর্জুন কে যে বানী গুলো শুনিয়েছেন এবং সেই শিক্ষাথেকে অর্জুন শিক্ষিত হয়েই যুদ্ধে জয়ের পাশাপাশি রাজ্যচালনার জ্ঞান এবং শক্তি দুই পেয়েছেন। তাই আমি মনে করি ভগবান শ্রী কৃষ্ণ একজন আদর্শবান শিক্ষক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।