নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম: দেশের বাজারে শীর্ষস্থান অর্জনের পর এবার রপ্তানিতে আরো জোর দিচ্ছে ওয়ালটন। এবার তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশী ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনকে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ।
ওয়ালটনের এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নতুন কারখানা ও উৎপাদন ইউনিট স্থাপন, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, পণ্যের উচ্চমান নিশ্চিতকরইণ, পণ্য মান নির্ণয়ে আর্ন্তজাতিক মানের ল্যাব স্থাপন, বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণ, বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্র্যান্ড নিবন্ধন এবং তাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সার্টিফিকেশন ইত্যাদি।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধির উপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়ালটন। উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে পণ্য মান উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমে যাচ্ছে। এ লক্ষে ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
ফ্রিজ উৎপাদনের জন্য নতুন একটি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এরইমধ্যে নতুন ওই কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রধানত উন্নত বিশ্বের বাজারকে টার্গেট করে নন ফ্রস্ট ফ্রিজের ওই উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে ফ্রিজ উৎপাদন দ্বিগুন হবে।
মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক ফ্রিজ রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। এ লক্ষে নিজস্ব বিক্রয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ফ্রস্ট ফ্রিজের উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে।
ফ্রিজের মতো টিভি সেট বিক্রিতেও ওয়ালটন বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড। এ দুটি পণ্যের সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার এখন ওয়ালটনের। এ অবস্থায় নতুন পিকচার টিউবে আধুনিক সিআরটি টিভি তৈরি হচ্ছে। যা ভারত নেপালসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে এলইডি টিভি বাজারে এনেছে ওয়ালটন। পর্যায়ক্রমে এলইডি টিভির দামও আরো কমে আসবে।
ফ্রিজ টিভির মতো এয়ারকন্ডিশনার বিক্রিতেও শীর্ষে ওয়ালটন। সঠিক বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) থাকায় এসি সম্পর্কে যারা ভালো জানেন তাদের পছন্দের শীর্ষে ওয়ালটন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এসির মান আরো উন্নত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া চাহিদা বাড়ায় নতুন করে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মোটরসাইকেল উৎপাদনেও।
এর বাইরে কম্প্রেসার কারখানা স্থাপন করছে ওয়ালটন। আগামি বছর থেকে এশিয়ার সর্বোচ্চমানের কম্প্রেসার তৈরি হবে বাংলাদেশে। বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা জার্মান প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি এবং মেশিনারিজের সমন্বয়ে বছরে ৪০ লাখ কম্প্রেসার তৈরি হবে। যার ২৫ লাখ থাকবে রপ্তানির জন্য। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রপ্তানিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ থেকে যন্ত্রাংশ নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কয়েকটি দেশ।
বিশ্বায়নের যুগে রপ্তানি বানিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ন ইস্যু। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশ তথা সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সুনামের জন্য রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়ালটন। বর্তমানে বেশ কিছু দেশে প্রবেশ করেছে ওয়ালটন ব্র্যান্ড। এরমধ্যে কয়েকটি দেশে বাড়ানো হচ্ছে রপ্তানির পরিমান। রপ্তানির তালিকায় নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে কয়েকটি দেশ। বৈশ্বিক বাজার সম্প্র্রসারনে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগ তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে। বাজার সম্প্রসারণ, পর্যবেক্ষন ও সম্ভাবনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু ক্ষেত্রে আইএসও সনদ রয়েছে ওয়ালটনের। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে পণ্য প্রবেশে সেসব দেশে কোম্পানি, লোগো ও ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন পড়ে, প্রয়োজন হয় সার্টিফিকেশনের। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে এসব আনুষ্ঠানিকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র সহকারি পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন- আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, বাহারাইন ও ইয়েমেনসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বাজারকে টার্গেট করে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারনের কার্যক্রম চলছে। বিশেষ করে, আমেরিকা এবং ইউরোপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, পণ্যের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ রপ্তানির অর্ডার আসছে; এটা শুধু ওয়ালটন নয়, দেশের জন্যও সুসংবাদ। সেইসঙ্গে বিদেশের ইলেকট্রনিক্স মেলা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বর্হিবিশ্বে প্রচারণামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে ওয়ালটন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু বাংলাদেশ নয়; এখন আমাদের টার্গেট বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়া। এজন্য কারখানা স্থাপন, পণ্যের মানোন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।