ভবদহ অঞ্চল ঘুরে এসে যশোর প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: যশোরের দুঃখ ভবদহ। এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে ও ভবদহ স্লুইস গেটের মুখে নদীর উজানে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, মৎস্য ঘের, পুকুর। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পানি বাহিত রোগ। চরম অভা দেখা দিয়েছে সুপেয় খাবার পানির। যেকোন সময় পেটের পীড়া, আমাশয় এবং ডায়রিয়ার মতে ব্যধি মহামারীর আকার ধারন করতে পারে বলে এলাকাবাসীরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। ৮টি ইউনিয়নের ৩৫ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ায় দূর্ভোগ চরমে পৌছায় তারা ঘর বাড়ি ছেড়ে গোবাদিপশু নিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি বন্দি মানুষ নিজেদের প্রচেষ্টায় স্কেভেটর দিয়ে পলি অপসারণের চেষ্টা অর্থাভাবে ব্যর্থ হতে চলেছে। কিন্তু বিশাল বাজেটের এই কাজ সামান্য টাকায় পলি অপসারণ করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা। সরকারী সহযোগীতা ছাড়া এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত। সরেজমিনে দেখাগেছে, গতকাল থেকে ভাসমান স্ক্যাভেটর দিয়ে স্থানীয়রা নিজেদের প্রচেষ্টায় ভবদহ স্লুইস গেটের মুখ থেকে টেকা নদীর পলি অপসারন কাজ কয়েকদিন করলেও বর্তমানে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
ভবদহ স্লুইস গেই দিয়ে ভবদহের উজানের ২৭টি বিল অর্থাৎ যশোর শহরের নিচে হরিণা বিল থেকে শুরু করে বিল কপালিয়া পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমের পানি ভবদহের ২১ ব্যান্ড ও ৯ ব্যান্ড স্লুইস গেইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে শ্রী হরি নদী দিয়ে সাগরে পতিত হয়। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাঠি, কুলটিয়া, নেহালপুর ও মনোহরপুর ইউনিয়ন, অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের অধিকাংশ মৎস্য ঘের ও বসতবাড়ী পানিতে ডুবে গেছে। পানি বন্দি মানুষ তাদের বসত বাড়ী ছেড়ে গবাদিপশুসহ অন্যত্র চলে গেছে। পানি ভবদহ স্লুইস গেইট দিয়ে বের হতে পারছে না বিধায় এই জলাবদ্ধতা। কারণ হিসাবে দেখা যায় শ্রী হরি ও টেকা নদীতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে নদীর তলদেশ উচু হওয়ায় এবং স্লুইস গেইটের কপাটগুলি পলি দ্বারা আটকে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। বারবার পাউবো বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়েছে।
এলাকাবাসির অভিযোগ, পাউবো এই ব্যর্থতাকে কৃষকদের উপর চাপাতে চায় কিন্তু ফসলের ক্ষতিপূরন প্রদানে পাউবো’র কর্মকর্তাদের ছিল বড় ধরনের অনীহা। যে কারণে অভয়নগর উপজেলার লাখ লাখ মানুষ আজ পানিবন্দী। গত ২৩ জুলাই যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর সরজমিনে ভবদহ পরিদর্শন করেছেন।
জনগনের টাকায় অ্যাম্ফিবিয়ান স্কেভেটর দিয়ে চলছে খনন কাজ। এ ব্যাপারে পাউবোর সেকশান অফিসার ফারাইজুল ইসলামের বলেন, ‘আপাতত জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবোর কোন পরিকল্পনা নেই কিন্তু ৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং-এর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
যশোরের দুঃখ ভবদহ….যার অশুভ প্রতিক্রিয়ায় মারাত্মক রোগ-ব্যাধি মহামারী আকার ধারন করতে পারে। জলাবদ্ধতার কারনে বাধ্য হয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে পানিতেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।