মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী ৩১ জুলাই: ছোট্ট সোনামনিদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস খেলনা। দেখতে চমৎকার, নির্মাণ শিল্পে অনন্য। চায়না বা ভারতের চেয়ে দামে সস্তা। বাঙালি- বিহারীর শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে এসব তৈরি হচ্ছে। দক্ষ কারিগর ও দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানার অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের কারণে এসব তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু একটুখানি সরকারি- বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খেলনা তৈরি শিল্প লাভজনক খাতে পরিণত হতে পারে।
শহর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে একছত্র আধিপত্য রয়েছে বিহারীদের। আর আটকেপড়া বিহারী ক্যাম্পে অবস্থানরত বিহারী খুব অনুকরণ প্রিয়। যে কোন জিনিস একবার দেখলে তা তৈরি করে ফেলে। কয়েক বছর আগে এক অবাঙালি যুবক তৈরি করেছিলেন উড়োজাহাজ। শুধুমাত্র বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজ উড্ডয়নের অনুমতি না মেলায় তার প্রতিভার অবসান ঘটে।
শহরের বাঙালিপুর বিহারী ক্যাম্পের প্রায় শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা তৈরি করছেন বাস, ট্রাক, উড়োজাহাজ, পিস্তল, ঘুর্ণি, পুতুল, বিভিন্ন পশু-পাখিসহ হরেক রকমের খেলনা। তারা জানায়, মেলা ও উৎসব উপলক্ষে এসব খেলনা সবচেয়ে বেশি চলে। তখন দিনেরাতে কাজ করে পাইকার বা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতে হয়। আটকেপড়া বিহারীদের ক্যাম্পে থাকার কারণে কোন ব্যাংক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাদের ঋন সহায়তা দিতে চায়না।
ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানায়, শুধুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই খেলনা তৈরির ব্যবসার প্রসার ঘটছে না। অনেক ক্ষেত্রে কারিগররা খেলনা তৈরি করে দোকানে দোকানে ও মেলায় বিক্রি করে নিজেদের পুঁজি উঠিয়ে আনেন। খেলনাগুলো বিদেশের কোন অংশে কম না হওয়ায় চাহিদাও থাকে প্রচুর।
সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জাওয়াদুল হক এ প্রসঙ্গে জানান, সারাদেশের ন্যায় সৈয়দপুরেও ভরে গেছে চীন ও ভারতের খেলনা দিয়ে। যা আমদানি করতে সরকার কোটি কোটি টাকা ইনভেষ্ট করতে হয়েছে। তিনি বলেন, চীন বা ভারতের যেসব খেলনা দেশে আমদানি করা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক ভাল খেলনা সৈয়দপুরেই তৈরি করা সম্ভব। শুধু দরকার সরকারের সুদৃষ্টি। সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ ও সহযোগিতা মেলে তাহলে প্লেন, রকেট, হেলিকপ্টারসহ অতি উন্নতমানের খেলনা সৈয়দপুরেই তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। কিন্ত অর্থাভাবে সকল সম্ভাবণাই মুখ থুবড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সৈয়দপুরের তৈরি খেলনার চাহিদা বেড়েছে দেশে ও বিদেশেও। লাভজনক শিল্পখাত হিসেবে এ শহরের খেলনা কারিগরদের সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারাদেশে খেলনা শিল্পের চিত্রই পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, খেলনা তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানি যন্ত্রপাতি আসলে সৈয়দপুরের মানুষ খেলনা শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারবে এবং এই খেলনা শিল্প লাভজনক খাতে পরিণত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দি বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী সরকার জানান, বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দারা কিছু না কিছু করে সংসার চালানোর চেষ্টা করে। প্রতিবছর যে অর্থ দিয়ে চীন ও ভারত থেকে খেলনা আমদানি করা হয় সে অর্থ দিয়ে যদি বিদেশ থেকে কম্পিউটারাইজড মেশিন দেশে আনা হয় তাহলে অনেক ভাল খেলনা দেশেই তৈরি হবে এবং খরচও পড়বে তুলনামুলকভাবে অনেক কম। চীন ও ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলনার ব্যবসা করা যাবে দেশ-বিদেশে। তিনি ব্যাংক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে সহজ শর্তে এই খেলনা খাতে ঋন প্রদানের অনুরোধ জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।