সকল মেনু

সৈয়দপুরে চামড়ায় নকশা শিল্পে নারীর কর্মসংস্থান

mail.google.com  মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ২৮ জুলাই: নারীর কোমল হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে জুতার চামড়ায় তৈরি নকশা। বাহারী ডিজাইনে তৈরি এসব নকশার কাজ করছেন শত শত নারী। তাদের নজরকাড়া চামড়ার ডিজাইন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। ফলে নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বেকার নারীরা কয়েক ঘন্টা শ্রমের টাকায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
বাণিজ্যিক শহর হিসাবে পরিচিত নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের বাঙালিপুরে গড়ে উঠেছে আর,এম,এম ফ্যাশন ওয়্যার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে বর্তমানে প্রায় ২শ’ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে হস্তশিল্পের এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। অবহেলিত এ জনপদের ওইসব নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তারা এখন তাদের স্বামী- সন্তান নিয়ে অনেকটা সুখি, কেউবা উপার্জিত টাকায় লেখাপড়াও করছে। এখন তাদের ছেলে- মেয়েরা স্কুলে যায়, লেখাপড়া করে। তারা ওই প্রতিষ্ঠানে চামড়ার ওপর বিভিন্ন এমবোস ডিজাইন ওয়ালমেটসহ নানা ধরণের হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করেন।
সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, অসহায় নারী সেখানে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে জানান, এখন আর তারা সংসারের বোঝা নয়। স্বামীর সংসারে গালমন্দও খেতে হচ্ছে না তাদের। নিখুঁতভাবে চামড়ায় নকশা করে সংসারে অর্থ যোগান দিচ্ছেন তারা। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবহেলিত নারীরা সৈয়দপুরের চামড়া নকশা প্রতিষ্ঠানে যখন আসেন তখন ফ্যাক্টরী কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে ওঠে। চামড়া ফ্যাক্টরীতে কাজ করে এখন আর কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হচ্ছে না তাদের।
কর্মরত নারী শ্রমিকরা আরও জানান, এতদিন তাদের সংসারে সূর্য্যরে আলো ছিল রাতের অন্ধকারের চেয়েও বেশি আঁধার। অভাব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। যে দিন থেকে তারা চামড়া ফ্যাক্টরীতে কাজ শুরু করেছেন সেদিন থেকে তার সংসারে আসতে শুরু হয়েছে চাঁদের আলো। প্রায় ১২ বছর আগে মাহিন উদ্দিন মাহিন সৈযদপুর শহরের বাঙ্গালপিুর নিজপাড়ায় ভাড়া জায়গায় গড়ে তুলেন কারখানাটি। রংপুর- সৈযদপুর সড়কের ১শ’ গজ দক্ষিণে হাজী শহীদুল ইসলামের একটি পরিত্যক্ত গোডাউন ভাড়া নিয়ে দীঘদিন থেকে হতদরিদ্র নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম দিকে ধীর গতিতে চলতে চলতে বর্তমানে সেখানে ২শ’ নারী চামড়ার ওপর বিভিন্ন নকশার কাজ করছেন।
ফ্যাক্টরীর ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান লিটন জানান, তাদের ফ্যাক্টরীতে নিখুঁতভাবে নকশা করা চামড়াগুলো চীন, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। সেখান থেকে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, তেমনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতিদিন এ কারখানা থেকে প্রতিমাসে আয় করছে ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় যদি একটি করে হস্তশিল্পের কারখানা স্থাপন করা যেত তাহলে দেশীয় পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি বেকারদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতো দেশ, ঘুচে যেত অভাব- অনটন।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই কারখানায় কাজ চলে। এই কারখানায় অবহেলিত স্বামী পরিত্যক্তা নারী, কিশোরীরাই কাজ করে বেশি। অভাব- অনটনের নারী পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে এখানে কাজে নেয়া হয়। সবাই প্রায় দলবদ্ধভাবে আসা-যাওয়া করায় যাতায়াতে কোন সমস্যা হয়না, তারা এই কাজে শুধুমাত্র একটি কাটার ব্যবহার করেন। যার মাধ্যমে চামড়ায় ফুটিয়ে তোলেন মনোরম ডিজাইন। যা পরবর্তীতে দামি জুতা বা স্যান্ডেল হিসাবে আভিজাত্য পরিবারের লোকজনের পায়ে উঠে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top