সকল মেনু

জেএমবি সাঘাটায় ফের সক্রিয় হচ্ছে !

Gaibanda1437391178গাইবান্ধা প্রতিনিধি :  জেলার সাঘাটায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ফের সংগঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার আতংকিত এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিকার চেয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত কয়েকমাস ধরে সাঘাটা উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) একটি অংশ সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই অপতৎপরতার পেছনে রয়েছে সাঘাটা থানা সদর সংলগ্ন আকন্দ পাড়ায় বসবাসকারী বাংলা ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভুমিকা।

ওই পরিবারটিকে সবাই ‘জেএমবি পরিবার’ হিসেবেই চেনে। পরিবারের জামাতা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র শীর্ষ নেতা ছিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। পরিবারের দ্বিতীয় মেয়ে বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন বর্তমানে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে। জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নির্মাণের দায়ে উচ্চ আদালত তাকে আজীবন কারাদন্ড দিয়েছেন।

এ পরিবারের বড় ছেলে ওমর ফারুক স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক। তার নামেও রয়েছে জেএমবির সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ। জেএমবি যখন তৎপর ছিল তখন তিনি দরিদ্র অমুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। সাঘাটা উপজেলার ব্যবসায়ী প্রয়াত মানিক চন্দ্র সাহা ওমর ফারুকের নামে এ সংক্রান্ত একটি মামলা সাঘাটা থানায় দায়ের করেছিলেন।

বর্তমানে ওই পরিবারের জঙ্গিনেতাদের নেতৃত্বে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জেএমবি।

অভিযোগে আরো বলা হয়, আমরা স্থানীয় জনগন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, মাদরাসা শিক্ষক ওমর ফারুক, তার মা ফরিদা বেগম জেএমবির সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। ওমর ফারুক পুরাতন কর্মিসংগঠকদের পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার মা ফরিদা বেগম নিয়মিত স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মহিলাদের ধর্মীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদি চেতনায় দীক্ষিত করে তুলছেন। দিনে নিজ বাসায় এবং সন্ধ্যায় যমুনা নদী সংলগ্ন চরের বিভিন্ন স্থানে চলে নারীদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ।

অন্যদিকে ওমর ফারুক জেএমবির পুরাতন সংগঠকদের সক্রিয় করার মাধ্যমে তাদের সংগঠনকে পূন:প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর রয়েছেন। জেএমবি কর্মিদের মধ্যে যারা সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন, পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন- তাদের সমূলে নিশেঃষ করার হুমকিও দিয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই রোববার রাত আটটায় জুমারবাড়ি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বসন্তের পাড়ার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী মন্ডলকে পেছন থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় মোটর সাইকেল আরোহী দুষ্কৃতকারীরা।

রাত ২ টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ফজলে রাব্বী মন্ডল জেএমবির বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছেন বলে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ওমর ফারুকের নেতৃত্বে চলছে কর্মিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত আছেন বাংলা ভাইয়ের শ্বশুর ইব্রাহীম খলিল, চাচা শ্বশুর ইয়াকুব আলী মাস্টার, ইউসুফ আলী, ওবায়দুল ইসলাম, পলাশ খন্দকার, ওসমান গণি ওরফে ফিরোজ প্রমুখ।

এসব কার্যক্রমের অর্থযোগানের দায়িত্ব পালন করেন ইব্রাহিম খলিল। পারিবারিকভাবে যমুনা নদীর ঘাট ইজারা নিয়ে সেখান থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন। সেই অর্থ জমা হয় জেএমবির ‘বায়তুল মাল ইয়ানত’ শীর্ষক প্রকল্পে। এই আর্থিক প্রকল্পকে শক্তিশালী করতেই ইব্রাহিম খলিল সম্প্রতি হজ্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি হজ্বে গিয়ে মুলত সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি জেএমবি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বহুমাত্রিক লেখক, বুদ্ধীজিবী হুমায়ুন আজাদের অন্যতম খুনি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু ও সালেহীন ওরফে সালাউদ্দীন ওরফে সজীব ওরফে তাওহীদ বর্তমানে সৌদি আরবে পলাতক আছেন। এই দুই পলাতক আসামীর নির্দেশনাতেই ইব্রাহিম হজ্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমরা স্থানীয় জনগন জানতে পেরেছি।

ওমর ফারুক কুমার পাড়া চরে উন্মুক্ত কর্মি প্রশিক্ষণে বলেছেন, ‘আমার বাবা হজ্জ থেকে ফেরার পর আপনাদের আর আর্থিক সংকট থাকবে না। এই ফকিন্নি অস্ত্রের (রামদা, চাপাতি, ক্রিচ, চাইনিজ কুড়াল, নান চাকু ও কমান্ড চাকু) বদলে আপনাদের হাতে আসবে অত্যাধুনিক অস্ত্র। তার এই বক্তব্যের পর স্থানীয় লোকদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

আলোচ্য জঙ্গি পরিবারের নেতৃত্বে সাঘাটা উপজেলায় জঙ্গিদের যে উত্থান শুরু হয়েছে তাতে আগামী যে কোনও সময় অতীতের মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দেশ-বিদেশে আবারও বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশের ভাবমুর্তি।

লিখিত আবেদনে ওই এলাকার ১৬জনের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো.আব্দুস সামাদ ও পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ গ্রহণ করার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top