সকল মেনু

মাঠেঘাটে কামলার কাজ করেও, ব্রাজিলের সমর্থক

mail.google.com মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ১২ জুলাই: ভালবাসার এক অন্যরকম নজির। যেন অকৃত্রিম ভালবাসা। দলকে ভালবেসে হৃদয়ে ধারণ করে ব্রাজিল দলের সমর্থক এসব কামলারা কাজ করছেন আপনমনে। ১৫ জন সদস্যের এই টীমে রয়েছেন একজন টীম লিডারও। তার নির্দেশ মেনে চলেন দলের সবাই। এরা প্রতিদিনই কাজ করে সংসার চালান আর সময় পেলে বিশেষ করে ব্রাজিলের ফুটবল খেলা টিভিতে দেখালে সেদিন কাজ বন্ধ রাখেন। এই দলের প্রতি একটি নির্দেশ রয়েছে দলের জার্সি না পড়লে সে আর কামলার কাজ করতে পারবে না।
উপজেলার বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর চড়কপাড়া এলাকার দক্ষিণ দোলায় আউষ ধানের চারা লাগানোর সময় এসব কামলার সাথে কথা হয়। কামলার দলনেতা মোকছেদুল-১ (৩৫) জানান, ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে টিভিতে খেলা দেখে আমরা সবাই ব্রাজিল দলের সমর্থক হয়ে যাই। সে থেকে জার্সি নিজেরাই ১২০ টাকা কিনে গায়ে চড়াই। কাজ করার সময় এই জার্সি না পড়লে তাকে কাজে নেয়া হয়না এটা বলে দেয়া আছে। ব্রাজিলের ফুটবল খেলোয়াররা মাঠে খেলেন আর আমরা ক্ষেতে-খামারে কামলার কাজ করি। জার্সি পুরানো হলে আবার ২০১৪ সালে নতুন করে কেউ কেউ কিনে নেন।
১৫ সদস্যের এই দলে রয়েছেন আব্দুল কাদের (৩৪), সাজু (৩৬), আইনুল (৩২), সাহানুর (৩৪), সালেক (২৯), রাশেদ (৩১), আতাউর (২৫), মোকছেদুল-২ (৩৩), আকতারুল (২৪), আব্দুল লতিফ (৩২), রুহুল আমিন (২৯), হালিম (২৭), আনিস (৩৫) ও মোসাদ্দেক (৩৫)। এদের সকলের বাড়ি পাশাপাশি গ্রাম কোরাণীপাড়া, কান্দুড়ার মোড় ও দলুয়া চৌধুরীপাড়ায়। সকলেই প্রায় বিবাহিত এবং তাদের কারো কারো দু’ একজন করে সন্তানও রয়েছে।
দলনেতা জানান, ওই দলের প্রতি ভালবাসায় তারা ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠী নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন। চলতি আউষ মৌসুমে তারা প্রতিবিঘা (৬০ শতাংশ) জমিতে ধানের চারা লাগাতে মালিকের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ নিয়ে থাকেন। টাকা ভাগাভাগির পর অবশিষ্ট টাকা সমর্থক গোষ্ঠীতে জমা করেন। এভাবে তাদের নিজস্ব চাঁদার টাকায় চলছে তাদের সংগঠনটিও। এই জার্সি পড়ে কাজ করলে তাদের কাজে জোঁস বাড়ে এমনটি বললেন দলনেতা মোকছেদুল।
ফুটবল খেলায় রেফারীর বাঁশি দুটি দলকেই পরিচালিত করে থাকে। কিন্ত এই দলে বাঁশি নেই আছে দলনেতা। তার কথা সবাই মেনে চলেন। কাজের জন্য গৃহস্থরা তার হাতে পারিশ্রমিক ও অগ্রিম টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে। পরে সকলেই তা বিলিবন্ঠন করে নেন। কোনদিন কার কাজ হবে সেটাও ঠিক করেন তিনি।
এই জার্সি পড়েই দলের সবাই ধানের চারা লাগানো, ধান, পাট, গম কাটা- মাড়াই, ক্ষেতের নিড়াণির কাজ সহ সকল কৃষি কাজ করে থাকেন। কাজ করার সময় কেউ কেউ মন্তব্য করলেও তারা কেউ গায়ে মাখেন না। তবে মাঝে মধ্যে অনেকে তাদের ভালো বলেন এবং কাজেরও প্রশংসা করেন তখন তাদের ভালো লাগে। তাদের সাফ কথা কাজ করে খাই, চুরিতো করিনা। এভাবে তারা সকলে মিলেমিশে কাজ করছেন বছরের পর বছর। কোন ফুটবল সমর্থক যদি তাদের ক্লাবে সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে সমাজসেবার কাজ করতে পারবেন বলে সবাই মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top