সকল মেনু

মোনাজাত ও দোয়ার আদব-কায়দা

romjaner-doa_13322

ধর্ম ডেস্ক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৭ জুলাই : পবিত্র মাহে রমজান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার নিয়ামতের মাস। আমরা গুরুত্বপূর্ণ এ মাসটির একে একে দুটি দশক পার করতে চলেছি। আজ মাহে রমজানের ১৯তম দিবস। কাল থেকে শুরু হচ্ছে ই’তিকাফের দশক। মুমিন মুসলমানরা অন্য ১১মাস থেকে একটু আলাদা সময় দিয়ে আল্লাহকে ডাকছেন। দ্বীনদুনিয়ার কল্যাণ কামনায় দোয়া-মোনাজাত করছেন।
দোয়া-মোনাজাতের জন্য কুরআনে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট ৪টি আদব ও নিয়ম রয়েছে। প্রথমটি হলো নিজের অপরাগতা ও অক্ষমতা এবং বিনয়-নম্র্রতা প্রকাশ করে দোয়া করা, দ্বিতীয়টি হচ্ছে- চুপিচুপি ও সংগোপনে দোয়া করা।
তৃতীয় ও চতুর্থ হলো যথাক্রমে ভয় ও আশান্বিত হয়ে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকা। কুরআনুল কারীমের ভাষায়, উদয়ূ-হু খাউফান ওয়া তোমায়ান : তোমরা আল্লাহকে ভয় ও আশা সহকারে ডাকো।’ (৭ : ৫৬)। ‘ভয় সহকারে এবং আশান্বিত হয়ে’ ডাকার অর্থ এই যে, ভয় করতে হবে কেবল আল্লাহকে, কোন কিছুর আশা ও বাসনা পোষণ করতে হবে কেবল আল্লাহর প্রতি-ই। প্রথম দুটি আদব মানুষের বাহ্যিক দেহের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেননা বিনয়ের অর্থ হলো দোয়ার সময় দৈহিক আকার-আকৃতিকে অপারগ ও করুণা ভিক্ষার মতো করে নেয়া, অহঙ্কারী ও বেপরোয়া মত পরিহার করা। দোয়া সংগোপনে করার সম্পর্কও মুখ জিহ্বার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরবর্তী দুটি হলো অভ্যন্তরীণ। এগুলোর সম্পর্ক মানুষের মনের সঙ্গে। আর তা হলো, দোয়াকারীর মনে এ আশঙ্কা থাকা উচিত যে, দোয়া কবুল হতে পারে। কেননা পাপ ও গুনাহ থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়াও ঈমানের পরিপন্থী। অন্যদিকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়াও কুফর ও ভ্রান্তি।
এই চারটি আদব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পর কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালার করুণা সৎ কর্মীদের নিকটবর্তী। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদিও দোয়ার সময় ভয় ও আশা উভয় অবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু আশার দিকটিই থাকতে হবে প্রবল। কেননা আল্লাহ পরম দয়ালু। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহে কোন ত্রুটি ও কৃপণতা নেই। এক হাদীসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, বান্দা যতক্ষণ কোন গুনাহ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কছেদের দোয়া না করে এবং তড়িঘড়ি না করে, ততক্ষণ তার দোয়া কবুল হতে থাকে। সাহাবাগণ আরজ করলেন, তড়িঘড়ি দোয়া করার অর্থ কি? তখন বলা হলো : এর অর্থ হলো এরূপ ধারণা করে বসা যে, আমি এত দীর্ঘদিন থেকে দোয়া করছি অথচ এখনও পর্যন্ত কবুল হলো না, অতঃপর নিরাশ হয়ে দোয়া ত্যাগ করা। (মুসলিম, তিরমিজি)। তিরমিজি শরীফে আবী উমামা (রাদি) হতে বর্ণিত, একবার রাসুলকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো : কোন দোয়া বেশি কবুল হয়? জবাব দিলেন, ‘শেষ রাতের মধ্যকালের ও ফরজ নামাজের পরের দোয়া।’ হযরত আবু হোরাইরা (রা.) রাসুল (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সব চাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই (সিজদায় গিয়ে) খুব বেশি করে দোয়া করো’। (মুসলিম) রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি দৈনিক সত্তরবারের অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। (বুখারী)
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) অধিকাংশ সময় এই বলে দোয়া করতেন, আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতে হাসানাতাও ওয়া কি-না আযা-বান না-র অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ ও আখিরাতে কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাকে রেহাই দাও। বিশেষ করে রমজান মাস দোয়া কবুলের উত্তম মৌসুম। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্নিত- রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। এক- রোযাদার যখন ইফতার করে, দুই- ন্যায় বিচারক শাসক এবং তিন- অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া। এই দোয়াকে আল্লাহ তায়ালা মেঘের উপর তুলে রাখেন এবং তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার সম্মানের কসম, আমার প্রতাপের কসম, তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব,যদিও তা একটু বিলম্বে হয়। ( আহমাদ,তিরমাযী, ইবনে মাযাহ)
রমজান মাসের প্রতিটি সময়, প্রতিটি ক্ষণ অত্যন্ত মূল্যবান। অন্য যে কোনো মাসে যেমন নির্দিষ্ট সময় বা শেষ রাতে বা তাহাজ্জুদের সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু রমজান মাসে প্রতিটি সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দিনে-রাতে আল্লাহ পাক তার রহমতের দরজা খুলে বান্দার নিকটবর্তী হয়ে গুণাহগার বান্দাদের মাফ করে দিচ্ছেন এবং তা চলতে থাকবে অনবরত একেবারে ঈদের রাত পর্যন্ত।
তাই আমাদের সবার রমজান মাসের প্রতিটি ক্ষণ ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো উচিৎ। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top