সকল মেনু

জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশ কৌশলী হচ্ছে

p21

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৬ জুলাই : দেশে এখন কোনো জঙ্গি সংগঠন নেই- এমন দাবি করে, জঙ্গি তৎপরতা মোকাবিলায় পুলিশ কৌশলী হচ্ছে বলে জানালেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে যেসব জঙ্গি ধরা পড়ছে, তারা কেবলমাত্র দেশের বাইরের কোনো সংগঠনের লেজুরবৃত্তি করছে। তারা ওই বিদেশিদের আদলে এ দেশেও খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে চায়। তবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে পেরে উঠছে না। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জিয়া বলেন, ‘জঙ্গিবাদ হচ্ছে মৌলবাদী রাজনীতির সশস্ত্র রূপ। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনই মৌলবাদী রাজনীতির মূল লক্ষ্য। এই মৌলবাদী রাজনীতির ছত্রছায়ায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। বাংলাদেশেও তা-ই ঘটছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, যেসব জঙ্গি নেতা গ্রেফতার হয়েছে বা যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে তালিম নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম জঙ্গিদের প্রকাশ্য মঞ্চ এবং জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি তাদের মূল সংগঠন। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা- যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।’ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে। স্বাধীনতার ৪২ বছরেও কওমি মাদ্রাসার আধুনিকায়ন হয়নি, সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়নি। এ সুযোগ নিয়ে ধর্মের নামে সেখানে মৌলবাদী রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার আড়ালে সশস্ত্র প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।’ এ বিষয়ে কলামিষ্ট ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, শুধু মাদ্রাসায় নয়, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও মৌলবাদ চর্চা হচ্ছে। এর কারণ বহুবিধ। দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। এ কারণে সভা-সেমিনার-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও মন্থর হয়ে পড়েছে। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা বড় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি, দখলবাজি দেখছে। এ পরিস্থিতিতে শিবির কিংবা জঙ্গিরা সহজেই শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হচ্ছে।’ এসব প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এখন কোনো জঙ্গি সংগঠন নেই। মাঝে মধ্যে যারা ধরা পড়ছে, তারা কেবলমাত্র দেশের বাইরের কোনো সংগঠনের লেজুরবৃত্তি করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় তারা সুবিধা করে উঠতে পারছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি মোকাবেলায় এরই মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‍যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। তিনি এরইমধ্যে সাফল্যও দেখিয়েছেন। সামনে আরো কিছু কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি মোকাবেলায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। এরপরই জঙ্গি বিষয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা হবে- যেটি অনেকদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক জঙ্গি মোকাবেলায় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃঞ্চপদ রায় বলেন, ‘জঙ্গি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। কোনোভাবেই জঙ্গি কার্যক্রম মাথাচারা দিতে দেয়া হবে না। যারাই পরিকল্পনা করছে, তাদেরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে প্রযুক্তিগতভাবেও এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জঙ্গিরা কিছু অপারেশন করার জন্য নাম পাল্টানোর কৌশল নিচ্ছে। এতে তাদের পরিচয় কেউ শনাক্ত করতে পারছে না। তবে এ বিষয়ে পুলিশও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘একজন জঙ্গি ধরা পড়লে দীর্ঘ মেয়াদে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাখা হচ্ছে। তাকে জেলে আটকে রাখা হচ্ছে। তার গতিবিধি লক্ষ করা হচ্ছে। ফলে এক ধরনের সফলতা আসছে।’ প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বেশিরভাগই জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দিশেহারা। প্রতিদিন সেখানে বোমা ফাটছে, মানুষ মরছে। সেই আদলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও অস্থিতিশীল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি আইএস নামে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের কয়েক সদস্য ধরা পড়ার পর বিষয়টি সবার সামনে চলে আসে। সবশেষ গত ২ জুলাই র‌্যাবের হাতে ১২ জঙ্গি ধরা পড়ার পর আইনশৃঙ্লা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। ওইদিন র‌্যাব জানায়, ঈদের পর রাজধানী ঢাকায় একটা নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল আটক জঙ্গিরা। সেটি সফল হলে সারাদেশে একযোগে নাশকতা করার কথা ছিল। আর সেটিও সফলভাবে শেষ করতে পারলে ভারতের কিছু অংশ, মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ একটি অঞ্চল নিয়ে ইসলামী খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা। তবে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর তা নস্যাৎ হয়ে যায় বলে দাবি করে র‌্যাব। এর আগে ভারতের বর্ধমানে একইভাবে জঙ্গি হামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় ভারত বার বারই বলে আসছিল এ ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশি কয়েকজন জঙ্গি জড়িত। ওই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জঙ্গি মোকাবেলায় উভয় দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। সর্বোপরি, জঙ্গি বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জঙ্গি মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করে কাজ করছে। যেকোন মূল্যে এ দেশ থেকে জঙ্গি তৎপরতা  নির্মুল করা হবে।’
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top