সকল মেনু

পাপমোচনের দশক শুরু

রমজানের-ফজিলহ-ও-মক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৯ জুন : শুরু হলো পাপমোচনের দশক। মিশকাত শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী রমজানের প্রথম দশদিন ছিল রহমতের। দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতের। আজ মাগফিরাতের দশকের প্রথমদিন। বান্দার কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করার জন্য মহান আল্লাহ রমজান মাসকে প্রতিবছর পাঠিয়ে দেন,  যাতে তারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করে ধন্য হতে পারে। মুসলমানরা মাহে রমজানকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে; বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিয়ে থাকি, যখন (তারা) আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। (সূরা বাকারা)
পাপমোচনে রমযান মাসে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের জন্য অবারিত সুযোগ রেখেছেন। যা অন্য কোনো মাসে সম্ভব নয়। হাদিসে বর্ণিত আছে- হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (স.) ইশরাদ করেছেন, (গুনাহ হতে বাঁচার জন্য) রোযা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং রোযাদার অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহেলী আচরণ করবে না। কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে অথবা গালমন্দ করলে সে তাকে দুই বার বলবে, আমি রোযাদার। তিনি আরো বলেন, যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার শপথ! রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট কস্তুরীর সুগন্ধ হতেও অতি উৎকৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, রোযাদার খাদ্য ,পানীয়,ও কামভাব পরিত্যাগ করে আমার উদ্দেশেই রোযা রাখে। সুতরাং আমি তাকে বিশেষভাবে রোযার পুরস্কার দান করবো। আর নেক কাজের পুরস্কার দশ গুণ পর্যন্ত দেয়া হবে। (সহীহ বোখারী, প্রথম খন্ড)
আরেক হাদিসে বর্ণিত- আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম (স.) ইশরাদ করেন, যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামায পড়ে এবং রমজানের রোযা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বোখারী)
এমন কী তারাবীহ নামাযেও রাখা হয়েছে গুনাহ মাফের সুযোগ। হাদীসে বর্ণিত-  আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় তারাবীহর নামাযে দাঁড়ায় (নামায আদায় করে), তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বোখারী)
আবার রোজাদারকে ইফতার করালে তা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না। এরূপ সওয়াব আল্লাহতায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারাও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন যাতে সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বায়হাকি)
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, ক্কাআব বিন ঊজাইর রাজি আল্লাহু তায়ালা আনহু (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার জুমার খুৎবা দেয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন, তখন বলেন আমীন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখেন, তখন বলেন আমীন। একইভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বলেন, আমীন। নামায শেষে সাহাবীরা রাসুলুল্লাহকে (সা.) তিনবার অস্বাভাবিকভাবে আমীন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিব্রাইল আলাইহিসসালাম ওহী নিয়ে আসেন এবং বলেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সেই ব্যক্তি, যে রমজান মাসের রোজা পেল অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, এর জবাবে আমি বললাম আমীন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যার সামনে আমার নাম নেয়া হলো অথচ দরুদ শরীফ পড়ল না, জবাবে বলেছি আমীন। তৃতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখলাম, জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যে বা যারা তার মা-বাবা কিংবা উভয়ের যে কোনো একজনকে পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না, জবাবে বলেছি আমীন। (সহীহ বোখারী, সহীহ তিরমিযি, ইমাম হাম্বলী, ইবনে কাসীর)
এই হাদীসের শুরুতেই বলা হয়েছে রমজান শরীফের কথা। রমজান মাস যখন শুরু হয়, তখন আল্লাহ পাক এই মাসের প্রথম রাতেই দশ লক্ষ বান্দাকে মাফ করে দেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে রয়েছে এমন সব গুণাহগারদের মাফ করে দেন। লাইলাতুল কদরের রাতে অসংখ্য অগণিত বান্দাকে মাফ করে দেন, আর মাসের ২৯ তারিখ রাতে সারা মাসের যত মাফ করা হয়েছে তার দ্বিগুণ, আর ঈদের রাতে আরো দ্বিগুণ সংখ্যক বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন বলে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। তবে কবীরা গুনাহের জন্য তওবা করে মাফ চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এভাবে পবিত্র রমযানে নানাভাবে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের জন্য গুনাহ মাফের উপলক্ষ্য তৈরি করে দিয়েছেন। এই মাগফিরাতের দশকে আল্লাহ আমাদের সে সুযোগ গ্রহণের তৌফিক দান করুন।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top