ভোলা প্রতিনিধি: সাগরে সৃষ্ট নিম্মচাপের প্রভাবে অতি জোয়ারের পানিতে ভোলার চার উপজেলার উপকূলীয় এলাকার বাঁধের ভেতর ও বাইরের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। পানিবন্দি এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। তিগ্রস্ত হতে চলছে কৃষকের ফসলি জমি। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলা ১০ রুটে নৌ-চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার দুপুর থেকে ভোলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, মেদুয়া, মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের চর নিজাম, হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসের হাট, কলাতলী ও সাকুচিয়া, চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের আমিনপুর বাবুগঞ্জ, চর পাতিলা ও নবীনগর গ্রাম এবং ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপুর ও মাঝের চর।
ঢালচর ইউপি চেয়ারম্যান কালাম পাটোয়ারী বলেন, ঢালচর ইউনিয়নের নিচু অধিকাংশ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস বইছে, এতে নদী ও সাগর উত্তাল রয়েছে। কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেন জানান, গত ২ দিন ধরে প্রবল জোয়ারে কুকরী-মুকরীর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, দৌলতখানের বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের বাহিরের এলাকায় পানি ঢুকলেও ভাটা এলে পানি সরে যাবে।
এদিকে, সোমবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে কখনও ঝড়ো বাতাস, কখনও ভারী বর্ষণ। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদী মোহনা। দুর্ঘটনার আশঙ্কা জেলে নৌকা ও ট্রলারগুলো তীরের কাছাকাছি এসে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার বৈরি আবহাওয়া উপো করেও নদীতে মাছ শিকার করছে।
ভোলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা দপ্তরের পরিচালক মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ভোলায় ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও লোকজনকে সতর্কস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। নিন্মচাপের প্রভাবে এ বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে।
অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলা ১০ রুটে নৌ-চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত রুটগুলো হচ্ছে নাজিরপুর-কালাইয়া, ভেলুমিয়া-ধূলিয়া, ইলিশা-মজু চৌধুরীরহাট, দৌলতখান-আলেকজেন্ডার, মির্জাকালু-আলেকজেন্ডার, চরফ্যাশন-মনপুরা, তজুমদ্দিন-মনপুরা, তুলাতুলী-নোয়াখালী, বোরহানউদ্দিন-বরিশাল ও ভেদুরিয়া-বরিশাল।
ভোলার বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. নাসিম জানান, দুই দিন ধরে ভোলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে ভোলার নৌ-পথগুলো উত্তাল হয়ে উঠেছে। জরুরী বার্তায় উপকূলীয় এলাকায় ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয় বিআইডব্লিটিএ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সতর্কতা জারি থাকবে।
এদিকে, তৃতীয় দিনের মত ভোলায় থেমে থেমে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এতে নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতি জোয়ারে উপকূলের বেশীরভাগ নিচু স্থান তলিয়ে গেছে।
ভোলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন চর ও বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। এই নৌ-পথ দিয়েই ছোট ছোট লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল করে। রুটগুলো বন্ধ করে দেয়ায় হাজারো যাত্রী দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার নিষেধাজ্ঞা উপো করেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।