সকল মেনু

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ডিএনডির খালগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক-নারায়ণগঞ্জ, হটনিউজ ২৪ বিডি.কম  ১৪ জুন: জ্যৈষ্ঠের শেষ, আসছে আষাঢ়। সামনে পুরো বর্ষা মৌসুম। অথচ বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই ডিএনডি বাধের ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডিএনডির খালগুলোর বেশিরভাগই দখল হয়ে গেছে। অন্যদিকে যেগুলোর অস্তিত্ব আছে সেগুলোও ভরাট হওয়ায় পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ডিএনডির ভেতরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ডিএনডির খালগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এগুলো সচল করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ডিএনডির ভেতরের নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি শিকদারবাড়ি এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম। পানিতে ডুবে যাওয়া ক্ষেতে নেমে পুঁইশাক তুলছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। বললেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানি বেড়ে পাশের খাল উপচে পানি চলে এসেছে তার পুঁইশাকের জমিতে। জমির উপরে এখন হাঁটু পানি।’
জহিরুল ইসলাম ২ একর জমিতে পুঁইশাক বুনেছিলেন। অল্প অল্প করে তুলে বিক্রি করছিলেন। কিন্তু এখন তার পুরো পুঁইশাকের ক্ষেত পানির নিচে। প্রায় ২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে তার। আবদ্ধ পানিতে পচে গেছে বেশিরভাগ পুঁইশাক।
একই এলাকার নূরুল ইসলাম জানালেন, তার প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। এখন মাছের খামারের ওপরে বইছে খাল দিয়ে আসা নোংরা-পচা পানি। খালের পানি উপচে তাদের বাড়ি ঘরের চারদিক প্লাবিত হয়েছে। পচা পানির গন্ধে বাসায় থাকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পানি পায়ে লাগলে চুলকানি হচ্ছে। তার সাতটি গরুর জন্য উঁচু গোয়ালঘর তৈরি করেছেন। কিন্তু যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে পানি উপচে গোয়ালঘর ভেসে যেতে বেশি দিন লাগবে না।
শুধু ফসলের ক্ষেত বা মাছের খামার নয়, পানি ঢুকে পড়েছে বাড়ি ঘরেও। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশের নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ এলাকার বাসিন্দা সাত্তার মিয়া জানান, তাদের বাড়িতে গত ৪-৫ দিন ধরে পানি। পানি একটুও কমছে না। পানি নদীতে যাচ্ছে কি যাচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না।
জেলা পরিষদের পাশ দিয়ে ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটি পানিতে ডুবে রয়েছে। এলাকার ওষুধের ফার্মেসির মালিক মোক্তার হোসেন জানান, ডিএনডির জলাবদ্ধতার মূল কারণ এর ভেতরে খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়া। জেলা পরিষদের পাশ দিয়ে যাওয়ার রাস্তাটি দেখিয়ে তিনি বললেন, এদিকে খাল ছিলো। বিএনপি আমলে বিএনপির এক মন্ত্রীর ভাগিনা, যার এ এলাকায় জমি ও মার্কেট আছে, নিজের সুবিধার জন্য খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি করান। রাস্তার পাশ দিয়ে অল্প একটু নালার মতো রাখা হয়। কিন্তু সে নালাটিও ময়লা ফেলে প্রায় ভরে ফেলা হয়েছে। ফলে পানি পার হতে পারে না। এ খালটির মতোই ডিএনডি এলাকার বেশিরভাগ খাল নানাভাবে দখল হয়ে গেছে। আর যা আছে, তাও ভরাট হয়ে পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ডিএনডির ভেতরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এলাকার একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক আফতাব উদ্দিন জানান, ‘আমরা এখন কোনো কূল পাচ্ছি না। পানি না সরায় বাড়িঘর ডুবে আছে। বর্তমানে যেসব বাড়িঘর হচ্ছে তা অপরিকল্পিত।’
১৯৬৮ সালে ডিএনডি বাধ নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ভেতরে ছোট বড় মিলিয়ে খাল ছিলো ১৯টি। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে ছিল ১৮৬ কিলোমিটার। এসব খালের ৯০ ভাগই এখন বেদখল হয়ে গেছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘খালগুলো দখল হয়েছে এবং খালগুলো দিয়ে যে পানি বেরিয়ে যাবে সেই জায়গা পর্যন্ত বিভিন্ন দলের নেতা, সরকারের উচ্চপদস্থ লোকজনরা বন্ধ করে দিয়েছে। এই খালগুলো দখলমুক্ত হওয়া দরকার। তবে নারায়ণগঞ্জের বা ঢাকার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে এ খালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব কিনা সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে এখানে কঠোরভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো প্রয়োজন। খাল দখল করে গড়ে তোলা মার্কেট, বাড়ি, কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে রাস্তা খনন করে খালগুলো আগের অবস্থায় নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি লিংক রোড দিয়ে পানি অন্য পারে যাওয়ার জন্য যে কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে সেগুলো খুবই অপ্রশস্ত। এসব স্থানে নতুন প্রশস্ত কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে।’
খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ কথা বললেন ডিএনডিরর পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘যদি এই ধরনের কোনো অবৈধ দখলদারি থেকে থাকে, তবে তার জন্য পুলিশ ও জেলা প্রশাসন রয়েছে। তারা ব্যর্থ হলে আরো বড় পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো দখলমুক্ত করা অবশ্যই দরকার। তা না হলে মানুষের কষ্ট দিনদিন আরো বাড়বে।’
গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার ডিএনডি বাধের ভেতরে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে।
হটনিউজ ২৪ বিডি.কম /এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top