সকল মেনু

সাইকেল ব্যাতিক্রমধর্মী সংগঠন ‘টিম র‌্যাকলেস’

unnamed সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: যখন মাদক ছরে গেছে আনাচে কানাচে। প্রতিটি স্থানেই মাদক এমন ভাবে ছরিয়ে গেছে যে শিশু,কিশোরাও এখন হাত বাড়ালেই পাচ্ছে মাদক, ফলে একসময় অবিভাবকরা যুবকদের মাদক সেবন নিয়ে চিন্তিত থাকলেও এখন অবিভাবকদের চিন্তার বিষয় তার স্কুলগামী অথবা কলেজগামী সন্তানদের নিয়ে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ড্যান্ডি এবং ইয়াবার করালগ্রাসে কিশোরদের জীবন এখন অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এরিয়ে সমাজের একশ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী তাদের লাভের আশায় চালিয়ে যাচ্ছে এই মাদকের ব্যবসা। দামে কম বহনে সুবিধা এবং হাতের নাগালে পাবার কারনে শিশু-কিশোররা এর দিকে বেশী ঝুকছে। ফলে অবিভাবকরা তার সন্তানদের নিয়ে সর্বদায় দুর্শ্চিন্তায় থাকে। ঠিক সেই সময়ে মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরের এক ঝাক শিশু-কিশোরদের নিয়ে গড়ে উঠছে সাইকেল স্ট্যান্ট টিম,নাম টিম র‌্যাকলেস। যার বাংলা অর্থ উদ্দমী দল। কিশোর বয়সটাই দুরন্ত বয়স । কারন এটি বয়সন্ধিকাল আর । এই সময়ে তাদের শরীরের নানান ধরনের পরিবর্তন ঘটে। যেটা সহজেই তারা কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। ফলে এই সময়ে বন্ধু বান্ধব আর সহপাঠিদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বেশী। আর এইটাই ছেলে পেলেদের  বিপথে যাবার বা নষ্ট হয়ে যাবার একটি সময়। এই বয়সে তারা থাকে অতি দুরন্ত। কিন্তু পরিবারের নিকট থাকে আপদ হয়ে । কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাঁকুর তার ছুটি গল্পেই বলেছেন ১৩-১৪ বয়সের ছেলেদের মতো আপদ আর নেই। সঙ্গদোষ মানুষের বিপথে যাবার একটি বড় মাধ্যম।  যাই হোক শহরে স্কুলগামী এক দল দুরন্ত শিশু ও কিশোরদের সমন্ময়ে গড়ে উঠেছে টিম র‌্যকালেস। এই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে নাজিব নিনাদ। নিনাদ শুধু একজন ভালো সাইকেল স্ট্যান্টারই না একজন মেধাবী ছাত্রও বটে। আর সাথে আছে  সাদাত  মোস্তফা সাদাফ তালুকদার । সাদাত শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। সে সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্র। প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন স্থানেই এই সাইকেল স্ট্যান্টারদের দেখা যায়। সাইকেল স্ট্যান্ট মানে হচ্ছে সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন কসরত দেখানো। এটা শিল্পের একটা কলা । আগের দিনে সার্কাসগুলোতে সাইকেল নিয়ে এই কসরতের কিছু কিছ ুদেখানো হতো।  এটা মুলত একটি একরোবেটিক চর্চা। টিম র‌্যাকলেস কোন প্রফেশনাল দল নয় । এটা শহরের শিশু-কিশোররা তাদের শখের বসত করতে করতে সবাই একত্রিত হয়েই মুলত এই দলটি টি গঠন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহরের যমুনা নদীর  হার্ডপয়েন্ট,মুজিব সড়ক,কালেক্টরেট চত্বরে মাঝে মাঝেই তারা সাইকেল স্ট্যান্ট  শো করে। ইতি মধ্যেই তাদের মনোমুগ্ধকর এই সাইকেল স্ট্যান্ট শো দর্শক আকৃষ্ট করেছে। তাদের স্ট্যান্টশো’র সময় শত শত সাধারন জনতা রাস্তার দু ধারে ভীর করে দেখে। মাথায় হেলমেট,হাতে পায়ে প্যাড লাগিয়ে নিজেদের নিরাপদ করেই তারা স্ট্যান্ট করে। দ্রুত গতিতে সাইকেল চালিয়ে কখনও ছিটে দাড়িয়ে,হ্যান্ডেলে দাড়িয়ে আবার কখন উল্টো হয়ে,কখন সামনের চাকা খুলে,আবার সামনের চাকার রডে দাড়িয়ে এই স্ট্যান্ট গুলো দখোনো হয়। চার পাচ জন কে বসিয়ে রেখে সাইকেল চালিয়ে তাদের উপর দিয়ে জাম্প করে চলে যাওয়াসহ প্রায় ৭০টিরও বেশী আকর্ষনীয়  কৌশল তারা দেখিয়ে থাকে। যার প্রতিটি মুহুর্তে আপনার হৃদপৃন্ড কাপপে সাথে থাকবে আনন্দ। শুধু শহরে নয় তারা ইতিমধ্যে এনায়েত পুরেও মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে নিজেদের খরচে গিয়ে এনায়েতপুরের সড়কে প্রদর্শন করেছে সাইকেল স্ট্যান্ট। বিকেল হলেই শহরের শহীদ এম মুনসুর আলী অডিটরিয়ামের ভিতেরের ফাকা স্থানে এক ঝাক শিশু-কিশোররা স্ট্যান্ট প্যাকটিস করে। প্যাকটিসের সময়ও ভীর জমায় জনতা। প্রথমে কয়েকজন থাকলেও এখন টিমের সদস্য ক্রমন্ময়ে বেড়েই চলেছে। তবে সবচেয়ে আর্শ্চযের কথা  হলো এই স্ট্যান্ট দলের কোন প্রশিক্ষক নেই । তারা নিজেরাই একে অপরের টা দেখে এবং  ইন্টার নেটে দেখে দেখে প্যাকটিস করে শিখেছে। আর এর প্রথম উদ্যেক্তাই নাঁিজব নিনাদ। সে একটি স্কলারশিপে অষ্ট্রেলিয়া গিয়েছিলো এবং সেখান থেকে এসেই সে এই স্ট্যান্ট শুরু করে। আর তার অনুপ্রেরনাতেই অনুপ্রাণিত হয়ে সবাই হয়ে উঠছে এক এক জন সাইকেল স্ট্যান্টার। এই টিমের প্যাকটিস করার মতো কোন যায়গা নেই। বর্তমানে তারা শহরের শহীদ এম মুনসুর আলী অডিটরিয়োমের মধ্যে প্যাকটিস করলেও তা অত্যান্ত ছোট হওয়ায় অনেক সমস্য হয় । এই প্যাকটিসের জন্য প্রয়োজন বড় যায়গার। এই টিমের জন্য প্রয়োজন পৃষ্টপোষকতার। যথাযথ নাসিং এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই টিম র‌্যাকলেস হতে পারে সিরাজগঞ্জের সুনাম বয়ে আনার জন্য একটি অনন্য  প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এই ধরনের ক্রীড়া নৈপুর্ন প্রদর্শনকারী সাইকেল স্ট্যান্ট দল নেই বললেই চলে। তাই টিম র‌্যাকলেস এর সদস্যদের দাবী অন্তত তাদের প্যাকটিসের জন্য একটি বড় স্থানের ব্যবস্থা যেন করে দেয় প্রশাসন। সিরাজগঞ্জে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের তেমন কোন যায়গা নেই। ফলে লেখা পড়ার অবসরে শিশুদের বিনোদনের যায়গা না থাকায় তারা বিভিন্ন স্থানে বসে আড্রা দিয়ে সময় নষ্ট করার পাশাপাশি নিজেরাও বিভিন্ন অপকর্ম এবং মাদকসেবনের সাথে জড়িয়ে যায়। কিন্তু এই টিম র‌্যাকলেসের সদস্যরা তার মুলমন্ত্রই বেছে নিয়েছে মাদককে না বলুন। তাই দরকার মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্থানে এই সাইকেল স্ট্যান্ট শো’র আয়োজন করা । যাতে স্ট্যান্ট দেখে অনুপ্রাণীত হয়ে সবাই এর দিকে ঝোকে এবং মাদক সেবন থেকে বিরত থাকে। এই দলটি শহরে ছোট ছোট অনেক প্রদর্শণী করলেও বৃহৎ আকারে এখন পর্যন্ত কোন প্রদর্শনী করে নি। সিরাজগঞ্জের একমাত্র শিশু-কিশোর সংগঠন নাট্য নিকেতনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রমজানের ঈদের পরে শহরের মধ্যে  নাট্য নিকেতনের  ব্যবস্থাপনায় টিম র‌্যাকলেসকে দিয়ে একটি বৃহৎ সাইকেল স্ট্যান্টশো করা হবে। টিম উদ্দমী, দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top