সকল মেনু

ভারতকে প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ

Parliament1433262303 সংসদ প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোকসভায় স্থল সীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ভারতকে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং জাতীয় সংসদের পক্ষে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ভারতের লোকসভায় স্থল সীমান্ত বিল পাস ও সে দেশের রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ভারতীয়দের ধন্যবাদ জানাতে সংসদে আনিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় কার্য দিবসের চীপ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সংসদে যে আইন পাস হয়েছে সে জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। যারা ভোট দিয়েছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এটা লক্ষ্যণীয় যে প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশের এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দল-মত নির্বিশেষে ভারতের সব সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশ সরকার, জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ধন্যবাদ জানাই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই সোনিয়া গান্ধী যিনি কংগ্রেসের সভাপতি তাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বিল পাস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে এই সংবাদ আমাকে জানান। পাশাপাশি আমি এই বিল পাস হওয়ায় সরাসরি নিজে মমতা ব্যানার্জি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে ফোন করি। তাদের মাধ্যমে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সুষমা স্বরাজকে ফোন করে বলি আমার পক্ষ থেকে বিজেপির সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এই সংসদের মাধ্যমে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে দেখা হলে আমি বলি আমাদের শত্রু একটা সেটা হচ্ছে দারিদ্র। এই অঞ্চলের মানুষ যারা দরিদ্র তাদের দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। এটা করতে গেলে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশকে আমরা দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধশীল দেখতে চাই। বর্তমান বিশ্বে এ কাজগুলো করতে গেলে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা দরকার। যে কারণে আমরা দ্বি-পাক্ষিক, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিকতার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই চলি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর গঙ্গা পানি চুক্তি করেছি। ৬২ হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী ছিল তাদের ফিরিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুঃসময়ে ভারত সব সময় পাশে থেকেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে। অস্ত্র দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে। যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। তাদের ওই সহযোগিতায় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলেই আমরা মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই বিজয় অর্জন করে স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতা দিয়েছেন তেমনি বাঙালির প্রতিটি সফলতার ক্ষেত্রে তৈরি করে গিয়েছিলেন। স্থল সীমানা চুক্তি সমুদ্র সীমা আইন সবই তিনি করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা সরকার গঠন করে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি দুই দেশের মধ্যে কোন সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শুধু চুক্তিই করে যাননি, সংবিধানে আইনও করে যান। বঙ্গবন্ধু আইন করে গিয়েছিলেন বলেই, আমাদের ভিতটা এতো শক্ত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাস্তবায়ন হয়ে যেত।

তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ভারত সফরের যাই। তখন চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এর সঙ্গে কথা বলি। এরপর ২০১১ সালে ৬ সেপ্টেম্বর মনমোহন সিং ঢাকা সফরে আসেন। সেই সফরে তিনি কথা দিয়েছিলেন সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন বিলটি লোকসভায় তুলবেন। সেই অনুযায়ী বিলটি লোকসভায় উত্থাপন করা হয়, এরপর রাজ্যসভায় পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা যে প্রোটোকল সই করি তারপরই কংগ্রেস বিলটা উত্থাপন করে রাজ্য সভায় পাঠায়। পরবর্তীতে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসে। আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হয় আমেরিকায় জাতিসংঘে। সেখানে তিনি কথা দিয়েছিলেন তিনি বিলটি পাস করে দেবেন। তিনি যে কথা দিয়েছিলেন তা রক্ষা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পার্লামেন্টে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পক্ষে আইন পাস করেছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে এই তিন বার ভোট দিয়ে আমাদেরকে নির্বাচিত করেছে। আমরা সরকার গঠন করেছি। এই সরকার গঠন করেছি বলেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ আমরা পেয়েছি। জনগণই সেই সুযোগ আমাদের দিয়েছে। সে জন্য জনগণের প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আলোচনায় অংশ নেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ এম মাহমুদ আলী, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মাইনউদ্দিন খান বাদল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, নুরুল ইসলাম সুজন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী, মো. মোতাহার হোসেন।

আলোচনা শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে ১৪৭ বিধি অনুসারে আনীত প্রস্তাব পাস হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top