ডাঃ জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় গত ১ সপ্তাহের ব্রক্ষপুত্র নদের ভাঙ্গনে ৮টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধের দু’পার্শ্বে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে হুমকীর মুখে রয়েছে ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ হাজার হাজার একর ফসলী জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ের মানুষ জন ভাঙ্গনের হাত থেকে ঘরবাড়ী সরাতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। ইতোমধ্যে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের টোনগ্রামের ২৫ টি পরিবার, ব্যাপারী পাড়ার ৫’শ পরিবার, হিন্দু পাড়ার ২৫টি পরিবার, মাষ্টার পাড়ার ১০টি পরিবার, মুদাফৎ থানার ৩’শটি পরিবার, বাসন্তী গ্রামের ১’শ পরিবার, জোড়গাছ বাজার এলাকার ৭০টি পরিবারসহ ঝালোপাড়ার ৫০টি পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বাধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে হিন্দু পাড়া ও ব্যাপারী পাড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে তীর রক্ষা বাধ থেকে প্রায় ১২০ ফিট দূরে ব্রক্ষপুত্র নদী অবস্থান করছে এবং প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় বাধের দিকে এগিয়ে আসছে।
হিন্দু পাড়া এলাকার ভূষন চন্দ্র বর্ম্মন(৬৫), উজ্জল চন্দ্র বর্ম্মন, সুভাসচন্দ্র বর্ম্মন, শান্তনা রাণী জানান, এ বাধটি ভাঙ্গলে তারা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবেন তা নিজেরাও জানেন না। এদিকে জোড়গাছ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নদী প্রায় ৭৫ ফিট দূরে অবস্থান করছে। ফলে ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে রয়েছে স্কুলটি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ নাছরিন আরা জানান, স্কুল ভবন দু’টি নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে থাকার বিষয়টি তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ হবিবুর রহমান জানান, চিলমারী উপজেলায় বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে এগিয়ে চলছিল। প্রতি বছর পিএসসি ফলাফল অত্যন্ত ভাল করছিল। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখা পড়া করছে। এমতাবস্থায় স্কুল ভবনটি ভেঙ্গে গেলে স্কুলকে কোথায় স্থানান্তরিত করবেন সে জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি হিন্দু পাড়া থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে গত এক সপ্তাহের নদী ভাঙ্গনে প্রায় ১২০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে টোন গ্রাম থেকে জোড়গাছ বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় হুমকীর মুখে রয়েছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি ও শতাধিক বসত ভিটা।
ভাঙ্গন কবলিত মানুষেরা জানান, এ পর্যন্ত তাদের পূর্ণবাসনে সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসায় তারা চরম হতাশায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গা পরিবার গুলোকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে তিনি জানিয়েছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান নদী ভাঙ্গনের কথা স্বীকার করে জানান, আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রিপোর্ট করতেছি। দুই একদিনের মধ্যে ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।