খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পড়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে টয়লেটের বিষক্রিয়ায় স্থানীয় ভোরের কাগজের প্রতিনিধিসহ তিন ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আরও দুই প্রতিবেশী অসুস্থ হন
মহালছড়ি উপজেলার মনারটেক এলাকায় রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃতরা হলেন-সাংবাদিক প্রদীপ শশী চাকমা (৪২), মেজো ভাই হেভেন্টু চাকমা (৩৫) ও ছোট ভাই উভেন্টু চাকমা (৩২)।
প্রত্যক্ষদর্শী বিনয় স্মৃতি চাকমা জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে উভেন্টু চাকমা বাড়ির পাশের টয়লেটে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। এ সময় হাত ফসকে তার মোবাইল ফোনটি টয়লেটে পড়ে যায়। তিনি মোবাইলটি উদ্ধার করার জন্য স্ল্যাপ উল্টে রশি বেয়ে নিচে নামলে বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ছোট ভাইয়ের আসতে দেরি দেখে অপর দুই ভাই টয়লেটে গিয়ে দেখেন তিনি অজ্ঞান হয়ে টয়লেটের নিচে পড়ে আছেন। ছোট ভাইকে উদ্ধার করতে প্রদীপ শশী চাকমা ও হেভেন্টু চাকমা টয়লেটের নিচে নামলে তারাও বিষক্রিয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিন ভাইকে উদ্ধার করতে গিয়ে রিপন চাকমা (২০) ও বাবলুক চাকমা (২২) নামে আরও দু’জন প্রতিবেশী গ্যাস বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হন। প্রতিবেশীরা তাদের পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তিন ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, তিন ভাইয়ের মৃত্যুতে শুধু পরিবারের নয়, গোটা এলাকার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিন ভাইয়ের লাশ পাশাপাশি দেখে মনে হচ্ছে তারা ঘুমাচ্ছেন। পাশে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তাদের বাবা সাধন মোহন চাকমা, মা সাধন প্রতি চাকমা, প্রদীপ শশী চাকমার স্ত্রী উজ্জ্বলা খীসা ও উভেন্টু চাকমার স্ত্রী অমৃতা চাকমা।
তিনি আরও জানান, প্রদীপ শশী চাকমা দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ে প্রবর্ব জিতা চাকমা স্থানীয় সিঙ্গিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। তার ছোট ভাই আর্জিভার চাকমা পড়েন সিঙ্গিনালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে। ছোট ভাই উভেন্টু চাকমার ছোট ছোট দুটি মেয়ে। বড় মেয়ে তুম্বাস চাকমার বয়স দুই বছর এবং ছোট মেয়ে ডায়না চাকমার বয়স দুই মাস। এ ছাড়া মেঝ ভাই হেভেন্টু চাকমার বিয়ের দিন ছিল ১২ আষাঢ়।
সাধন মোহন চাকমা বলেন, ‘আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তিন ছেলে ছিল আমার সংসারের উপার্জনের চালিকা শক্তি। তাদের অকাল মৃত্যুতে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।’
মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেমায়ুন কবীর চৌধুরী জানান, একটি মোবাইলের জন্য তিন তিনটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
মহালছড়ি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডাক্তার তানজিল ফরহাদ জানান, রাত সোয়া ১২টার দিকে পর পর পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে। তিনজন বহু আগে মারা গেছেন। হাসপাতালে আরও দু’জন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থা উন্নতির দিকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।