সকল মেনু

রাঙামাটি জেলা পরিষদের প্রথম নিয়োগেই অনিয়মের অভিযোগ

 indexইয়াছিন রানা সোহেল,রাঙামাটি: রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অষ্টম পরিষদের প্রথম নিয়োগেই অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫মার্চ জেলা পরিষদের অর্ন্তবর্তীকালিন পরিষদের অনুমোদন দিয়ে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছিল।  জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর রাজস্ব খাতভুক্ত নিয়োগে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তের পরিপন্থি প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টার প্রতিকার চেয়ে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। লংগদু উপজেলার দুইটি পদেই কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের দুইজন স্থায়ী বাসিন্দা এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ২১অক্টোবর জেলা পরিষদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জেলার কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল ও লংগদু উপজেলায় পরিবার কল্যান সহকারী(মহিলা) নয়টি শুন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী প্রার্থীকে ইউনিয়নের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী প্রার্থীকে অবশ্যই সাবেক কিংবা বর্তমান ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী হোসনে আরা বেগম ও ২নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী রুখসানা পারভিন উক্ত ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা নয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তাদের পিত্রালয় কিংবা শ্বশুর বাড়িও উক্ত ইউনিনেরও নয় বলে অভিযোগে জানা যায়।
১নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী হোসনে আরা বেগম স্বামী ইকবাল হোসেন ভুইয়া কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উল্লেখ করেন। আর ২নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী রুখসানা পারভিন পিতা মৃত জয়নাল আবেদীন একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। অথচ তারা দুইজনের কেউই কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা নয় বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরাই জানান।
কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ান জানান, হোসনে আরা বেগম কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা নয়। আর রুখসানা পারভিনের বাবার বাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ২নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী হোসনে আরা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন ভুইয়া গুলশাখালী ইউনিয়নের কাকপাড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। আর হোসনে আরার বাবা খোরশেদ আলমের বাড়ি বগাচত্বর ইউনিয়নের গাউসপুর গ্রামে।
গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মিলন জানান, ইকবাল হোসেন ভুইয়া গুলশাখালীর স্থায়ী বাসিন্দা এবং তার শ্বশুর বাড়ি বগাচত্বর ইউনিয়নের গাউসপুর গ্রামে।
এদিকে ১নং ওয়ার্ডে আবেদনকারী রুখসানা আকতারের দাখিলকৃত জন্মনিবন্ধনের তারিখ ও ইস্যুর তারিখ রয়েছে গতবছরের ২১নভেম্বর। অথচ আবেদনের শেষ তারিখই ছিলো একই বছরের ১৩নভেম্বর। কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ভোটার তালিকায়ও তার নাম নেই। তবে ভোটার তালিকায় ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর রহমতপুর গ্রামে তার মা বিলকিছ নাহার ও ছোট বোন শিউলি আকতারের নাম রয়েছে। তার আবেদনে স্বামীর নাম তোফাইল আহম্মেদ উল্লেখ থাকলেও এই নামের কাউকেই চিনছেন না এলাকাবাসী কিংবা জনপ্রতিনিধি কেউই।
কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেহেনা আকতার জানান, রুখসানা নামে তার তিনটি ওয়ার্ডে কোনো ভোটার নেই। তোফাইল আহম্মেদ কিংবা তার স্ত্রী কোনো নামেও কোনো ভোটারই নেই।
আবেদনকারী স্থায়ী বাসিন্দা নয় এমন অভিযোগে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ১নং ওয়ার্ডের প্রার্থী নারগিছ আকতার ও ২নং ওয়ার্ডের প্রার্থী শাকিলা আকতার।
বিষয়টি তদন্তের জন্য লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিদের্শ দেন চেয়ারম্যান। এদিকে গত ১মে শুক্রবার উক্ত বিষয়ের তদন্তে যান উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ এলাহী। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের ফোনে জানিয়ে সরেজমিনে তদন্তে গিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি করেই তিনি তদন্ত শেষ করেই বিদায় নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মোঃ এলাহী জানান, কাগজে-কলমে ও উপস্থিত জনপ্রতিধিদের কাছ থেকে যা পেয়েছি সে অনুযায়ী তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তদন্তে তিনি অভিযোগ সত্য পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন বারবার তিনি এড়িয়ে যান। তদন্তের সময় উপস্থিত সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য রেহেনা আকতার  জানান,
“তদন্তের সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। এখানে রুখসানা আকতার কিংবা হোসনে আরা নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়েছে তারা। তাদের কাগজপত্রে যথেষ্ট গরমিল ছিলো।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর নিয়োগটি স্থগিত রাখার জন্য উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত করার পরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top