ত্রিশ লক্ষ শহীদ’দের রক্তে কেনা স্বাধীনতা, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমেহানীর মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজের বাংলাদেশে সাম্প্রতিক’কালে এক হেফাজতে ইসলাম নামের কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। তখন প্রকাশ্যে তেমন কেউ টু-শব্দ না করলেও ভিতরে ভিতরে নানান কথার ফুলঝুড়ি হয়েছে, আলোচনা আর সমালোচনার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে তাদেও মূল উদ্দেশ্য।
সে সময়ে সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এক ধরনের আতংকে সময় পার করেছে। নানান ধরনের অজানা ভয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। আর মনে মনে ভেবেছে, আমরা বুঝি সেই সময়কার আমলে পা ফেলছি, যাচ্ছি কোনো এক বর্বর অন্ধকার ভূবনে।
রচিত হলো ৫ মে’র হেফাজতে ইসলামের এক কালো অধ্যায়। চারপাশে আগুন আর আগুন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাস্তার পাশে যাদের ব্যবসা-বানিজ্যের শেষ সম্বলটুকু ছিল সেগুলোরও যেন নিস্তার নেই। রেহায় পায়নি শহরের সৌদর্য্য বর্ধনকারী ও মানব জীবনের জন্য অক্সিজেন প্রদানকারী অসহায় বৃক্ষগুলোও। অ™ভূধ ছিলো অবস্থান, অসহায় ছিলো সাধারণ জনগণ।
যে জিনিস রক্ষার নামে এই ভয়াবহতা, যে জিনিসকে সমুন্নত রাখার এই আন্দোলন সে ধর্মগ্রন্থ্য পবিত্র কোরআন শরীফও তাদের হিংস্র থাবা থেকে রেহায় পায়নি। এখানে আগুন, সেখানে আগুন, পবিত্র কোরআন শরীফে আগুন, আগুনের ফুলকি সর্বত্রে।
বাঙ্গালি জাতি অবাক দৃষ্টি নিয়ে অবলোকন করেছে এ কালো অধ্যায়ের নির্মম তান্ডবলিলা। বিস্ময় হয়ে দেখেছে সমগ্র বিশ্ব। আর হয়’ত ভেবেছে, এই বুঝি সোনার বাংলার সোনার মানুষ(!) যারা কিনা মানুষে মানুষে ভাই ভাই আর ধর্মে ধর্মে বন্ধুত্ব আছে বলে নিজেদেরকে বিশ্ববাসীর কাছে দাবী করে, দাবী করে অসাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশ।
এমনটা ভাবলে মন্দ বলাও মন্দ কাজ। নীল আকাশে কালো মেঘের আনাঘোনা দেখে অনেকের অনেক কিছু মনে করাটা অতি স্বাভাবিক। কৃষক তার রৌদ্রে দেয়া ধান গোছানোর কাজে ব্যস্থ হওয়াটাও মন্দ নয়। তবে বুঝতে সক্ষম, মাথার উপর আকাশ যখন তার নিজেস্ব নীলাবণ্য রং ফরে পায়।
আর তখনই মনের অজান্তে গড় গড় করে বলতে থাকে, আমার ভাবনাগুলো ভুল ছিলো। শুধু শুধু ভোঁদৌড়…
এনিয়ে বিনিয়ে না লিখে সোজাসোজি চলে যাই হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে। অনেক দিন ধরেই ভাবছি, সমসাময়িক’কালের এলোমেলো দিকগুলো সাজিয়েগুছিয়ে লিখবো। শুরু করি, হেফাজতের জন্ম কাহিনী দিয়ে।
২০১০ সালের ১৯ শে মার্চের কথা। মূল উদ্দেশ্যটা না জানলেও হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনূল ইসলাম এর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেব এবং তার সহযোগীরা মিলেমিশে ‘হেফাজতে ইসলাম’ গঠন করার নেপথ্যের কাহিনী জানা যায়।
অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন বাস্তাবায়নের কথা শোনা গেলেও তাদের বাস্তবায়ন কতটুকু তা এ জাতি অবলোকন করেছে বেশ ভালো ভাবে।
অনেকে আবার হেফাজতে ইসলাম গঠন কেও নকল বা দু’নম্বর গঠন বলে মনে করেন। তারও যৌক্তিকতা প্রতিয়মান।
একটু পিচনের দিকে ফিরে তাকালে বেড়িয়ে আসে প্রায় ৬০ বছর আগে সিলেটের মৌলভিবাজারের বরুণার পীর শেখ লূৎফর রহমান সাহেবে কথা। শেখ লূৎফর রহমান সাহেব মূলত ‘হেফাজতে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। তাই আদি ও আসল ‘হেফাজতে ইসলাম’ এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সিলেটের মৌলভিবাজারের বরুণা পীর শেখ লুৎফর রহমান সাহেবের নাম চলে আসে। যার একটি শাখা আবার পাকিস্তানেও আছে।
বর্তমানে সেই বরুণা পীর শেখ লুৎফর রহমান সাহেবের আদি ও আসল ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর প্রধান হচ্ছেন বরুণার গদ্দিনশির পীর খলিলুর রহমান সাহেব।
জানা যায়, মূল হেফাজতে ইসলাম অর্থাৎ প্রায় ৬০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সিলেট মৌলভিবাজারের বরুণা পীর শেখ লুৎফর রহমান সাহেবের প্রতিষ্ঠিত ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর সাথে ১০’সালের ১৯ মার্চে প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেব ও তার সহযোগীদের ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর তেমন কোন সম্পর্ক নেই, নেই নৈতিক ও আদর্শ গত মিলও।
সত্য সব সময় একটিগুষ্টিকে তিক্ত স্বাধ দিয়ে থাকে যা তাদের প্রত্যাশার বাইরে।
একজনের সুন্দর ও সৃজনশীল স্বপ্নের গড়া সংগঠনের সুনাম ও সাফল্য কেউ যদি আত্মসাৎ বা চুড়ি করার হীন মানসিকতা বাস্তবায়ন করার চেষ্ঠা করে, ইসলামে তার শাস্তি কতটুকু বা কি ধরনের তা হাটহাজারীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেব অবশ্যই ভালো জ্ঞান রাখেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো তথা আইন বিভাগ জালিয়াতির অভিযোগে অভিযোগকারীর পাশে দেওয়ানী ও ফৌজদারি দুই ধরনের মামলাতেই সহযোগীতা করতে পারেন বলে উল্লেখ্যিত।
আর এ নিয়ে সহজ সরল মানুষের মন্দ প্রশ্ন কে মন্দ ভাবে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ এই সহজ সরল মানুষের আবেগ অনুভূতি নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নোংরা মানসিকতা বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় থাকে।
৫ মে’র হাটহাজারীর ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নেতাকর্মীদের তান্ডবলীলা দেখে সকল বয়সের মানুষ শুধু অবাকই হয়নি বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাধারন মানুষ উত্তর খোজতে শুরু করে, ইসলামের হেফাজতকারী কে (?) বা কিভাবে শান্তির ধর্ম ইসলামকে রক্ষা করা যায়। আরও জানতে চায়, কেন ইসলামকে রক্ষা করতে হবে (?) আজ যেখানে মুসুল্লিারা সকল নিরাপত্তার সহিত ইসলামকে পালন করতে পারছে সেখানে এই মুহুর্তে কেন এই পায়তারা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সহজ সরল ভাষায় বলতে হয়, স্বাধীনতাবিরোধীদের মিথ্যাচার আর মানুষে মানুষে বিতর্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্ঠা।
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমিই কুরআন অবর্তীণ করিয়াছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক’। (সুরাঃ হিজ্ব, আয়াত-৯)
আবার এ দিকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত স্বনামধন্য আলেম সমাজ বিভিন্ন ভাবে বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে কোনো সংগঠন প্রতিষ্ঠা মানে স্বয়ং আল্লাহ্’র উপর খবরদারীর শামিল।
হাটহাজারীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেব’দের ‘হেফাজতে ইসলাম’ বরাবরই বলে আসছে, তারা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের নয়, নেই তাদের রাজনৈতিক সংগঠনের মত কোনো অভিলাষ।
সিলেট মৌলভিবাজারের বরুণার পীর শেখ লূৎফর রহমান সাহেবের আদি ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নেতারাও শুরু থেকেই নিজেদেরকে সকল রাজনীতি মুক্ত রেখে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত রেখেছেন। তবে পর্যবেক্ষণে বেড়িয়ে আসে, হাটহাজারীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেবদের ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নেতারা যে ভাষায় বক্তব্য ও হুমকি-ধামকি দিয়েছে তা অন্য সব নোংরা রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও হার মানিয়েছে।
রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই ভালো কথা তবে সরকার উৎখাত করার উচ্চাভিলাষ আজ সাদা-কালো’র মত পরিস্কার।
তারা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, নেই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের যোগসুত্র। এটি হাটহাজারীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ও তার নেতাদের ‘হেফাজতে ইসলাম’ এর দাবী।
কিন্তু সকল মিডিয়ার অনুসন্ধানী তথ্য, মোবাইলের কথপোথন এবং সর্বপরি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগের অবস্থান কিন্তু অন্য কথা বলে।
অনেকেই আবার দাবী করে থাকেন জামায়াত ইসলাম এর উল্টো নাম হাটহাজারীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সাহেবের ‘হেফাজতে ইসলাম’।
যদিও তারও কিছু কারণ রয়েছে যেমন ১৩ দফার প্রধান দাবী হচ্ছে আল্লাহ্, রাসুল (সাঃ) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন অর্থাৎ ‘ব্লাশফেমি আইন’ পাশ করতে হবে।
১৯৯৩ সালে জাতীয় সংসদে এই একই দাবী উপস্থাপন করে একটি বিল জমা দিয়েছিলেন বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাগারে অবস্থান করছে) যা তৎকালিন সরকার বিএনপি তা গ্রহণ করেনি।
তার ঠিক কিছুদিন আগের কথা। ১৯৯২ সালের নভেম্বরের সময়।
জামায়াত ইসলাম কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণার দাবীতে বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ, পাঠাগার, দফতর ধ্বংস করেছিল। যদিও জামায়াত ইসলাম বরাবরই কোণঠাসা অবস্থায় ‘কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণা’ বা ‘ব্লাশফেমি আইন পাশ’ করার কথা বলে নানামুখী ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে।
আবার তখনকার প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি, বক্তব্য এবং খালেদা জিয়া কর্তৃক অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের পাশে দলের নেতাকর্মীদের থাকার আহবান কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলের সাথে যোগসুত্র নেই বলে প্রতিয়মান নয়।
নানান বিতর্কের নানান কথা, উড়বে সে’ত যথাতথা। থাক সে বিতর্ক, সোজা ও সহজ-সরল পথে থাকার চেষ্ঠা করি।
আমি মনেকরি, যে কোনো সভ্য দেশের সংবিধানে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে এখনও প্রায় ২/৩ কোটি মানুষ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, আধিবাসী ও নৃগোষ্ঠী বসবাস করছে, যাদের সৃষ্টি কোনো মানুষের হাতে নয়।
আবার জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার ঘোষনা এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অন্য ধর্মের মানুষকে ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করার জোড়-জবরদস্তি কেউ করতে পারে না।
আবার ইসলাম কি বলে (?), পবিত্র কোরআন এ আল্লাহ্ আল্লাহ্’র রাসুল (সাঃ) কে বলেছেন, ‘আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য?’ (সুরা-ইউনূস, আয়াত-৯৯)
মহান আল্লাহ্ আরও বলেন, ‘যাহারা দীন (ইসলাম) সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করিয়াছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে তাহাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাহাদের বিষয় আল্লাহ্ এখতিয়ারভুক্ত।’ (সুরা-আন’আম, আয়াত-১৫৯)
হাদিসে বলা আছে- আবু হুয়ারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইহুদীরা একাত্তর অথবা বাহাত্তর ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল এবং খৃষ্টানরাও অনুরূপ সংখ্যক ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর ফেরকায় (দলে)’। (জামে আত-তিরমিযী, চতুর্থ খন্ড, পৃঃ-৩৯৪)
মহান আল্লাহ্’র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের জন্য জোড়-জবরদস্তি করা মানে ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।
আর এ বাড়াবাড়ির ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) বিদায়ী হজ্জে বলেছেন, ‘সাবধান ! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না। এই বাড়াবাড়ির ফলেই অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে। নিশ্চয় জানিও, আমার পর আর কোন ওহী আসিবে না’। (মসজিদে নামেরা, আরাফাত ময়দান, মসজিদে খাইফ, মিনা, ১০ হিজরী সন, ৬৩২ ইংরেজী)
আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ও তার সহযোগীরা ইসলামের রিতিনীতি-বিধিবিধানের ব্যাপারে অবশ্যই অনেক ভালো জ্ঞান রাখেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু কতটুকু মানেন বা আদৌ ইসলাম প্রচারে কতখানী যত্মবান এ নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে সাধারন প্রশ্নের বলাবলি।
সেই কালো অধ্যায়ের সময় পবিত্র কোরআন শরীফ এ আগুন দেয়ার দৃশ্য দেখে পুরো জাতি অত্যান্ত মর্মাহত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের এই ভাবে ইসলাম প্রচার নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও হেফাজতে ইসলাম এ তান্ডবলীলার জন্য অন্য কাউকে দায়ী করেছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধকালীন পরবর্তি সময়ে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক স্বার্থেন্বেষী মহল আগুনে জ্বল ঢালার পরিবর্তে আগুন জ্বালাতে সাহার্য্য করেছে এবং আজও বিদ্যমান।
মাতৃভূমি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের সাথে একাকার হয়ে মানুষ, মানবতা ও মানবপ্রেমকে গৃহবন্ধি করে রেখেছে, রাখছে। যা জাতির জন্য সত্যিই দুঃখ জনক।
থাক সে কথা, আবারও সরল পথে আসার চেষ্টা করি। উদ্দেশ্যই যদি হয় ধূসর, জমবে না ভালো আসর।
আমরা কথায় কথায় পশ্চিমাদের সকল দোষের দোষী করি। অথচ এই পশ্চিমাদের অনেক কিছুই আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।
আর এই ব্লাশফেমিও কিন্তু পশ্চিমাদের। ব্লাশফেমির বিধান এসেছে ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্ম থেকে। বাস্তবতা পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অনেক আগেই ব্লাশফেমি হতে নিজেদের মুক্ত করেছে পশ্চিমারা। আজ পশ্চিমা বিশ্বে কোথাও ব্লাশফেমির প্রয়োগ নেই।
বর্তমানে পাকিস্তানের দিকে ফিরে তাকালে খুব ভালো অবস্থান বিড়াজ করছে বলে মনে হয় না।
মৌলবাদগুষ্টি একে পর এক আত্মঘাতি বোমা হামলা করে শত শত সাধারণ জনগণকে দিনের পর দিন প্রাণহানী করছে। হাজার হাজার সাধারণ নিরস্ত্র মানুষকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছে। আর এই ব্লাশফেমি আইনের বিরোধীতা করতে গিয়ে ২০১১ সালে প্রাণ দিতে হয়েছে পাঞ্জাবের গভর্ণর সালমান তাসির ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে।
যেখানে ব্লাশফেমির এই অন্ধকার জগৎ থেকে স্বয়ং পাকিস্তান বেড়িয়ে আসতে চেষ্টা করছে সেখানে ব্লাশফেমি আইনের মাধ্যমে আমাদের সোনার বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের নামান্তরই বটে।
আল্লাহ্ সব মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বহু বাংলা তরজমা ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র থেকে তফসির সহ প্রকাশিত হয়েছে।
আসুন, আমরা কোরআন ও হাদিস পড়ি এবং ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হই। ইসলাম বরাবরই শান্তির ধর্ম, জ্ঞান আহরণের ধর্ম এবং ভিন্ন ধর্মের সাথে সহ অবস্থানের ধর্ম।
আমি আশাবাদী, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আমাদের দেশের সকল স্বনামধন্য আলেম সমাজ ঐক্যবন্ধ ভাবে শান্তির পথে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। শান্তির ধর্ম ইসলামকে অশান্তিতে কোনও মানুষের উপর জোড়-জবরদস্তি হতে নিজেদের বিরত রাখবে। পবিত্র কোরআন শরীফ ও হাদিসের আলোকে সঠিক ও সুন্দর দীক্ষায় সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ, মানবতাকে আলোয় আলোকিত করে গড়ে তুলবে।
প্রার্থনা করি, পুরাতন-নতুন ষড়যন্ত্রকারীদের নোংরা থাবা থেকে ইসলাম ও বনি আদমকে মহান আল্লাহ্ যেন হেফাজত করেন।
লেখক
কবীর চৌধুরী তন্ময়
সাংবাদিক কলামিষ্ট
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।