সকল মেনু

স্বাস্থ্য সেবার জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

 timthumb.php গাজীপুর প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নার্সিং একটি মহৎ ও শ্রেষ্ঠ পেশা। এ পেশাকে আমি অত্যন্ত সম্মান করি। একজন রোগী ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়। কিন্ত একজন নার্স বা সেবিকা তার হাতের স্পর্শ, তার একটু সেবাযত্ন দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলে। মনে প্রশান্তি এনে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী নিজে আজ বুধবার থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের একটু অসুখ-বিসুখ হলে সবাই মনে করে বিদেশ যেতে হবে। এ ব্যাপারটায় আমার অনিহা। কেন বিদেশে যেতে হবে? আমাদের দেশে কেন আন্তজার্তিক মানের হাসপাতাল গড়ে উঠবে না? আমি প্রথম যখন সরকারে আসি, হাসপাতালের যত রকম ইকুয়েপমেন্ট প্রয়োজন ছিল, সেগুলো থেকে আমরা ট্যাক্স কমিয়ে দেই। আর বাচ্চাদের ইকুয়েপমেন্টতো একেবারে ট্যাক্স ফ্রি করে দেই। যাতে করে আমাদের দেশে সরকারি খাতে বেশি করে হাসপাতাল গড়ে ওঠে। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে যাতে আরো বেশি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারেও যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাস্থ্য সেবার জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি। বিশেষ করে বিশেষায়িত হাসপাতাল আমাদের আগে ছিলই না। আমরা চাই আমাদের দেশে আরো আন্তজার্তিক মানসম্পন্ন
হাসপাতাল গড়ে উঠুক। মানুষ সেবা পাক। আর বিদেশ যাওয়া নয়।’

বুধবার সকালে গাজীপুরে কাশিমপুরের সারাবোর তেতুইবাড়ি এলাকায় নার্সিং কলেজ চত্বরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার কেপিজের প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রেষ্ঠ ১০জন নার্সকে মালয়েশিয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি আরো দশ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার সিদ্বান্তের কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই হাসপাতাল করার একটাই উদ্দেশ্য- এই অঞ্চলে অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে। এখানে অনেক মেয়েরা, শ্রমিকরা কাজ করে। কিন্ত কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের চিকিৎসার তেমন কোনো সুযোগ এ অঞ্চলে নেই। পাশাপাশি এখানকার রাস্তায় চলাচলের সময় এক্সিডেন্ট হয়। সেখানেও চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। সে কথা বিবেচনা করে এ হাসপাতালটি করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট মা-বাবাসহ পরিবারের প্রায় ১৬ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে যে সম্পতি আমার পেয়েছি- যেহেতু আমার বাবা জনগণের ছিলেন, জনগণের সেবা করেছেন। কাজেই আমরা সে সম্পত্তি জনগণের জন্য দান করেছি। একটা ট্রাস্ট করেছি। এ ট্রাস্ট থেকে প্রায় সতেরশ ছাত্র-ছাত্রীকে লেখাপড়ার জন্য সহযোগিতা করে থাকি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের ট্রাস্টের মাধ্যমে চিকিৎসা ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। অসহায় দরিদ্রদের সাহায্য করা জন্য অনুদান দেওয়া হয়। ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যে জনশক্তি রয়েছে তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত করে তুলতে চাই। এবং একই সঙ্গে সেবাটাও জনগণের দোরগোড়ার পৌঁছে দিতে চাই। চিকিৎসা সেবা নিয়ে মানুষ সুস্থ হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতীকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। এত ভালবাসতেন সন্তান হিসেবে বলতে পারি আমাদের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন বাংলার মানুষকে, বিশেষ করে দুঃখী মানুষকে। তাদের কথা বলতে গিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। আর আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এবং সর্ব ক্ষেত্রে আমার বাবার পাশে থেকেছেন, সহযোগিতা করেছেন।’

‘বঙ্গবন্ধু যখন জেলে থাকতেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখা এবং প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ জাতির পিতা গড়ে তুলছেন। সেসময় আমাদের মা-বেনেরা যে নির্যাতিত ছিল, তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তার-নার্স এনে নির্যাতিত মা বোনদের চিকিৎসক ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। দিনের পর দিন যারা আলবদর রাজাকার, পাকিস্থানী হানাদারদের হাতে নির্যাতিত ছিল তাদের সমাজে একটা অবস্থান করে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তাদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, আমার মা উদ্যোগ নিয়ে তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সব সময় মানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হল চিকিৎসা সেবা মানুষের ঘরের কাছে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য ইতিমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। বঙ্গবন্ধু সব সময় গ্রামের গরিব মানুষের কথা বলতেন-ভাবতেন। তাদের জীবনটা কিভাবে সুন্দর করবেন সে চিন্তায় সবসময় করতেন। আমাদের সংবিধানে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোড়গোরায় পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ্য আছে। সে কথা বিবেচনা করেই কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা। সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। যার ফলে আজকে মাতৃমৃত্যু হার, শিশু মৃত্যুহার কমেছে, অপুষ্টি কমেছে, চিকিৎসা সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক শিশু বা অটিস্টিক যারা তাদের সেবার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। ভাতা দিচ্ছি। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যইতো মানবতার সেবা করা।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর  রহমানের সভাতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী  আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, প্রকল্প পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক  সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, মালয়েশিয়া কেপিজে হেলথ কেয়ার বার্হাডের প্রেসিডেন্ট তুয়ান হাজি আমির উদ্দিন আব্দুল সাত্তার প্রমুখ।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বক্তব্য রাখেন বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন জয়েন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top