মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: অবশেষে প্রত্যাশিত বৃষ্টি চৈত্রের চৌচির মাঠে জিয়নস্পর্শ হয়ে নেমেছে। এ বৃষ্টির জন্য আহাজারি চলছিলো গত পক্ষকাল যাবত। চৈত্রের প্রলম্বিত খরায় মৌলভীবাজার জেলার হাওর সমতলের ইরিবোরো মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছিলো। বৃষ্টির অভাবে ধানের থোর থেকে শীষ বের হচ্ছিলো না অনেক এলাকায়। বৃষ্টির জন্য কৃষক মহল মানত এবং প্রার্থনার আয়োজন করেছিলেন স্থানে স্থানে। অতঃপর বুধবার মধ্যরাতে দু’পশলা বৃষ্টি হলেও ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে চা শিল্পাঞ্চল খ্যাত মৌলভীবাজার এলাকায়। স্বস্তির বৃষ্টি নামায় এ বৃষ্টিকে কৃষকরা “সোনা মেঘ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিভিন্ন চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মার্চের শুরু থেকে চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। চায়ের কুঁড়ি গজানোর জন্য ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও প্রচুর বৃষ্টির পানির দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ফেব্র“য়ারি মাসে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয়। শ্রীমঙ্গল জেরিন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বলেন, ‘বৃষ্টি না হওযায় এখনও চায়ের কুঁড়ি গজায়নি। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী চারা গাছসহ বয়স্ক অনেক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। মার্চের শুরুতেই কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু করার কথা। কিন্তু তা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তিনি আরও জানান, তীব্র খরায় রেড স্পাইডারের (লাল মাকড়াসা) আক্রমণেরও শঙ্কা থাকে। এই মাকড়সা চা-গাছের জীবনচক্র নষ্ট করে দেয়। শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানি সিলেট জোনের জিএম শিবলী আহমদ বলেন, ‘গত বছরের ১১ মার্চ থেকে বাগানে চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়েছিল। বৃষ্টির অভাবে কুঁড়ি গজানো এখনও শুরু হয়নি। গত ২১ ফেব্র“য়ারি রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চায়ের কুঁড়ি গজানোর জন্য শুভ লক্ষণ হিসেবে ওই বৃষ্টিকে গোল্ডেন রেইন (সোনালি বৃষ্টি) মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া বাগানের পুকুর-কুয়াতে পানি নেই। ফলে সেচসুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে না।’ জুড়ীর ফুলতলা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আফজাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এ পর্যন্ত মাত্র ছয় মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কুঁড়ি গজানোর জন্য ২০-২৫ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। ভ্যালির আওতাধীন কোনও বাগানেই এখনো কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়নি। এ কারণে সব বাগানেই গত বছরের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করে উৎপাদন কম হবে।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক মাইনুউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও ফেব্র“য়ারি মাসে বৃষ্টি হতো। এপ্রিলে বৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন। বৃষ্টি না হলে চায়ের কুঁড়ি গজাবে না। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘সাধারণত ফেব্র“য়ারি-মার্চ থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। গত ফেব্র“য়ারি মাসে জেলায় দুই দিনে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরে এই অঞ্চলে ২৩০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।’
বৃহস্পতিবারের দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার সব ক’টি চা বাগানে আগামি দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পাতা চয়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন চা বাগান সংশ্লিষ্ট লোকজন। এ প্রভাব পরবে কৃষিতেও।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।