সকল মেনু

বেনাপোলে আটকে গেছে শতশত কোটি টাকার আমদানি করা গাড়ি

বেনাপোল থেকে ফিরে,যশোর প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: টানা হরতাল-অবরোধের কারনে দেশের প্রধানস্থল বন্দর বেনাপোলে ২ হাজার ১৬৯টি আমদানি করা গাড়ি খালাসের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে। শত শত কোটি টাকার এ সব গাড়ী বন্দরে পড়ে থাকায় সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওনা আটকে গেছে বলে শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিএনপি’র ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় গাড়ি ছাড় করাতে পারছেন না আমদানিকারকরা। গাড়িগুলো দুই থেকে ছয় মাসের বেশী সময় ধরে বন্দরের শেডে পড়ে থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক রাখার স্থানে আমদানি করা গাড়িগুলো ফেলে রাখায় স্থান সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে শুল্ককর্তৃপক্ষ বলছেন, গাড়িগুলো ছাড় করাতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেওয়া হলেও তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ কারণে গাড়িগুলো ছাড় করে নেওয়ার জন্য চলতি মাসে তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এদিকে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক রাখার টার্মিনালে গাড়িগুলো ফেলে রাখায় ট্রাক রাখার স্থান সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। গাড়িগুলো দুই থেকে ছয় মাসের বেশী সময় ধরে ওখানে পড়ে থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে তীব্র পণ্যজট। বেনাপোল শুল্কভবনের সহকারী কমিশনার অনুপম চাকমা বলেন, ‘গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে চিঠি দিয়ে গাড়ি ছাড় করানোর জন্য বলার নিয়ম। এতে সাড়া পাওয়া না গেলে তা নিলামে ওঠানো হবে। গাড়িগুলো দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি করে এনেছেন। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদেরকে দুই মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার  তাগাদাপত্র দেওয়া সত্বেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে জবাব না পেয়ে বাধ্য হয়ে শোকজ করা হয়েছে। এর পরও তারা গাড়ি খালাস না করলে তা নিলামে ওঠানো হবে। বেনাপোল শুল্কভবনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২৩ হাজার ৮৯৭টি। এর মধ্যে খালাস হয়েছে ২৩ হাজার ২৬৭টি। আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ১৬৭টি। খালাস হয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৭টি। এ দুই অর্থবছরে মোট এক হাজার গাড়িসহ আগের থাকা ১ হাজার ১৬৯টি মিলে মোট ২ হাজার ১৬৯টি গাড়ি বর্তমানে বন্দরের শেডে পড়ে রয়েছে। বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ির আমদানিকারকরা হচ্ছেন-নিটল গ্রুপ, র‌্যাংগস মোটরস, উত্তরা মোটরসসহ চট্টগ্রামের কিছু প্রতিষ্ঠান। আমদানি করা গাড়ির মধ্যে ট্রাক, পিকআপ ও  প্রাইভেটকার রয়েছে। নিটল গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম রব্বানি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি বেনাপোল থেকে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। আবার নিয়ে এলেও বিক্রি হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে গাড়ি ছাড় করানো হচ্ছে।’ র‌্যাংগস মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার সত্যজিৎ সাহা বেনাপোল শুল্কভবনে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ‘গাড়ি ছাড় করানোর দিন থেকে আমাদের ব্যাংক সুদ দিতে হয়। ছাড় করানোর পরে যদি গাড়ি বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।’ তাই চিঠির মাধ্যমে তিনি আরও সময় চান। বেনাপোল শুল্কভবনের যুগ্ম-কমিশনার আতিকুর রহমান বলেন,‘২০১৩ সালের ১৮ মে বেনাপোলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন পড়ে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য নিলামে তোলার। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিয়ে চলতি মাসের মধ্যে গাড়ি ছাড় করাতে বলা হয়েছে। তা না করলে আগামী মাসের প্রথম দিকে নিলাম আহ্বান করা হবে। এর ফলে সরকারও লাভবান হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top