সকল মেনু

রংপুরে মাঠ ছেড়ে আত্মগোপনে বিএনপি, আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে নাশকতায় জামায়াত-শিবির

রংপুরইকবাল হোসেন, রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরে সরকার পতনের আন্দোলনে আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না বিএনপিনেতাকর্মীদের। তারা এখন গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িতে থাকছে না।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনের দাবিতে টানা অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে। হরতাল আর অবরোধের নামে জামায়াত-শিবির রংপুরের মিঠাপুকুর, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর রানীরবন্দর, নীলফামারীর জলঢাকা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়িতে নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা যাত্রীবাহি বাস ও ট্রাকে পেট্রোল বোমা মেরে এক মাসে ২০ জনকে পুড়িযে মেরেছে। এসব ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি।  জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ওইসব এলাকায় বার বার এসব সহিংস ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ সহিংস ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধা জেলায় ৬ ফেব্রয়ারি শুক্রবার রাতে। সেখানে বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ৮ জনকে। এ বোমা হামলায় জামায়াতকর্মী মোস্তফা মঞ্জিল, আবদুর রহমানসহ জামায়াত-শিবিরের ৪০-৫০ জনের একটিদল অংশ নিয়েছিল বলে গ্রেফতারকৃত বোমা হামলার এক নম্বর আসামী শিবির কর্মী তাসকিনুল ইসলাম স্বপন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে এসব জানিয়েছেন। এরপরদিন শনিবার দুটি সার বোঝাই ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতো নিরাপত্তার মধ্যেও কেন এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে সাধারন মানুষকে। এরআগে জামায়াত-শিবির রংপুরের মিঠাপুকরে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করা হয় ৮ জনকে। এছাড়া দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারীতেও জামায়াত-শিবির নাশকতা চালিয়ে ৪ সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় ৬০ জনেরও বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাই পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার কথা স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষনে উঠে এসেছে যে সব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটছে সেসব এলাকা জামায়াত শিবির অধ্যুষিত এলাকা। তারা আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে এসব নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, রংপুরের মিঠাপুকুর জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। জাতীয় সংসদ ও  উপজেলা নির্বাচনে এসব স্থানে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচনের পর গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, জাসদ নেতা সাংবাদিক নুরুজ্জামান প্রধানসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের অনেক নেতাকর্মীর বসতবাড়ি প্রকাশ্যে দিবালোকে মিছিল করে এসে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি এবং ব্যক্তিগত গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ওই সময়। সুত্রটি জানায়, শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা-ঢাকা মহাসড়কে তুলশিঘাট এলাকায় বাসে পেট্রোল বোমা মেরে ৮ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। এরপরদিন পলাশবাড়ি এলাকায়  আরো দুটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতো নিরাপত্তার মধ্যেই জামায়াত-শিবির এসব নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। পলাশবাড়ি উপজেলা জাসদের সভাপতি নুরুজ্জামান প্রধান জানান, পলাশবাড়ি উপজেলা হচ্ছে মহাসড়কের উপর। এ উপজেলা হচ্ছে সাদুলাহপুর, রংপুরের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, গোবিন্দগঞ্জ এবং সুন্দরগঞ্জ সীমান্ত। তাই জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে রাতের বেলায় যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে।

পলাশবাড়ি থানায় অন্তত ৩০ টি মামলা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। তাদের গ্রেফতার অভিযানে যাবার আগে অভিযানের খবর ফাঁস হয়ে যায়।

এদিকে, নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য জামায়াত-শিবির রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় তান্ডব চালায়। সর্বশেষ তান্ডব চালায় গত ১৩ জানুয়ারী। তারা  যাত্রীবাহি বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ মেরে। এতে আগুনে পুড়ে ৮ জন নিহত হয়। এরআগে পুলিশ ও র‌্যাবের  উপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়েছিল। এসব নৃশংস ঘটনার পরও তাদের সাজা না হওয়ায় এবং জামায়াত-শিবির ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিকভাবে সহায়তা এবং ইসলামের ভুল ব্যাখা দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সহিংসতায় যোগ দিতে। এছাড়া মিঠাপুকুরে ৪৪টি মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। ঢাকাগামি একটি বাসে আগুন দিয়ে ৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারি ছিলেন মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর এনামুল হক। মামলার এক নম্বর আসামী শিবিরের শাহীন মিয়াসহ গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামীরা পুলিশী জিঞ্জাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানান মিঠাপুকুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির। এছাড়া দিনাজপুরের রানীর বন্দর, ঘোড়াঘাট ও কাহারোলে সহিংসতা হয়েছে। এসব এলাকায় পেট্রোল বোমায় নিহত হয়েছে ৪ জন।

এদিকে, হরতাল অবরোধে রংপুর মহানগর ও জেলা বিএনপি পুলিশের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল মিটিং ফটোসেশন করে। আর শিরিন ভরসা গ্রুপের পক্ষে জেলা যুবদলের সভাপতি রইচ আহমেদ গ্র“প পায়রা চত্বরে কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে সভা সমাবেশ করে আসছিল। এরপর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা, গাড়িতে আগুন, ভাংচুর, বোমা হামলাসহ নাশকতার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। এরপর পুলিশ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের ভয়ে দুগ্র“পের কাউকেই আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তারা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছে। প্রতি রাতেই নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে গ্রেফতারের জন্য। এছাড়া নিজেদের মধ্যে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে কেউ সাহস করে মাঠে আসছে না। কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি রংপুরে দুভাগে বিভক্ত। প্রায় ৮ মাস আগে ঢাকা থেকে রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। নতুন জেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয় এমদাদুল হক ভরসা ও মহানগর সভাপতি করা হয় মোজাফ্ফর হোসেনকে। এরপর থেকেই কমিটি বাতিলের দাবিতে কাংখিত পদবঞ্চিত শিরিন ভরসা ও রইস আহমেদ গ্র“প কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এনিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এখনও দুপক্ষ একসাথে কোন অনুষ্ঠান করছে না। কেউ কারো মুখদেখাদেখি পর্যন্ত নেই। পদবঞ্চিতরা আন্দোলনে মাঝে মাঝে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। আর কমিটির লোকজন অবরোধ হরতালে মাঠে থাকে না। তারা দলীয় কার্যালয়ে থেকে পুলিশের সাথে সমঝোতা করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ এবং মিছিল করে ফটো সেশনের জন্য। এমন অভিযোগ কর্মীদের। এ কারণে আন্দোলন তেমন সফল হয় না। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে কোন নেতাকর্মী গ্রেফতার হলেও তাদের কোন খোজ খবর নেওয়া হয় না দল থেকে। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে দলটির সাধারন নেতাকর্মীরা। বিএনপিকর্মী লতিফ মিয়া ও তাইজুল ইসলাম জানান, রংপুরে বিএনপির কোন কর্মকান্ড নেই বললেই চলে। অবরোধ আর হরতালে তাদের দেখা যায় না রাজপথে। আবদুর রাজ্জাক নামের এক কর্মী বলেন, দলের কোন নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে নেতারা সহায়তা এমনকি দেখতে পর্যন্ত যান না জেলখানায়। তারা বলেন, দলের মধ্যে যদি গ্র“পিং দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে আন্দোলন ফলপ্রসু হবে না। রংপুর র‌্যাব-১৩  নাশকতার অভিযোগে রংপুরের কলেজপাড়া থেকে দুটি পেট্রোল বোমাসহ ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির তিনকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। র‌্যাব সুত্রে জানা গেছে, নাশকতার জন্য দুটি পেট্রোল বোমা নিয়ে যানবাহনে হামলার অপেক্ষা করছিল তিনজন।

এব্যাপারে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন জানান, অবরোধ হরতালে আমাদের শান্তিপুর্ন আন্দোলন চলছে। এসব দিনগুলোতে আমরা রাজপথে থাকি। তিনি বলেন আমরা সহিংসতা জ্বালাও পোড়াও এর রাজনীতিতে বিশ্বাসি নই। আমরা শান্তিপুর্ন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি জনগনকে সাথে নিয়ে।

পদবঞ্চিত জেলা যুবদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সাধারন সম্পাদক রইস আহমেদ জানান, মামলা ও গ্রেফতারের কারণে নেতাকর্মীরা বের হতে পারছে না।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, হরতাল অবরোধের নামে জামায়াত-শিবির বিএনপি পেট্রোল বোমা দিয়ে সাধারন মানুষকে হত্যা করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধি গড়ে তোলার জন্য আমরা সভা সমাবেশ করে যাচ্ছি। যাতে তারা আর মাথা চারা দিয়ে উঠতে না পারে।

ডিআইজি হুমায়ুন কবির জানান, মহাসড়কসহ ঝুঁকিপুর্ন এলাকাগুলোতে যাতে সন্ত্রাসীরা কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য আনসান, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ক্যাম্প করে টহল দিচ্ছে। তিনি বলেন, নাশকতা আর সহিংসতার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তাদের তালিকা করে গ্রেফতার চলছে। কাউকেই ছাড়া দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনার সাথে জড়িত জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top