সকল মেনু

শিক্ষার্থীদের আপনজন অধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) নুরন্ নবী

shah bulbul সুমি আকতার,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: অধ্যক্ষ নুরন্ নবীর জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সাইছা গ্রামে। পিতা মরহুম আলি হায়দার মাস্টার একজন প্রখ্যাত শিক্ষক ছিলেন এবং মা মরহুম হাজেরা বেগম ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী।  নয় ভাই বোনের মধ্যে নুরন্ নবী ছিলেন সবার বড়। জীবনের টানে মাত্র চার বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন ছেলেটি। চলে আসেন নোয়াখালী থেকে বহুদূর বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে। শিক্ষায় দেশ জয়ী মানুষটির পাঠশালা জীবনের শুরু স্বপ্নীল স্বন্দ্বীপ থেকে। নুরন্রে বয়স যখন ৬ বৎসর তখন বাবা আলী হায়দার প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে আসেন রামগতির চর জমিদারহাটে।  যথারীতি শিশু নুরন্ বাবার সাথে পাড়ি জমান এবং ভর্তি হন রামগতির চর জমিদারহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  অত্র বিদ্যালয় থেকেই শিশু নুরন্ বৃত্তিসহ পঞ্চম শ্রেণি পাস দেন। আবারও বাবার বদলি। এবার নিজের সাইচা গ্রাম। এখানে এসে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন । বেশি দিন এখানেও পড়া হলো না। এবার নিজ গ্রাম থেকে নয় মাইল দূরে লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি এবং এখান থেকেই এসএসসি পাস। এভাবেই সন্দ্বীপ, রামগতি আর চরমনপুরা হয়ে কাটে শৈশব আর স্কুল জীবনের বর্ণিল কাল। এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে। এরপর ১৯৬৬ সাল। চারদিকে ৬দফা আন্দোলনের তোলপাড়। বেশ ক’জন ছাত্রের সাথে টগবগে যুবক নুরন্কেও গ্রেফতার করে পুলিশ।  কপালে জুটে যায় ২৮দিনের জেলের ভাত। তবুও সব ঝড় উপড়ে ফেলে সামনের রাস্তায় হেঁটে চলা। রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হলেও পড়া হলো না।  বিএসসি পাস করার পরে  ইন্টারউইং স্কলারশীপ এর আওতায় পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং পরিসংখ্যানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে যোগদান করেন। ইতোমধ্যে এভাবেই শুরু হয়ে গেছে নোয়াখালীর সাইচা গ্রামের নুরন্ নবী নামের একটি ছেলের কর্নেল নুরন্ নবী হওয়া গল্পের প্রথম ভাগ। ৯৫% পাকিস্তানি ক্যাডেটের মিলিটারি একাডেমিতে প্রথম হলেন নুরন্ নবী নামে বাংলার এক অদম্য সন্তান। কর্মজীবনের শুরু পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে কর্নেল নুরন্ নবীর কর্মজীবন সুদীর্ঘ ৩৩ বৎসরের। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে  এবং ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  নুরন্ নবী  ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  সেনা সদরে স্টাফ অফিসার ১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঐ সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ক্যান্টনমেন্টের  স্কুল ও কলেজের সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৯০ সাল। শুরু হলো কর্নেল নুরন্ নবীর কর্মজীবনের স্বপ্নবিধুর সোনালী অধ্যায়। এবছর মার্চ মাসে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। একেবারেই জীর্নশীর্ণ অবস্থা অথচ গড়তে হবে দেশসেরা একটি ক্যাডেট কলেজ। চেয়ার টেবিল বলতে কিছুই নেই। পাঁচখান ইট সংগ্রহ করে জীর্ন ভবনের বারান্দায় বসে পার হলো যুদ্ধের প্রথম দিন। এরপর ক্যান্টনমেন্টের নিজ বাসা থেকে চেয়ার টেবিল এনে অফিসের কাজ শুরু। কর্নেল নুরন্ নবীর নের্তৃত্বে আজকের দেশ সেরা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ তার স্বর্ন সোপানে যাত্রা শুরু করলেও ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে নিভূত এক অভিমান বুকে চাপা দিয়ে চাকরিতে ইস্তেফা দেন। কক্ষণই হেরে যাননি তিনি। নিজেই লিখতে বসেন সংগ্রামী জীবনের আরেক গল্প।  আবার অজান্তেই হয়ে উঠেন গল্পের নায়ক। যার প্রথম দৃশ্য ছিল আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দুর্বার সিদ্ধান্ত। এবং যার নাম আজকের দেশখ্যাত মাইলস্টোন কলেজ। এই তো অধ্যক্ষ কর্নেল নুরন্ নবী। আমাদের সবার স্বজন।  সাইচা গ্রামের সেই প্রিয় মুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top