সকল মেনু

সৌন্দর্য বাড়তে পারে নখের সুন্দর গড়নে

01লাইফ স্টাইল ডেস্ক : রূপচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাত ও পায়ের যত্ন। এই অঙ্গগুলোর সৌন্দর্য নির্ভর করে সুন্দর গড়নের নখের ওপর। তাই এর পরিচর্যা খুবই জরুরি। একটু সময় করে এর যত্ন নিলে নিজেকে উপস্থাপন করা যায় আরও সুন্দর করে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিউটি পার্লর ‘পারসোনা’র কর্ণধার রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। তিনি বলেন, “নখ হলো এক ধরনের শক্ত কোষের সমষ্টি। নখের শক্ত বা নরমভাব নির্ভর করে নিজস্ব দৈহিক প্রকৃতির ওপর। তবে খাবারের সঙ্গে পরিমাণ মতো প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়োডিন ও ভিটামিন ‘বি’ খেলে নখ সতেজ ও সুন্দর থাকে।

নখের সুন্দর গড়নের জন্য সপ্তাহে অন্তত এক বার ম্যানিকিউর (হাতের নখের যত্ন) করা অবশ্যই দরকার। এছাড়া সপ্তাহে একবার ৩ চামচ অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে হাতের চেটো এবং হাতের ও পায়ের আঙ্গুলগুলোতে ভালো করে মেখে নিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পানিতে ধুয়ে নিবেন। এতে হাতের চেটোর খসখসে ভাব থাকবে না এবং নখ অতিরিক্ত চকচকে ও শক্ত হয়ে উঠবে।
যাদের নখ ভঙ্গুর তারা প্রতিদিন ২ চামচ খাবার জেলটিন এক কাপ ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে মাস খানেক খেলে যথেষ্ট উপকার পাবেন। তবে এ ধরনের উপায় স্থায়ী নাও হতে পারে। প্রতিদিন লোশন, অলিভ অয়েল, ক্রিম বা কিউটিকল সফট নামের যে কোন একটি উপাদান সামান্য পরিমাণে নখে লাগিয়ে তুলা দিয়ে নখের গোঁড়ায় সমান করে দিবেন। এর ফলে নখ অনেক দিন ভালো থাকবে। সুন্দর করে নখ কাটার জন্য কাঁচি বা ব্লেড ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এতে নখ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন। এতে নখের আকার বা গড়ন কখনো সুন্দর থাকে না। নখ কাটার জন্য ধারালো নেইল কাটার ব্যবহার করাই উত্তম।

একটু চেষ্টা করলে ঘরে বসেই নখের যত্ন নেয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে যা যা করতে হবে তা নিম্নে উপস্থাপন করা হল:
যা যা প্রয়োজনঃ এক গামলা গরম পানি, ফুট ওয়াশ অথবা যেকোন একটি শ্যাম্পু অথবা ফোমিং শাওয়ার জেল, লবণ অথবা ইপ্সাম লবণ, খাবারের সোডা, পিউমিস স্টোন অথবা মাটির ঝামা, ফুট স্ক্রাব, ফুট ক্রিম (ইচ্ছে হলে), কিউটিকল অয়েল/ক্রিম অথবা ভ্যাসেলিন, কিউটিকল পুশিং স্টিক, নেইল কাটার, নেইল ফাইলার, তুলা, ফুট ব্রাশ, নেইল ব্রাশ, এসেনসিয়াল অয়েল অথবা গোলাপ জল, কয়েকটি নুড়ি-পাথর, শুষ্ক ও নরম তোয়ালে, লেবুর রস, ডেটল অথবা যেকোন অ্যান্টিসেপ্টিকউ।
স্পা পেডিকিওর পদ্ধতির
02১ম ধাপঃ পেডিকিওর সরঞ্জামাদি পরিষ্কার করুন, যেকোন ধরণের রূপচর্চায়-ই পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করাটা প্রথম ধাপ। সাবান পানিতে আপনার পেডিকিওর ব্রাশ সেটটি ধুয়ে নিন।একটু তুলোতে খানিকটা অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে নেইল কাটার, নেইল সিজর, কিউটিকল পুশার স্টিক ইত্যাদি পরিষ্কার করুন
২য় ধাপঃ পুরনো নেইল পলিশ তুলে ফেলুন।নেইল পলিশ রিমুভার দিয়ে পুরনো নেইল পলিশ তুলে নিন। অনেক সময় আগের লাগানো নেইল পলিশ উঠতে চায়না। এক্ষেত্রে তুলোতে রিমুভার লাগিয়ে তা নখের উপর কয়েক সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন, নেইল পলিশ সহজে উঠে আসবে।
৩য় ধাপঃ নখ কাটুন ও পছন্দমত আকৃতি দিন।একটি গামলায় উষ্ণ গরম পানি নিন। পুরো পা না ডুবিয়ে শুধু পায়ের নখগুলোকে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন সেখানে। এতে করে আপনার নখগুলো নরম হবে, যা আকৃতি দিতে সাহায্য করবে। এরপর একটি তোয়ালে দিয়ে পা টা মুছে নিন।
ছবিতে এবার দেখে নিন সঠিক উপায়ে পায়ের নখ কাটার নিয়ম।

সঠিক উপায়ে নেইল কাটার দিয়ে পায়ের নখগুলো কেটে নিন। নখের কোন বাড়তি অংশ থেকে থাকলে তা নেইল সিজর বা নেইল নিপার দিয়ে কেটে নিতে পারেন। আর মরা চামড়া থাকলে তাও তুলে নিন সিজর দিয়েই। চিত্রে পদ্ধতিটি দেখে নিন।

এরপর নখের ধার কমানোর জন্য ফাইলার দিয়ে নখটাকে সমান করে নিন। ফাইলারটিকে নখের উপরে সামনে-পেছনে নিয়ে ফাইল করুন। নখের কোণাগুলোকে ফাইল করতে ভুলবেন না যেন !

৪র্থ ধাপঃ কিউটিকল অপসারণ করুন
চিত্রের মত একটি কিউটিকল পুষার নিন।

এবার কিউটিকল অয়েল/ক্রিম/ ভ্যাসলিন পুরু করে নিয়ে নখে লাগান। এরপর কিউটিকল পুশার স্টিক দিয়ে নখের অতিরিক্ত কিউটিকলগুলো তুলে ফেলুন। সাবধান, আপনি শুধু বাড়তি কিউটিকলগুলোই কিন্তু সরাবেন ! আর বাড়তি কিউটিকল না থাকলে চিত্রের মত শুধু পুশ করবেন, টেনে তুলে ফেলবেন না যেন।

৫ম ধাপঃ স্পা স্টাইলে পা ভেজান
03
পা ভেজানোর প্রস্তুতি:কুসুম কুসুম গরম পানি নিন একটি গামলায়। ২ টেবিল চামচ ইপ্সাম অথবা সাধারণ খাবার লবণ দিন পানিতে। ২/৩ ফোটা এসেনসিয়াল অয়েল ঢালুন পানিতে। ল্যাভেন্ডার তেল হলে খুব ভালো হয়। বিকল্প হিসেবে ১ টেবিল চামচ গোলাপ জলও দেয়া যায়। লেবুর রস দিন ৩/৪ টেবিল চামচ। এরপর ফুট ওয়াশ মেশান। ফুট ওয়াশ না থাকলে বেবি শ্যাম্পু অথবা ফোমিং শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন। এবার পুরোটা মিশ্রণকে ভালো করে তৈরি করুন।
উষ্ণ নুড়ি পাথর
পেডিকিওর শুরু করার আগে কিছু নুড়ি-পাথর হালকা গরম পানিতে রেখে দিন। এরপর সেগুলোকে আগে থেকে প্রস্তুতকৃত পেডিকিওর মিশ্রণে রাখুন।
এখন আপনি স্পা পেডিকিওরের জন্য তৈরি ! ২০ থেকে ২৫ মিনিট পা গুলোকে মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখুন। এসময় আপনার প্রিয় কোন গান ছেড়ে দিয়ে রিল্যাক্স মুডে থাকতে পারেন। ২০/২৫ মিনিট পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে পা গুলোকে মুছে ফেলুন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ এবার পায়ের মড়া চামড়া তুলতে স্ক্রাবিং করুন। বাজারে অনেক ধরণের স্ক্রাবার পাওয়া যায়। মিনা হার্বাল খুব ভালো একটি স্ক্রাবার। এছাড়া ঘরেও তৈরি করে নিতে পারেন চালের গুঁড়া, চিনি, লেবুর রস ও জলপাইয়ের তেল দিয়ে।

৭ম ধাপঃ পায়ের পাতা নরম ও মসৃণ করার জন্য লাগবে পিউমিস স্টোন/মাটির ঝামা, ফুট ব্রাশ ও নেইল ব্রাশ। ছবিতে দেখানো পেডিকিওর ব্রাশও আপনি ব্যবহার করতে পারেনঃ

04এ ধরণের ব্রাশে আপনি একইসাথে পিউমিস স্টোন, ব্রাশ, হিল স্ক্রাবার ও হিল স্মুদার – সবই এক সাথে পাবেন। প্রথমে, পিউমিস স্টোন দিয়ে আপনার পায়ের পাতা ভাল করে ঘষে নিন, যাতে মরা চামড়াগুলো উঠে যায়।
পিউমিস স্টোনটাকে সামনে-পেছনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পায়ের পাতায় ঘষুন, পায়ের পাতার পাশে দিয়েও ঘষুন।
এরপর হিল স্ক্রাবার ও স্মুদার ব্যবহার করতে পারেন। তবে পিউমিস স্টোন ব্যবহারের পর পায়ের পাতা যথেষ্ট নরম ও মসৃণ মনে হলে এগুলো ব্যবহার করার দরকার নেই।
৮ম ধাপঃ পায়ের পাতা স্ক্রাবিং করার পর ধোয়ার প্রয়োজন হলে ধুয়ে নিতে পারেন। একটি ফুট ব্রাশ ও বেশি ফ্যানাযুক্ত শাওয়ার জেল দিয়ে পা ধুয়ে নিন। নেইল ব্রাশ অথবা স্টিক দিয়ে নখের ময়লাগুলোকেও পরিষ্কার করে ফেলুন। ছবিতে দেখুনঃ

কুসুম কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিন।
৯ম ধাপঃ ফুট ক্রিম পায়ের পাতায় ও বডি লোশান পায়ে লাগিয়ে নিন। ন্যাচার’স সিক্রেটের ফুট ক্রিম ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ঘরে আমন্ড ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিজেও ময়েশ্চারাইজার তৈরি করে নিতে পারেন।
১০ম ধাপঃ নখগুলোকেও রাঙিয়ে নিন
আঙ্গুলে মাঝখানে ফোমের টুকরো অথবা তুলোর বল দিয়ে আঙ্গুলগুলোকে আলাদা করুন। এবার পছন্দের রঙে নখগুলোকে সাজিয়ে তুলুন। স্পা পেডিকিওর শেষ !
এই হল বাড়িতে বসেই স্পা পেডিকিওর করার নিয়মাবলী। এখান থেকে নিজের সুবিধামত কয়েকটি ধাপ বাদও দিতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top