সকল মেনু

পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মা ও ভাইয়ের মৃত্যু, দগ্ধ শরিরের যন্ত্রনায় করুন আর্তনাদ তানজিলার

imagesইকবাল হোসেন, রংপুর : মা তুমি কোথায়, আমি তোমার কাছে যাব, তুমি আমাতে নিয়ে যাও মা নিয়ে যাও। আমার সারা শরীর জ্বলছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ওরা আমাকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছে না মা। এভাবে চিৎকার করছিল পেট্রোল বোমায় দগ্ধ তানজিলা বেগম(১৩)। চিকিৎসকরা তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। তাকে জানতে দেওয়া হয়নি তার ভাই ও মা আর বেচে নেই। তানজিলার মুখমন্ডলসহ শরীরের ১০ ভাগ পুড়ে গেছে। মেয়ের পাশের বেডে রয়েছেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ তার বাবা তারা মিয়া(৪২)। তারা মিয়া জানান, তিনি ঢাকায় একটি গার্মেন্টস-এ কাজ করেন। আর তার স্ত্রী কাজ করেন বাসা বাড়িতে। বড় ছেলে সুলতান ও বড় মেয়ে তাপসি বেগমও ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করে। সবার আয়ে সংসার চলে। একমাস আগে স্ত্রী, ছেলে মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্দিপুর এলাকা তাদের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসেই আটকা পড়েন। হরতাল আর অবরোধের কারণে ঢাকায় ফিরতে পারছিলেন না। এদিকে জমানো টাকাও ফুরিয়ে যায়। মানুষের কাছে ২ হাজার টাকা ধার করে খেয়েছেন। এরপর আরো ১ হাজার টাকা ধার করে জীবনের ঝুকি নিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নীপু পরিবহনের বাসে রওয়ানা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। এরইমধ্যে স্ত্রী সোনাভান ও সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়ে বাসে। আমারও ঘুম ঘুম লাগছিল। চোখ বন্ধ হতেই বাসে ঢিল মারার আওয়াজ হলো। এরপর মুহুতের মধ্যেই পুরো বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমি জানালা ভেঙ্গে সন্তানদের বাইরে নামিয়ে দেই। এরপর স্ত্রীকে নামাই। কিন্তু ততোক্ষনে স্ত্রী ও ছোট ছেলে সুজনের (৯) শরীর পুড়ে যায়। অন্যান্যদের সাথে আমাদেরও নিয়ে আসা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভর্তি করা হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। এরপর আমাকে ও ছোট মেয়েকে আলাদা ওযার্ডে রাখা হয়। স্ত্রীকে রাখা হয়েছে অন্য ওয়ার্ডে । এরপর স্ত্রী ও সন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। এসব বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা মিয়া। তিনি বলেন,  এখন আর আমার বেচে খেকে কী লাভ ।্ আমি আর বাচতে চাই না ! তিনি বলেন আমরা তো রাজনীতি করি না। আমরা কাজ করে খাই। একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না।  তাহলে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে এভাবে পুড়িয়ে মারা হলো কেন ? এভাবে মানুষ হত্যার রাজনীতি  যারা করেন তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি। তদাদেরও যেন এভাবে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারা হয়।
সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুরের মোতালেপ মিয়ার ন্ত্রীসহ ৩ ছেলে মেয়ের সংসার। ঢাকা শহরে রিক্সা চালায়। অবরোধের আগে বাড়িতে এসেছিলেন। জমানো  টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আশা ছিল ছেলে মেয়েদের লেখাগড়া শিখাবেন। পথি মধ্যে পেট্রোল বোমার তার সব আশা আকাংঙ্খা ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছে। একই উপজেলার শান্তারাম গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া । ঢাকার রিক্সা চালান। সংসারে স্ত্রীসহ ২ ছেলে রয়েছে। বোমায় দদ্ধ হয়ে সে এখন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। সুন্দরগঞ্জের কোচাগাড়ি এলাকার নজরুল ইসলামও ঢাকায় রিক্সা চালায়। এক জনের কাছ থেকে ৫০০ টাটা ধার নিয়ে ঢাকা যেতে ছিলেন।  বোমায় সেও মৃত্যু যন্ত্রনায়।
সাজু মিয়া এক মেয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে।  নাহিদা বেগমের স্বামী জাগাঙ্গীর ঢাকায় রিক্সা চালায়। স্ত্রী সন্তান নাহিদা ও লিমন এখন নির্বান। তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে যন্ত্রনা কাতর পিতাকে। রফিকুলও রিক্সা চালাতে ঢাকা যাচ্ছিল। গাইবান্ধার কামাগাতি এলাকার কায়ছার মানিকগঞ্জ যাচ্ছিল জমিতে কাজ করতে। ১৩ বছরের বিজয় চন্দ্র এক আত্মিয়ের সাথে ঢাকা যাচ্ছেল। সেও দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top