সকল মেনু

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশসহ ১৫ জন আহত : ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ইকবাল হোসেন, রংপুর : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা পাণ্টা হামলা ও সংঘর্ষে শিক্ষক, পুলিশ, শিক্ষার্থীসহ আন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই শিক্ষককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার  ও বুধবার রাতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মোতায়েন রয়েছে বাড়তি পুলিশ। দুর্বৃত্তদের হুমকিতে বাড়ি থেকে ভয়ে বের হতে পারছেন না সহকারি প্রক্টর। আর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন নীলদলের  সভাপতি শিক্ষক আপেল মাহমুদ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির গঠন করেছে।
পুলিশ ও আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সুত্রে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসন এবং সকল সমস্যা সমাধানের দাবিতে বুধবার বিকেল থেকে প্রক্টরের অনুমতি না নিয়ে ক্যাম্পাসে আমরণ অনশন শুরু করে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী। রাত ১১ টার দিকে সহকারি প্রক্টর অনশনকারিদের কাছে গিয়ে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাতে অনশন না করার জন্য বলেন। কিন্তু অনশনকারিরা তার কথা না শুনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রক্টরও চলে যান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে মুখোশপড়া ২০-২৫ জন যুবক লাঠিসোটা ছোড়া নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অনশনকারিদের উপর হামলা চালায়। তাদের চিৎকারে ডমমেটরি থেকে শিক্ষকরা ছুটে এলে তাদের সাথেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে রসায়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, ভুগোল বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজার রহমান, শিক্ষার্থী শাহজাহান আলী, ইমরান হোসেন, সুজন কুমার পাল, সাজু মিয়া, মনোয়ার হোসেন, আজিজ, আরিফুল, ইমরান, সাদ্দাম হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির এএসআই আইয়ুব আলীসহ ১৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, ভুগোল বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজার রহমান ও এএসআই আইয়ুব আলীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শাহজাহান আলী জানান কোন কারণ ছাড়াই সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় পাশে পুলিশ দাড়িয়ে থাকলেও তারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
এ ঘটনায় খবর পেয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের প্রক্টর ড. নাজমুল হক অসুস্থ থাকায় সহকারি প্রক্টর মোঃ শাহ জামান দ্রুত ছুটে আসেন । তার উপরও দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় এবং লাঠি নিয়ে তাড়া করে। তিনি ক্যাম্পাসের ডমমেটরিতে গিয়ে আশ্রয় নেন। দুর্বৃত্তরা লাঠিসোটা নিয়ে ডমমেটরিতে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। তারা শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সভাপতি আপেল মাহমুদের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে সহকারি প্রক্টর শাহ জামান ও আপেল মাহমুদকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এবং দুর্বৃত্তদের গ্রেফতাদের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে। কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারি ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায় বলে মানববন্ধনরকারিরা অভিযোগ করেন। ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন  শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ। এরপর দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এব্যাপারে ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান জানান, উপাচার্যপন্থী লোকজনই তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা এখন নিজেদের বাঁচাতে মানববন্ধন করার চেষ্টা চালালে সাধারন শিক্ষার্থীরাই তাদের প্রতিহত করেছে। তিনি আরো জানান উপাচার্যকে অপসারণে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। এখন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হবে।
নীলদলের সভাপতি আপেল মাহমুদ জানান, আন্দোলনকারিরা দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আমাদের হত্যারও হুমকি দিয়েছে। এতে করে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। উপাচার্য বিরোধি আন্দোলনকারিরা নিজেরাই নাটক সাজিয়ে তার দায় আ্মাদের উপর চাপাচ্ছে। সাধারন শিক্ষার্থীরা তা কখনো মেনে নিবে না। হুমকির ঘটনায় আপেল মাহমুদ নিরাপত্তা চেয়ে কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর মোঃ শাহ জামান বলেন, রাতে ঘটনার খবর পেয়ে আমি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারাও আমার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসে এবং আমার উপর হামলা চালায়। আমি আত্মরক্ষার্থে ডমমেটরিতে গিয়ে আশ্রয় নেই। তারা সেখানে গিয়ে ভাংচুর চালায়। তারা আমাকে হত্যারও হুমকি দেয়। এরসাথে আন্দোলকারিরাও রয়েছেন। এ কারণে আমি ভয়ে বের হতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্য শফিকুল ইসলাম বলেন, অনুমতি না নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরন অনশন শুরু করেন। রাতে নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের যেতে বললেও তারা সেখান থেকে যাননি। পরে গভীর রাতে তাদের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুগ্র“পের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে শান্তিপুর্ন পরিবেশ কিরাজ করছে। তবে মোতায়েন রয়েছে বাড়তি পুলিশ ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার জন্য প্রক্টর ড. নাজমুল হককে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ইংরেজী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আলী রায়হান সরকার ও সহকারি প্রক্টর সিরাজ-উদ-দৌলা । তাদেরকে ৭ কর্মদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top