সকল মেনু

টানা অবরোধে সবজি নিয়ে বিপাকে রংপুরের কৃষক

Agriইকবাল হোসেন, রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর গ্রামের কৃষক আমিন মিয়া (৬৫) জানান, টানা অবরোধের কারণে তার অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে জমিতে। অবরোধের ফলে পাইকাররা না আসায় জমিতেই পেকে গেছে বেগুন, ফুলকপি, করল¬া ও শসা। তিনি বলেন, এভাবে অবরোধ থাকলে আমরা মরে যাব। গত বছর আলু আবাদ করে লোকসান খেয়েছি। সে লোকসান এবার পুষিয়ে নিতে আড়াই একর জমিতে বেগুন, ফুলকপি, শসা, করল¬াসহ শাকসবজি আবাদ করেছি। কিন্তু তাতেও যদি লোকসান খেতে হয় তাহলে না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। একই কথা বলেন, বলদিপুকুর এলাকার কৃষক মোবারক আলী, আবদুস ছালাম, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই।
গতকাল রোববার রংপুরের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা বাজার বদলিপুকুর, জায়গীরহাট এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বলদিপুকুর বাজারে কথা হয় ছালাম মিয়ার সাথে। তিনি ১০ বস্তা বেগুন নিয়ে এসেছেন বিক্রি করার জন্য। কিন্তু বিক্রির পাইকার পাচ্ছেন না। হরতালের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকাররা আসতে না পারায় সবজি বিক্রি হচ্ছে না। স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীরা ৪-৫ টাকা কেজির বেশি দাম করছেন না। তাও আবার সব নেবেন না। তিনি বলেন, দাম কম থাকার পরও জমি থেকে বেগুন তুলে আনতে হয়েছে। বেগুন খেতেও বেশি দিন রাখা যায় না। পেকে নষ্ট হয়ে যায়। দুএকদিন পরপরই তুলতে হচ্ছে। ছালাম মিয়া ১০ বস্তা মুলা নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য । কিন্তু বিক্রি করার কোন পাইকার না পেয়ে মাঠে ফেলে দিয়েছেন।
জায়গীরহাট বাজারে কথা হয় খালেক মুন্সির সাথে। তিনি ৭ মন শসা ও তিন মন করল¬া নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য। কেউ দামও করছে না। বড় বড় পাইকাররা না আসায় এসব বিক্রি হচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত পানির দামে এসব বিক্রি করে যেতে হবে। পীরগাছা ও পীরগঞ্জের কলা চাষি মোবারক মিয়া ও সামছুল আলম জানান, কলা পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিক্রির লোক পাচ্ছি না। পীরগাছার মোবারক এবার ২ বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছেন। দুই সপ্তাহমত চলা অবরোধের কারণে অনেক কলা পেকে নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেন, এসব রাখার জন্য কোন হিমাগারও নেই। তাই তারা সবজি পরিবহনের যানবাহন অবরোধ আর হরতালের আওতামুক্ত রাখার আহবান জানান।
মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০০ গ্রামে বারো মাসই চাষ হচ্ছে শাকসবজি। সবজি চাষ করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বি। উপজেলার যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু চোখে পড়ে সবুজের সমারহ। কি হয়না এখানে বাঁধা কপি, ফুলকপি, লাপা শাক, পালং শাক, লাউ, সীম, করল¬া, পটল, বেগুন, টমাটো, লাউ, কুমড়া, শষা, আলু, খিরাসহ সকল ধরনের শাকসবজি এখানে উৎপাদন হয়। ক্ষুদ্র থেকে মাঝারী এমনকি বর্গাচাষীরাও ঘরের আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষ করে এখন স্বাবলম্বি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এসব কিনে নিয়ে যায় ট্রাকে করে। প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক শাকসবজি দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। কিন্তু অবরোধের কারণে এখন তা বন্ধ রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের হিসেবে চলতি বছর শুধু মাত্র মিঠাপুকুর উপজেলায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা মুল্যের সবজি উৎপাদন হয়েছে। জেলায় চলতি বছর সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৫ হাজার  হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু মাত্র মিঠাপুকুর উপজেলায় সবজি চাষ করা হয়েছে তিন  হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। অল্প পুঁজিতে সবজি চাষ করে ভালো মুনাফা পাওয়া যায় বলে কৃষকরা সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জুলফিকার হায়দার জানান, টানা অবরোধের কারণে কৃষকদের উৎপাদিত সবজিতে লোকসান গুনতে হবে। কারণ সবজি হচ্ছে পচনশীল। আর এসব রাখার জন্য হিমাগারও নেই। তাই দুএকদিন পর পর জমি থেকে সবজি না তুললে তা জমিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। দাম না থাকলেও তাই বাধ্য হয়ে কৃষকদের জমি থেকে সবজি উত্তোলন করতে হয়। তিনি বলেন, অবরোধের ফলে কয়েক লাখ টাকার সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। আর এতে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top