সকল মেনু

‘স্কেল ও চিরুনি দিয়ে নির্যাতন করতেন’

 মেহেরপুর প্রতিনিধি : কারণে-অকারণে প্রায়ই শিশু বুশরার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় খাবার।  শিশু বুশার ওপর নির্যাতনের চলছে প্রায় চার বছর যাবত। নির্যাতনে বুশরা এতটাই আতঙ্কিত যে, অপরিচিত মানুষকে দেখলেই তার চোখ মুখে পড়ছে আতঙ্কের ছাপ। নির্যাতিতা বুশরার পুরো নাম বুশরা ইয়াসমিন। সে গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের দিনমজুর আবদুল হামিদের মেয়ে। দিনমজুর বাবার পাঁচ মেয়ের মধ্যে বুশরা চতুর্থ। সে বর্তমানে গাংনীর সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। নির্যাতনকারী সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের হিসাবরক্ষক মিম্মা সুলতানা। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়।

বুশরা বলে, ‘সামান্য ভাত কাপড় আর লেখাপড়া শিখতে গরিব বাবা-মা কাছ থেকে এসেছিলাম ম্যাডাম মিম্মার কাছে। ম্যাডাম কারণে-অকারণে বিভিন্ন সময়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সারাদিন বাড়ির কাজ করতে গিয়ে সামান্য অপরাধ হলেই ম্যাডাম আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। স্কেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে মারধর করেন। এ ছাড়া তার হাতের বড় বড় নখ দিয়ে আমার দুই হাতের কবজি ও ওপরের অংশে খামছিয়ে থেতলে দেন। স্কেল ও চিরুনি দিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করে দেন।’

বুশরা আরো বলে, ‘শনিবার সকালের দিকে ম্যাডাম আমাকে পাড়া থেকে গরুর দুধ আনতে বলেন। দুধ আনতে দেরি হওয়ায় চিরুন দিয়ে আমার ডান হাতের ওপর ফুটো করে দেন তিনি। আমার চিৎকারে পাড়ার লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করেন। তারপর আমি না খেয়েই স্কুলে চলে আসি। টিফিনে বাড়ি গেলে ম্যাডাম আবারও আমার ওপর চালান নির্যাতন।’

বুশরার সহপাঠী ইসরাত জাহান বন্নী, জান্নাতুল নাইম, হাবিবা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন জানায়, ‘বুশরা প্রায়ই না খেয়ে স্কুলে আসে। আমাদের অন্যান্য সহপাঠীদের কাছে থাকা টিফিনের টাকা দিয়ে বুশরার খাবারের ব্যবস্থা করে থাকি।’

এদিকে ম্যাডাম মিম্মার প্রতিবেশীদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যক্তি জানান, ‘পান থেকে চুন খসলেই মেয়েটিকে মারধর করে থাকেন ম্যাডাম মিম্মা। শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হয় না তিনি। তিনি মাঝে মধ্যে ছোট ওই শিশুটিকে খাবার বঞ্চিত করে রাখেন।’

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বুশরাকে নির্যাতন না করতে মিম্মাকে বেশ কয়েকবার নিষেধ করেছেন। তার পরেও তিনি নির্যাতন বন্ধ করেননি।

এদিকে মিম্মা সুলতান জানান, ‘বুশরাকে আমি কাজের মেয়ে হিসেবে তার বাবা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। সে অনেক অপরাধ করে। তাই তাকে নির্যাতন নয়, শাসন করা হয়।’

মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, ‘আমি গাংনী থানার ওসি রিয়াজুল ইসলামকে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

গৃহকর্ত্রী মিম্মার শাস্তি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top