সকল মেনু

ভোলার মনপুরায় সাপের উপদ্রব; ২ জনের মৃত্যু

 ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় ইদানিং সময়ে সাপের উপদ্রব আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে সাপে কামড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। একদিনে ৮/১০ জনকেও কামড়াতে দেখা গেছে। সাপে কামড়ানো রোগীদেরকে হাসপাতালে না নিয়ে রোগীর স্বজনরা নিয়ে যাচ্ছেন ওঁঝা-সাপুড়েদের কাছে। তাই বর্তমানে ওঁঝা-সাপুড়েরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত ১১ দিনে ৫০ জনকে সাপে কামড়ানোর খবর জানা গেছে। এদের মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা উপকরন মনপুরা হাসপাতালে নেই বিধায় স্থানীয় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। স্থানীয় বিভিন্ন অভিজ্ঞ জনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গরমের শেষ সময় এবং শীতের শুরুতে সাপের উপদ্রব দেখা যায়। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর সাপের উপদ্রব আশংকাজনক বলে জানা গেছে। ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় হাজীর হাট ইউনিয়নের বাঁধের হাটের বাসিন্দা রহিমের বোন রেবু (২৫) কে সাপে কামড়ালে স্থানীয় ওঁঝা আলতাফ ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসলে তিনি রোগীর চিকিৎসা করেন। এছাড়া মীম (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রীকে কামড়ালে স্থানীয় মহিলা ওঁঝা বিনি তার চিকিৎসা করেন। বর্তমানে তারা ২ জনই সুস্থ্য আছেন। আগের দিন সন্ধ্যায় ৩ জনকে সাপে দংশন করে। এদের মধ্যে তানভীর হাসান চাঁদ (১৪) এবং আব্বাস (৮) নামের ২ জন ভালো হলেও সজিব (৯) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ১৭ অক্টোবর বেলা ২ টায় স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ আঃ রহিমের বড় মেয়ে ফাতেমা বেগম রিক্তা (১৭) নামের মাদ্রাসা ছাত্রীকে সাপে কামড়ালে ওঁজা-সাপুড়ের কাছে নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি। বিকেল ৫টার দিকে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার আগের দিন রাসেল ফরাজীর স্ত্রী জিন্নাত বেগম এবং দারোগার পাড় এলাকার একজনকে কামড়ালে ওঁঝার চিকিৎসায় ভালো হয়। এছাড়া ভূইয়ার হাটের সুমন (৮), সাকুচিয়ার আনন্দ বাজারের মফিজ (৩৩), দক্ষিণ চরফৈজুদ্দিনের হাজীর চরের আলমগীর (২৬) এবং ভূইয়ার হাটের আরফুজা খাতুন (১৮) নামের ৪ জনকে কামড়ালে স্থানীয় নুরে আলম নামের ওঁঝা তাদের চিকিৎসা করে ভালো করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার সাপের উপদ্রব বেশী হওয়ায় সাপে কামড়ানো রোগীরা চিকিৎসা নিতে ওঁঝা-সাপুড়েদের কাছেই ভীড় করছেন। সাকুচিয়ার বাংলাবাজারের বাসিন্দা এবং উপজেলার সবচেয়ে পুরনো ওঁঝা হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিরন বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেশী। গত ১১ দিনে ১০/১২ জন রোগী আমার কাছে এসেছে। তবে রোগীর স্বজনরা দেরী করে ফেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আলতাফ ডাক্তার বলেন, ইদানিং প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগী আসছে। গত কয়েক দিনে ১২ থেকে ১৫ জন রোগী এসেছে। আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো হয়েছে। তবে অন্য যায়গায় চিকিৎসা করে একটি শিশু শেষ মুহুর্তে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলো। পরে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সাকুচিয়ার আরেক ওঁঝা এনামুল হকের কাছে ১৩ জন, ভূইয়ার হাটের ওঁঝা মফিজের কাছে ৫ জন, নুরে আলমের কাছে ৫ জন, মহিলা ওঁঝা বিনি’র কাছে ৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইদানিং উপজেলাবাসীর কাছে সাপ একটি আতংকের নাম। সাপে কাড়ালে রোগীর স্বজনরা রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে না নিয়ে ওঁঝা-সাপুড়েদের কাছে নিয়ে যায়। সঠিক সময়ে সঠিক পন্থা অবলম্বন করে তাদের কাছে নিয়ে গেলে বেশীর ভাগ রোগীই ভালো হয়েছে বলে উদাহরন রয়েছে। তারপরেও মানুষ চায় একটা নিশ্চয়তা। মানুষ চায় ডাক্তারদের চিকিৎসায় তারা ভালো হউক। অথচ মনপুরা হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের কোন চিকিৎসা দিতে পারেনা। এজন্য সাধারন মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুনিল চন্দ্র দাস বলেন, সাপে কামড়ানো রোগী প্রাথমিভাবে আমাদের কাছে আসেনা। তাদের মত করে সব চেষ্টা করে মৃত অবস্থায় আমাদের কাছে নিয়ে আসে। তখন আমাদের করার আর কিছুই থাকেনা। এছাড়া তিনি আরো বলেন, সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন আগে আমাদের কাছে ছিলনা তবে এখন আছে। আমরা বর্তমানে প্রস্তুত সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করার জন্য। বর্তমানে ৪/৫ জন রোগীকে চিকিৎসা করার মতো ঔষধ মজুত আছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top