সকল মেনু

ঝিনাইদহে জিংকসমৃদ্ধ ধান, কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: নতুন উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ ধান পরীক্ষামূলকভাবে ঝিনাইদহে উৎপাদিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এ ধানের নাম দিয়েছেন ব্রি-৬২। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ ধানের আবাদ বাংলাদেশে এই প্রথম। ২০১৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে নতুন জাতের এ ধান চাষের অনুমতি দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড।
চলতি রোপা আমন মৌসুমে ঝিনাইদহের আবহাওয়ায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। একশ দিনের এ ধান চাষে কৃষকরা ফলন পেয়েছেন বিঘাপ্রতি ৩১ মণ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়ীয়া, ঘোড়শাল, কালা লক্ষ্মীপুর, আড়মুখ, কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া, তালিয়ান, দুলালমুন্দিয়া মাঠসহ আশেপাশের এলাকার আড়াইশ চাষী এবার পরীক্ষামূলকভাবে জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদ করেছে।

এ ধান আবাদে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে এগ্রিকালচারাল এডভাইজরি সোসাইটি (আস) ও হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ।

গবেষকদের দাবি, জিংকসমৃদ্ধ ধান মানুষের বিশেষ করে শিশুদের রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি মেধা ও শারীরিক বিকাশে বিশেষ ভুমিকা রাখবে। তাই পর্যায়ক্রমে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল অন্যান্য ধানেও জিংক সংযুক্তির মাধ্যমে সকল ধানকেই জিংকসমৃদ্ধ করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে এগ্রিকালচারাল এডভাইজরি সোসাইটির (আস) নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলার আড়াইশ কৃষককে বীজ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি জানান, জিংক সমৃদ্ধ ধানের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া  হচ্ছে।

এ জাত উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন জানান, মানবদেহে জিংকের অভাব পূরণ করতে এই ধানে জিংকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ধানে অন্যান্য ধানের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জিংক রয়েছে। এই ধানের ভাত খেলে মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটবে। ড. আলমগীর বলেন, সাধারণ ধানে ৯ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংক থাকলেও এ জাতের (জিংক সমৃদ্ধ) ধানে জিংক রয়েছে ২৪ মিলিগ্রাম।

এ ধানের উদ্ভাবনকারী আরেক বিজ্ঞানী হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাসার বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধান উৎপাদন করা হয়েছে। এটিই প্রথম উচ্চ ফলনশীল জিংকসমৃদ্ধ জাত।

এ বিষয়ে শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের নারিকেলবাড়ীয়া জেডএ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কৃষকদের নিয়ে এক মাঠ দিবসে এই ধানের চাষপদ্ধতি, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশল, গুণাগুণ এবং ফলন সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঘোড়শাল ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিল্টন, প্রাক্তন কৃষি কর্মকর্তা এবিএম ফজলুর রহমান, এগ্রিকালচারাল এডভাইজরি সোসাইটির (আস) নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও কৃষক মোহাম্মদ আলী। এতে এলাকার সহস্রাধিক কৃষাণ-কৃষাণী অংশ নেন।

ইউনিসেফের বরাত দিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জানানো হয়, দেশের ৫৭ ভাগ প্রসূতি ও কুমারী জিংকের ঘাটতিতে ভুগছেন। ৪৫ ভাগ শিশুর জিংকের অভাবে মেধা ও শারীরিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়। জিংকসমৃদ্ধ ধানের ভাত খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ তা পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া এ ধানে রয়েছে সর্বোচ্চ নয় ভাগ প্রোটিন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ব্রি-৬২ কোনো হাইব্রিড ধান নয়। দেশী ধানের সঙ্গে পরাগায়নের মাধ্যমে এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় এ বছরই প্রথম একশ’ একর জমিতে এই বিশেষ জাতের ধান চাষ হচ্ছে। এই ধান চাষে হেক্টর প্রতি প্রায় পাঁচ টন চাল উৎপাদিত হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

ধান চাষী মোহাম্মদ আলী, কুদ্দুস মোল্লা, শমসের আলী এবং ওমর আলী জানান, অন্যান্য ধানের মতোই জিংকসমৃদ্ধ ধানের চাষাবাদ খরচ একই। তবে উৎপাদন সময় কম লাগায় চাষিরা এ ধান আবাদ করে খুশি।

তাদের মতে, অন্য জাতের ধান উৎপাদনে ১২০ থেকে ১৬০ দিন লাগলেও জিংক সমৃদ্ধ ব্রি-৬২ জাতের ধান উৎপাদনে সময় লাগে ১০০ দিন। আর বিঘাপ্রতি ফলন ৩১ মণ। চাষিরা জিংকসমৃদ্ধ ধান আবাদ সম্পর্কে জেনে অনেকেই এ ধান আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top