পঞ্চগড় প্রতিনিধি : বাংলাদেশে নারীরা ভোটাধিকার অনেক আগেই পেয়েছেন। তবে বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত ভারতীয় বিভিন্ন ছিটমহলের নারীরা আজো ভোটাধিকার বঞ্চিত রয়েছেন। আশার কথা হলো সম্প্রতি ছিটমহলের নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন। পঞ্চগড়ে বোদা উপজেলার ভারতীয় ছিট মহল শালবাড়ি, কাজলদিঘী, বেহুলাডাঙ্গা ও নাটকটকায় বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের আদলে সোমবার পঞ্চম নাগরিক কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালে। এর আগের নির্বাচনগুলোতে ছিটমহলের নারীরা ভোট দিতে না পারলেও এবারে তারা ভোট দিতে পেরে বেজায় খুশি।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো. সিরাজুল ইসলাম ছাতা প্রতিক নিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুস সামাদ ডালিম হারিকেন প্রতিক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৫৫৬ ভোট। অপর প্রার্থী নুরুল ইসলাম বাবুল আনারস প্রতিক নিয়ে ভোট পান মাত্র ৯৫টি।
নির্বাচনে ৩টি ওয়ার্ডে নির্বাচিত সদস্যরা হলেন ১ নং ওয়ার্ডে গোলাম মোস্তফা, আতাউর রহমান ও তরিকুল ইসলাম। ২ নং ওয়ার্ডে মজিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম বিশারু ও রশিদুল ইসলাম এবং ৩ নং ওয়ার্ডে আহসান আলী, আবুল কালাম প্রামাণিক ও আবুল হোসেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তিনটি ওয়ার্ডে নয়জন সদস্যের বিপরীতে ২২ জন প্রার্থী ছিলেন। ছিটমহলটিতে লোক সংখ্যা দশ হাজার। ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৭৬ জন এবং এক হাজার ৮৮৭ জন নারী ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নয়হাজার একর জমি আর আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ছিটমহলে বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের মতো একজন চেয়ারম্যান ও তিনজন মেম্বার শালবাড়ি, কাজলদিঘী, বেহুলাডাঙ্গা, নাটকটকা (এসকেবিএন) নাগরিক কমিটি নামে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে ছিটমহল পরিচালনা করেন।
নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল মোস্তাহারুল হাসান প্রধান নয়ন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, স্কুল কলেজের শিক্ষক ও আনসার ভিডিপির সদস্যসহ ৫৫ জনের একটি দল ভোট পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন। তারা নিরাপত্তাসহ প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
ছয়মাস আগে থেকে ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। গত ১৮ আগস্ট ভোটার তালিকা প্রকাশ ও ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
এবারেই প্রথম এ ছিট মহলের নারীরা ভোটার হয়ে ভোট দিয়েছেন। এ নিয়ে নারী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা গেছে। বোদেশ্বরী ঢোলক পাড়া গ্রামের উম্মে কুলসুম (৫৫) বলেন, ‘ভোট দেওয়া কাকে বলে জানতাম না। এবার ভোট দিতে শিখলাম।’ কাজলদিঘী গ্রামের ফারজানা বলেন, ‘জীবনে প্রথম ভোট দিতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। নিজের ভোটে চেয়ারম্যান মেম্বার নির্বাচিত করতে পেরে নিজেকে দায়িত্বশীল মনে করছি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, সুশৃংখল এবং উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ছিটমহলবাসীরা এই নির্বাচনকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মনে করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।