সকল মেনু

চরমে বাকৃবিতে আবাসন সংকট

  বাকৃবি প্রতিনিধি : তীব্র আবাসন সংকটের কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের অনাবাসিক হিসেবে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে, ছাত্রদের আবাসিক হিসেবে ভর্তির সুযোগ বহাল আছে। এ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত নির্দেশিকায় এ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর এ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথম বর্ষের (লেভেল-১; সেমিস্টার-১) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে ছাত্রী হলে সিট না থাকায় তাদের অনাবাসিক হিসেবে ভর্তি হতে হবে। ভর্তি-সংক্রান্ত নির্দেশিকার ‘হল আবাসন’ নামে ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ছাত্রী হলে কোনো আসন খালি না থাকায় ২০১৫ সালে স্নাতক শ্রেণির ছাত্রীদের অনাবাসিক হিসেবে ভর্তি করা হবে। তারা হলে কোনো সিট দাবি করতে পারবেন না। তবে, খালি থাকা সাপেক্ষে মেধার ভিত্তিতে তাদের সিট দেওয়া যেতে পারে।’ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার অফিসসূত্রে জানা গেছে, বর্তমান শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৪ ভাগ ছাত্রী। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি হলের মধ্যে মাত্র তিনটি ছাত্রীদের। বেশ কয়েক বছর ধরেই ছাত্রীদের আবাসন সংকট চলছে। এ অবস্থায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর নতুন একটি ছাত্রী হলের ভিত্তি স্থাপন করা হলেও তার নির্মাণকাজে কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী বছরের জুলাই নাগাদ হলটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে যেখানে হলটি হওয়ার কথা সেখানে অবস্থিত কয়েকটি দালান এখনো ভাঙাই হয়নি। ফলে হলটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত।

এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতেই চরম আবাসন সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষিকন্যারা। সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক ছাত্রী হলেও, তাদের জন্য আবাসিক হল মাত্র ৩টি। বিপরীতে, ছাত্র হলের সংখ্যা ৯। ছাত্রীদের ৩টি হলে সিট রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৪০১টি; যার বিপরীতে প্রায় ২ হাজার ২৫০ জন ছাত্রী গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায়, আবাসন বৈষম্য নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, গত বছর বাকৃবিতে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ ছাত্রী। এতে মোট ৪২১ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এর বিপরীতে ৩টি ছাত্রী হলে সিট ফাঁকা ছিল মাত্র ৫০টি।

তবে, এত কিছুর পরও- অচিরেই ছাত্রীদের আবাসন সংকটের সমাধান হচ্ছে বলে দাবি করছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ফারুক আহম্মদ জানান, ২০০৪ সাল থেকে উৎসাহব্যাঞ্জক হারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা উর্ধ্বমূখী হচ্ছে। এ হার ২০০৪ সালে মোট শিক্ষার্থীর ২৫.৪৬, ২০০৬ সালে ৩২.২৬, ২০০৮ সালে ৩৭.৭৮, ২০১০ সালে ৪২.৮২ এবং ২০১২ সালে ৪৫.৬৫ ভাগ। আবাসন সংকটের কারণে গত বছরে ছাত্রী ভর্তির হার কমে ৪২.১ ভাগ হয়ছে। তবে হল সমস্যা, পরীক্ষা পদ্ধতিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ছাত্রী ভর্তির হার কমে আসছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ছাত্রী হল সূত্র জানায়, সিঙ্গেল সিটে ডাবলিং সিস্টেমে অবস্থান করছেন ছাত্রীরা। সেইসঙ্গে কমনরুম, টিভি ও নামাজঘরের ফাঁকা জায়গাতেও সিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নতুন হল নিমাণের ধীরগতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহীন ইসলাম খান বলেন, হলটির নির্মাণ পরিকল্পনা ও নকশার কাজ শেষ। এ মাসেই নির্মাণ শুরু হবে। তবে আগামী জুলাইয়ে কাজ শেষ হবে কি না, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করেন, আবাসন সমস্যা মোকাবিলার কোনো প্রস্তুতিই নেই প্রশাসনের। তা ছাড়া এবার আসন বাড়ানোয় আরও বেশি ছাত্রী ভর্তি হবেন। তাদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অভিভাবকেরা সন্তানদের আবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। অথচ প্রশাসন এখানে উল্টো, ছাত্রীদের ব্যাপারেই উদাসীন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মোমেন মিয়া বলেন, কিছু জটিলতার কারণে নতুন হল নির্মাণকাজ শুরু করা হয়নি। আর পুরোনো তিন হলে আসন না থাকায় নতুন ছাত্রীদের আবাসিক হিসেবে ভর্তি করা হবে না। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে সতেচন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top