সকল মেনু

ভেঙ্গে যাচ্ছে ভোলার মনপুরা ফিসারিজ:অরক্ষিত মৎস্য ঘের !

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় অবস্থিত পর্যটকদের জন্য সবচাইতে আকর্ষণীয় স্থান মনপুরা ফিসারিজের জন্য নির্মিত রক্ষা বাঁধটি অবশেষে ভাঙতে শুরু করেছে। বাঁধটি  ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ার এলে ঘেরের মধ্যে অহরহ পানি প্রবেশ করছে এবং ভাটির টানে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘেরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ঘের থেকে চলে গেছে। এছাড়া ঘেরের পাড়ে থাকা নানান প্রজাতির গাছ পর্যায়ক্রমে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মনপুরা একটি নয়নাভিরাম এবং দর্শনীয় স্থান। এখানকার প্রতিটি স্থানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পর্যটক’রা এখানে আসলে প্রেমে পড়ে যায় এখানকার প্রকৃতির চাদরে বিছানো রুপ দেখে। আর এখানকার বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে যে স্থানটি তা হলো সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত মনপুরা ফিসারিজ লিমিটেড। এই স্থানে আসলে স্বাভাবিক মনে জাগে ভালা লাগার অনুভূতি। পড়ন্ত বিকেলে যখন সূর্যি মামা বিদায়ের বার্তা দেয় ঠিক সেই মুহুর্তের দৃশ্য এখান থেকে অবলোকনের স্মৃতি সারা জীবনের সকল অনুভূতিগুলোর অন্যতম হয়ে সারাক্ষণ মনে দোলা দেয়। সূত্রে জানা যায়, মনপুরা উপজেলার হাজীর হাট ইউনিয়নের চরযতিন গ্রামে ১৯৯১ সালে স্থানীয় বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শামস উদ্দিন বাচ্চু চৌধূরী তার মনের চাহিদায় প্রায় ২শ’ ১০ একর জমির উপর মনপুরা ফিসারিজ লিমিটেড নামে একটি বিশাল আকৃতির মৎস্য ঘের স্থাপন করেন। সৌখিন মানুষ হিসেবে এটি তার মনের চাহিদা পুরনের জন্য স্থাপিত হলেও এটি বর্তমানে হাজারো মানুষের মনের চাহিদা পুরনের একটি অবলম্বন হয়ে ধরা দিয়েছে। এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এটি একবার প্রদক্ষিণ করতে প্রায় কয়েক ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। পরিকল্পিতভাবে স্থাপিত এই ঘেরের মধ্যেও রয়েছে প্রায় ২০/২৫ টি স্বতন্ত্র পুকুর। এছাড়া বেশ কয়েকটি লেক’তো রয়েছেই। পুকুর এবং লেকের মধ্যে প্রতি বছর হোয়াইট ফিস, বাগদা, গলদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, কোরাল, মাগুর, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, চাইনিজ ফুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করা হয়। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার মাছ এই ঘের থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। ঘেরের মধ্যে অবস্থিত পুকুর ও লেকের পাড়ে রয়েছে সাড়ি সাড়ি নারিকেল গাছ। পাশা-পাশি রয়েছে আপেল, কমলা, আঙুর, আম, কাঠাল, বাউকূলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরাজিতো রয়েছেই। একটি পুকুরের মধ্যে রয়েছে স্পীড বোট। পর্যটকেরা এসে এই স্পীড বোটে চড়ে তারা আনন্দে মেতে উঠে। ঘেরের পাশে অবস্থিত কেওড়া বনে রয়েছে হরিনের বিচরণ ক্ষেত্র। বিকেল বেলায় পর্যটকেরা হরিনের পাল দেখে আনন্দে উদ্দেলিত হয়। সব মিলিয়ে এই স্থানটি একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। কিন্তু উলে¬খ করার বিষয় হলো এমন একটি দর্শনীয় এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের উৎস স্থান আজ নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ঘেরটির উত্তর পাশে অবস্থিত ঘেরাও বাঁধটির প্রায় ১শ’ গজ অংশ মেঘনার ছোবলে  ভেঙ্গে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি যেকোন মুহুর্তে মেঘনার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে মনপুরা ফিসারিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলহাজ্ব শামস উদ্দিন বাচ্চু চৌধূরী বলেন, অনেক কষ্ট করে এই ঘেরটি স্থাপন করেছি। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে মানুষের মুখে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা ভাবতে আমার কি যে ভালো লাগে তা বোঝাতে পারবোনা। এটি  ভেঙ্গে গেলে আমার যেমন কষ্ট লাগবে তেমনি এটা হবে মনপুরার মানুষের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি। তাই এটাকে রক্ষার জন্য সকল মহলসহ সরকারের সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।যে স্থানটি একটি উপজেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর যে স্থান থেকে সরকার প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব পায় সে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি আজ নদী গর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে। রাক্ষুসে মেঘনার আগ্রাসী ছোবল থেকে এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিকে রক্ষার জন্য শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে মনে করছেন মনপুরার সচেতন মহল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top